অক্টোবর ২, ২০২৩ ৮:১৩ এএম

দেশে প্রথম বিদেশি আখ থেকে গুড় ও লাল চিনি উৎপাদন করছেন বগুড়ার আহসানুল কবির

২০১৯ সালে ফিলিপাইন থেকে ব্ল্যাক সুগার কেইন জাতের ৭টি আখ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করেন কৃষি উদ্যোক্তা আহসানুল করিম ডালিম। তিনি বগুড়া সদরের লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের কাজী নুরুইল গ্রামের বাসিন্দা।

ডালিম ৬ শতক জমিতে এই বিশেষ জাতের আখ চাষ করে চারা তৈরি করেন। তরুণ এই উদ্যোক্তার ৮ বিঘা জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে কয়েক হাজার ব্ল্যাক সুগার কেইন।

যা থেকে দেশে প্রথমবারের মতো গুড় ও গুড়ের পাউডার তৈরি করছেন এই উদ্যোক্তা। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোন ধরনের কেমিক্যাল ছাড়াই তার তৈরি গুড় ও লাল চিনি সুস্বাদু হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে সব শ্রেণির মানুষের কাছে।

ইতিমধ্যে তার গুড় ও গুড়ের পাউডার বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় শুরু হয়েছে। বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্যাকেটজাত করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে এই কালো জাতের আখ চাষ ছড়িয়ে দিতে চান এই কৃষি উদ্যোক্তা।

জানা যায়, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক ছিলেন আহসানুল কবির ডালিম। সেই চাকরি ছেড়ে কৃষির প্রতি ঝুঁকে পড়েন তিনি।

নিজ গ্রামের বেশ কিছু তরুণদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘কর্ষণ’ নামের একটি কৃষিভিত্তিক সংগঠন। তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা নিজের জমিসহ অন্যের কিছু জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। শুরু হয় মাটিতে সোনা ফসল ফলানোর মিশন। একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনসহ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষির উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগী হন তিনি ও তার টিমের সদস্যরা।

আহসানুল কবির ডালিম জানান, প্রথমে তিনি ফিলিপাইন থেকে ১৬টি চারা সংগ্রহ করেন। যার মধ্যে ৯ টি চারা নষ্ট হয়ে গেলেও টিকে যায় ৭টি চারা। সেই চারা থেকে আরও চারা তৈরি করে চাষের কাজ শুরু করেন। ব্ল্যাক সুগার কেইন গাঢ় লালচে বা কালো খয়েরি জাতের আখ। যার মিষ্টতা ও স্বাদ অতুলনীয়।

তিনি জানান, ১০ থেকে ১১ মাসে পরিপূর্ণ আখ লম্বায় ১২ থেকে ১৫ ফুট হয়। প্রতি বিঘায় চাষকৃত আখ থেকে থেকে গুড় হবে ২ টন, যা থেকে ২-৪ লাখ টাকার গুড় ও গুড়ের পাউডার বা লাল চিনি পাওয়া যাবে। যা পরবর্তী বছরে দ্বিগুণ হবে। একই সাথে আখের চারাও বিক্রি করা যাবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জমি থেকে আখ তুলে এনে তা মাড়াই করে রস বানানো হচ্ছে, সেই রস পরিশোধন করে চুলায় দীর্ঘসময় জাল দেয়া হচ্ছে। এরপর রস ধীরে ধীরে গুড়ে পরিণত হয়। সেই জাল দেওয়া গুড় থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে পাউডার বা লাল চিনি উৎপাদন করা হচ্ছে।

এসব প্রক্রিয়া দেখতে আসা বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি এলাকার সজল শেখ জানান, এমন সুমিষ্ট আখের রস তিনি প্রথমবারের মতো খেয়েছেন, গুড়ের স্বাদ অসাধারণ। শহর থেকে আসা অরূপ, রাজ্জাক, আল আমিন জানান, কালো জাতের আখ থেকে তৈরি লাল চিনির স্বাদ এর আগে কখনো তারা পাননি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ এনামুল হক বলেন, ইতিপূর্বে কৃষি উদ্যোক্তা ডালিম ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষে সফল হয়েছেন। তার প্রশংসনীয় উদ্যোগ দেখে অন্যান্য কৃষকেরা এই চাষের ঝুঁকে পড়ছেন। কৃষি বিভাগ চাষিদের উৎসাহিত করছে, বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছে।

সরকারী আজিজুল হক কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রায়হান ইসলাম বলেন, চিনির বিকল্প হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে পাউডার গুড় তৈরি হলে নতুন করে বাজার সৃষ্টি হবে। কালো জাতের আখ উৎপাদনে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবে, এতে করে চিনির আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে যা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এনসিএন/বিআর

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সম্পর্কিত