ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন হবে : তারেক রহমান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন হবে। এই কঠিন পথ সফল করতে হলে বিএনপির নেতাকর্মীদের দুটি কাজ করতে হবে। জনগণের আস্থা ও ভরসা অর্জন করতে হবে। শহীদ জিয়ার সৈনিকদের এমন কিছু করা যাবে না যাতে জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে একজন আরেকজনের প্রতি নজর রাখবেন।

সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে নওগাঁ শহরের কনভেনশন সেন্টারে জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, আরেকটি হলো আপনার পিছনে কিন্তু এখন অনেক ঘুঘু ঘুরঘুর করছে। এই ঘুঘুদের হতে সাবধান থাকতে হবে। এই ঘুঘুরা শুধু নিজেদের স্বার্থ বোঝে। তারা আসবে তারা আপনাদের ব্যবহার করবে, তারা আপনাদের সুনাম নষ্ট করবে, দলের ক্ষতি করে আবার সুর সুর করে চলে যাবে। এই ঘুঘুরা যেন আসতে না পারে, যেন সুযোগ না পায়। এদেরকে দূরে রাখতে হবে।

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা বছরের পর বছর আদালতে ঘুরেছেন। ৬০ লাখ নেতাকর্মীদের নামে গায়েবী মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেক নির্যাতন অত্যাচার সহ্য করেছেন। তবুও বিএনপি থেকে পিছপা হননি। তাই ভালো কাজ করুন, শহীদ জিয়ার আদর্শ তুলে ধরুন এবং জনগণের আস্থা অর্জন করুন। আল্লাহ চাইলে সামনে আপনি দেশ পরিচালনা করবেন।

তারেক রহমান উপস্থিত কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে বলেন বিএনপি একটি বড় দল। একটি পরিবারে যেমন নিয়ম নীতি থাকে, ঠিক তেমনি বিএনপিতেও নিয়ম নীতি আছে তারই অংশ হিসেবে আজকের এই সম্মেলন। আর আপনারা ভোট দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নেতা নির্বাচন করবেন, পরবর্তী সাংগঠনিক মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব দিবেন। আপনারা ভেবেচিন্ত সেই সব মানুষগুলোকে দায়িত্ব দিন, যারা আগামী দিনে দলকে ভালোভাবে পরিচালনা করবেন, সুসংগঠিত করবে।

তিনি বলেন, আমরা রাজনীতি করি এই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। দেশের মানুষের জীবনযাত্রা একটু যদি ভালো হতে পারে সেই বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে।

এই দেশের স্বাধীনতা দেশের সার্বভৌমত্ব ও দেশের সম্পদ ঠিকভাবে রেখে মানুষের পক্ষে কিভাবে কাজ করা যায় সেটাই বিএনপি’র লক্ষ্য।

তারেক রহমান বলেন, আমার পরিচয় আমি একজন বিএনপির কর্মী। ঠিক আপনাদের পরিচয়ও আপনি বিএনপির কর্মী। আর সেই কারণে মানুষ একজন বিএনপি কর্মীর কাছে দেশ সম্পর্কে জানতে চায়। বিএনপির উপর আস্থা ও ভরসা আছে জন্যই তারা আপনার কাছে এসে জানতে চায়, সহযোগিতা চায়। কাজেই তাদের সেই আস্থা ও ভরসা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার।

তিনি বলেন, দেশের জনগণ প্রায় বিশ কোটি। এর অর্ধেক নারী। এখন এই অর্ধেক জনসংখ্যাকে পিছনে রেখে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো না। একটি জাতিকে যদি সামনে এগিয়ে নিতে চাই অন্তত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আর এক্ষেত্রে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এই অর্ধেক নারী সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাদের বিনামূল্যে শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন।

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এই সংস্কার কমিশন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।

অথচ দুই-আড়াই বছর আগে যখন স্বৈরাচার দেশের মানুষের টুঁটি চেপে ধরেছিল, ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, আজ যে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের মানুষ এদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করেছে, এই স্বৈরাচার যখন মানুষের অর্থ সম্পদ লুটপাট করেছে, সেই সময় বিএনপি বাংলাদেশের মানুষের সামনে ৩১ দফা ঘোষণা করেন রাষ্ট্র মেরামতের জন্য। যেখানে অন্তবর্তী সরকারের প্রায় সবগুলোই আছে। স্বৈরাচারের সময় দেখেছি রাষ্ট্রের সকল সেক্টরকে কিভাবে ধ্বংস করে দিতে হয়।

তারেক রহমান বলেন, আমরা কাউকে হেয় করতে চাই না। আমরা সকলকে নিয়ে কাজ করতে চাই। একটি সুন্দর রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। কিন্তু যারা গত ছয় মাস বা এক বছর ধরে সংস্কারের কথা বলছে, তাদের বহু আগে জিয়ার সৈনিকরা ৩১ দফা ঘোষণা করেন। আজকে অনেক দল বলছে এই সংস্কার নাহলে নির্বাচন করবো না ওই সংস্কার না হলে নির্বাচন করবো না। তারা বলতেই পারে। সকলেরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির দেশ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অভিজ্ঞতা আছে খাদ্য উৎপাদন কিভাবে দ্বিগুণ করতে হয়, নারী সমাজকে কিভাবে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হয়। অভিজ্ঞতা রয়েছে কিভাবে এদেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হয়।

এবং বিএনপির অভিজ্ঞতা রয়েছে কিভাবে রাষ্ট্র মেরামত করতে হয়। আমার ঘরই যদি না থাকে তাহলে আমি কোথায় আশ্রয় নেব। কাজেই বাংলাদেশ যদি ঠিক না থাকে এই কোটি কোটি মানুষ কোথায় যাবে। দেশের মানুষের প্রথম এবং শেষ আশ্রয়স্থল এই ৫৫ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ।

তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরে আমাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই ভাবছে একটি প্রতিপক্ষ তো আর মাঠে নেই, আগামী নির্বাচন কি আর কঠিন হবে। কিন্তু একটি অদৃশ্য শক্তি বিভিন্নভাবে কাজ করছে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন আগামী দিনে আমরা ইনশাআল্লাহ সফল হবো। যদি বিএনপি নামক পরিবারটির সকল সদস্য ঐক্যবদ্ধ থাকে।

সর্বশেষ উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, জনগণের আস্থা অর্জন করে জিতলেই হবে না। দেশকে ভালোভাবে পরিচালনা করতে হবে। আপনি যে ৩১ দফা দিয়েছেন সেটিকে যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে অবশ্যই শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার প্রত্যেকটি সৈনিককে আপন ভাই-বোনের মত ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

এরআগে দুপুরে নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম।

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম রেজুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, রাজশাহী বিভাগ বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন এবং বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও দ্বি- বার্ষিক সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক রেজাউল করিম বাদশাসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় সম্মেলন করতে না পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ ঘটা করে সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি। ১৫ বছর পর বিএনপির সম্মেলন ঘিরে পুরো শহর সেজেছে নেতৃত্বে আসা নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। এই সম্মেলন ঘিরে ১৭ বছর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরনে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পায় প্রাণচাঞ্চল্য।

প্রথম অধিবেশনের পর বিকেল সাড়ে ৫ টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলার ১৪টি ইউনিটের ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্ধারণ করার জন্য ভোট তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print