জুলাই ২৭, ২০২৪ ১২:১৮ পিএম

পত্নীতলায় আদিবাসীদের ঘরের কাজ শেষ না করেই বরাদ্দের টাকা উঠালেন ইউএনও

নওগাঁর পত্নীতলা সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের ঘর নির্মাণকাজ শেষ না করেই বরাদ্দের টাকা উঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ডিসেম্বর (২০২৩ইং) বদলির পূর্বে তিনি ১৭টি ঘরের কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে এসব বরাদ্দকৃত টাকা তুলে নেন। ফলে ঘরগুলোর নির্মাণাধীনকাজ অসম্পূর্ণ ভাবে থেকেই গেছে। এতেকরে চরম দুর্ভোগে দিনযাপন করছে আদিবাসী পরিবার। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে তিনি বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা যায়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (আদিবাসী) জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ৬৪টি জেলায় যাদের জমি আছে কিন্তু গৃহ নির্মাণের সামর্থ্য নেই এমন দরিদ্রের জন্য আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করার কার্যক্রম শুরু করেন সরকার।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলাতে ২৫টি ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর (আদিবাসী) গৃহহীন পরিবারের জন্য বসতঘর বরাদ্দ আসে। ইতিপূর্বে আরও ১৫টি ঘর বরাদ্দ পান আদিবাসীরা। প্রতিটি বসতঘরের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। থাকবে চৌচালা টিনের ছাউনির দুটি ঘর। পাকা মেঝে, একটি কাঠের দরজা ও দুটি জানালা। ঘরের পাশে রান্নাঘর, বাথরুম, স্টোররুম এবং অপরপাশে একটি পাকা বারান্দা। ওই সময়ে ঘরটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ। এরপর তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গৃহহীন আদিবাসীদের মাঝে যাচাই বাছাই করে বন্টন করে। প্রথমে ১৫ টি ঘর নির্মাণ করে আদিবাসীদের হস্তান্তর করে। পরে আরও ৮টি নির্মাণ করেন। এরপর ১৭ টি ঘর নির্মাণ না করেই কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করেন। পরে ঘরের নির্মাণের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে বদলি হয়ে চলে যান বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলাতে। এ ঘটনার পর ওই ঘর গুলো উপজেলা প্রশাসন থেকে তদারকি শুরু করলে পরে আরও ১০টি ঘরের কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর আদমদিঘী থেকে একজন প্রতিনিধি দিয়ে আস্তে আস্তে কাজটি চলমান রাখেন। অবশিষ্ট ৭ টি ঘরের কাজ এখনো তিনি শুরু করেননি। যার ফলে ঘরগুলো নির্মাণ হতে সময় অতিবাহিত হচ্ছে। এতেকরে আদিবাসীরা তাদের বরাদ্দকৃত ঘর না পেয়ে খোলা আকাশে বা প্রতিবেশীদের বাড়ির উঠানে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।

বরাদ্দকৃত ঘরের মালিক সুজন ও ছিদু এককা জানান, ঘরের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমার এখনো পরিবার নিয়ে উঠতে পারিনি। খুব কষ্ট করে অন্যত্রে বসবাস করতে হচ্ছে। আর কাজের মানও ভালো না। মিস্ত্রিদের বললে শুনছেনা।

আদিবাসী নেতা যতিন জানান, ঘরগুলো না পেয়ে তারা খুব কষ্টে রয়েছে। মিস্ত্রিরা ঠিকমতো কাজ করছেনা। ঘরের কাজগুলো অসম্পূর্ণ রয়েছে। প্রশাসনের নিকট কাজটি দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার দাবী করছি।

পত্নীতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু শোয়েব খান সাঈদ বলেন, জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে চেকটি আসে। সেক্ষেত্রে চেকের মালিক তিনি নিজেই। ঘর নির্মাণকাজ সম্পন্ন না করে টাকা উত্তোলন করা যায়না। তিনি হয়তো ঘরের কাজ সম্পন্ন দেখিয়েছেন। এজন্য বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করতে পেরেছে।

উপজেলা হিসাবরক্ষক খালিদ হোসেন জানান, আমাদের অফিসে কোন বিল বকেয়া থাকেনা। প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমরা বিল পেমেন্ট (পরিশোধ) করে থাকি।

পত্নীতলা সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ বলেন- কাজ শেষ না করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগটি সত্য না। ঘরের সব কাজ শেষ হয়েছে।

উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার বলেন- ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। অর্থ্যাৎ ১০ টি ঘরের আংশিক কাজ চলমান রয়েছে। তবে কয়েকটি ঘরের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো: গোলাম মওলা বলেন, ওই সময়ে রুমানা আফরোজ দায়িত্বে ছিলো টাকা উঠিয়ে রাখতে পারে। তাছাড়া টাকা নিয়ে যাবে কোথায় তাকে কাজ করতে হবে। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print