ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও ক্যাম্পাসে ছাত্রদল- শিবিরের রাজনীতি ফেরাতে মরিয়া কুবি প্রশাসন!

Oplus_16777216
Oplus_16777216

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও সম্প্রতি প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অমান্য করে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এ আহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, বাগছাসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল। তার তত্ত্বাবধানে পরপর দুই বার রাজনৈতিক দলের সাথে মিটিং হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল ও বাগসাসের নেতাকর্মীরা। সভায় উপস্থিত হতে ছাত্রশিবিরকে দাওয়াত দিলেও তারা অংশগ্রহণ করেননি। জানা যায়, আগামীকালের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোও বক্তব্য দিবেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পূর্বে ক্যাম্পাসকে ‘রাজনীতি মুক্ত’ রাখার কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সরব অংশগ্রহণে প্রোগ্রাম আয়োজন করা নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা আরো বলছেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা যেত। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের আনয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক ধরনের অশনি সংকেত।

বুদ্ধিভিত্তিক সংগঠন পাটাতনের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, এই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে অস্ত্রবাজি, দখলদারি, ছাত্র নিপীড়ন, এমনকি যৌন হয়রানির মতো ঘটনাও ঘটেছে। সেই অভিশপ্ত ইতিহাস ফিরিয়ে আনার পাঁয়তারা চলছে এখন প্রশাসনের হাত ধরে। জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি স্পষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্বিমুখী নীতিতে চলছে। একদিকে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, অন্যদিকে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। এটা ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়। যদি প্রশাসন সত্যিই রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চায়, তাহলে তাদের নিজেদের স্ববিরোধী ভূমিকা ত্যাগ করে অবিলম্বে রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান প্রক্টর কেবল নামমাত্র পদে আছেন। দায়িত্ব পালনে তার নিষ্ক্রিয়তা হতাশাজনক। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় যে রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে শোডাউন দিলেও তিনি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। বরং বারবার নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। প্রক্টরের দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। তা যদি না পারেন, তবে তার নৈতিকভাবে পদত্যাগ করা উচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে ভর্তির সময় রাজনীতি করা যাবে না বলে মুছলেকা নিয়ে ভর্তি করা হয় এবং ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত ১০০তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম থেকে মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ/সহযোগী/ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন প্রকাশ্যে বা গোপনে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

এছাড়া, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ৪৩ (ঘ) ধারা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবে না। কেউ এই নীতিমালা ভঙ্গ করলে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।

তবে বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। সম্প্রতি ছাত্রদল ক্যাম্পাসে শোডাউন করেছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে গোপনে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠেছে, এবং বাগছাস প্রকাশ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রশাসনের অধীনে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামালকে কল দেওয়া হলে মিটিং এ আছেন বলে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print