নওগাঁর বদলগাছীতে ২৬১জন উপকারভোগীর দুই বছরের জমানো সঞ্চয়ের প্রায় ১৪লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। অভিযোগ উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা দুলাল হোসেন ও তার স্ত্রী সুইটি বেগম গরীব, অসহায় ও দুস্থদের প্রতিমাসে জমানো ওই পরিমাণ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। আর দুস্থদের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে। তবে কেউ দায় নিতে রাজি না।
পরিষদ সূত্রে জানা যায়, পাহাড়পুর ইউনিয়নের গোয়ালভিটা গ্রামের সুজাউলের ছেলে দুলাল ও তার স্ত্রী সুইটি বেগম ২০১১ সালের দিকে একই ইউনিয়নে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই ইউনিয়নে মোট ২৬১জন ভিজিডির উপকারভোগী আছে। যেটা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) নতুন নাম ভলনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি)। ওই সকল দুস্থ উপকারভোগীরা প্রতিমাসে ২০০-২২০ টাকা করে জমা রাখতো। তাদের টাকা জমা নেওয়ার জন্য বেসরকারি এনআরবিসি ব্যাংক থেকে এজেন্ট ব্যাংকিং দেওয়া হয়। ফলে তারা নির্ধিদায় সরল মনে টাকা জমা দিতো উদ্যোক্তা স্বামী-স্ত্রীর কাছে। যদিও এর আগে ওই ইউনিয়নে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং ছিল। তৎকালীন ইউএনও’র অনুমতি সাপেক্ষে ওই ইউনিয়নে এনআরবিসি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংক দেওয়া হয়। আর এতেই বিশ্বস্থতায় পরিণত হয় তাদের কাছে। ফলে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ওই সকল হতদরিদ্ররা টাকা জমা দিলেও কেউ খোঁজ রাখেনি, করেনি কোনো তদারকি। নামমাত্র একটি সঞ্চয় বই দেখে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। আর এই সুযোগে পালিয়ে গেছেন প্রতারক উদ্যোক্তা। বিনিময়ে হাজার হাজার সঞ্চয়ের টাকা হারিয়েছে হতদরিদ্র উপকারভোগীরা।
সরেজমিনে পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায় ইউনিয়নের ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার (তথ্য সেবাকেন্দ্র) বন্ধ। স্থানীয়রাসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, উপকারভোগীদের জমাকৃত টাকা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাক্ষরিত শিডিউল মোতাবেক গত ২৬শে জানুয়ারি রবিবার থেকে ২৮শে জানুয়ারি মঙ্গলবার দিন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগেই গত ২৫শে জানুয়ারী শনিবার সকাল থেকেই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে উদ্যোক্তা দুলাল হোসেনের খোঁজ না পেলে গত ২৭শে জানুয়ারি সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন পাহাড়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর।
এদিকে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের কাছের মানুষ হওয়ায় দুলাল হোসেন ও স্ত্রী সুইটি বেগম বিরুদ্ধে কোনো তদারকি করেননি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইউনিয়নের ২৬১জন দুস্থ মহিলা গরীব, অসহায় ও দুস্থ উপকারভোগীর জমাকৃত টাকা তাদের স্ব স্ব নিজস্ব একাউন্টে জমা না করে আত্মসাত করেছে।
ইউনিয়ন সচিব কাজী শাহাব উদ্দীন বলেন, আগে এনজিও ও মহিলা বিষয়কের যৌথ স্বাক্ষরে একাউন্ট থাকতো, তখন এনজিও লোক এসে সরাসরি টাকা নিতো। যার কারণে তদারকির প্রয়োজন হতোনা। আমরা শুধু দেখি গ্রাহকরা সঞ্চয় দিয়ে চাল নিচ্ছে কিনা। এখন ব্যাংক যেহেতু এজেন্ট দিয়েছে ইউএনও স্যারের নির্দেশনায়। কাজেই সে ব্যাংকে কখন টাকা জমা করছে সেটা জানিনা।
এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মন্তব্য করতে রাজি হননি এনআরবিসি ব্যাংক বদলগাছী শাখার ম্যানেজার। যদিও তিনি পরে জানাতে চেয়ে আর জানাননি।
জানতে চাইলে পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর মুঠোফোনে বলেন, তাদের নিয়োগ হয়েছে আগের চেয়ারম্যানের আমলে। আমার কাছের লোক তারা না। তবে ভাতাভোগীর মনে হয় ৭থেকে ৮লাখ নিয়ে পালিয়ে গেছে। ২৬১ জনের সবাই তো প্রতিমাসে টাকা জমা দেয় নি। তারপরও প্রতিকারের আশায় একাধিক জায়গায় অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ বলেন, প্রায় সকল উদ্যোক্তা চেয়ারম্যানের পছন্দের লোক হয়ে থাকে। চেয়ারম্যানের আপন লোকছাড়া উদ্যোক্তা কমই আছে। এই কারণে ব্যাংকে টাকা জমার বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হয়নি। আমরা শুধু কার্ড দেখেছি। তারা টাকা জমা নিয়ে লিখে দেয়। ওটা দেখে চেয়ারম্যান মেম্বাররা চাল দেয়। প্রত্যেকের আলাদা একাউন্ট আছে। তথ্য নিলাম ২০৩-২০৪টা একাউন্ট হয়েছে। আমরা যখন টাকা বিতরণের জন্য চিঠি দিলাম ওই সময় যোগাযোগ সব ঠিক ছিল। কিন্তু ২৬তারিখে গিয়ে দেখা গেলো তারা নাই। এটার জন্য আমরাও দুঃখিত। তবে বিষয়টি সমাধানের জন্য ইউএনও’র সাথে আলোচনা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বদলগাছী থানা অফিসার ইনচার্জ শাহজাহান আলী বলেন, এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ হয়েছে। ওকে ধরার জন্য লোক পাঠায়ছিলাম। শুনলাম সে নাকি বাহিরে চলে গেছে।
উদ্যোক্তার অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি মুঠোফোনে বলেন, এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
