বগুড়ায় ডিমের ৫/৬ জনের এক সিন্ডিকেট গেলো ২ মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ৩৮ টাকা হালির ডিম ৫২ টাকায় বিক্রি করে এই মুনাফা করেছে। ডিমগুলো তারা কাজী ফার্ম বগুড়ার সেলস ডিপো থেকে ক্রয় করেছে। তবে চাহিদার তুলনায় জেলায় খামারে বেশি ডিম উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও বগুড়ায় ডিমের বাজারে স্বস্তি ফিরছে না।
বগুড়ার খামারগুলোতে ডিম ব্যবসায়ীরা অর্থলগ্নি করেন। ফলে তারাও ঐ সব ব্যবসায়ীদের কাছে ১২ টাকা হালি ডিম বিক্রি করে এমন তথ্য দিলেন ডিমের পাইকারী ব্যবসায়ী মিলন রহমান।
বগুড়ায় উৎপাদিত ডিমও ৫২ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। ঐ ডিম ব্যবসায়ী জানান, কাজী ফার্মের ডিলার ২০ জন। মূলত ৫/৬ জন ডিমের ডিলার একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। পাইকারি ও খুচরা ডিম ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন তাদের কাছে কাজী ফার্মের সেলস সেন্টার থেকে যে দামে (৯.৬১ টাকা) ডিম ক্রয় করেছে, সেই ডিমের কেনা দামের রশিদ তারা দেখাতে পারবে না খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট।
বগুড়ার খামারগুলো থেকে যে সকল ব্যবসায়ী ডিম সংগ্রহ করেন তারা তাকিয়ে থাকেন কাজী ফার্মের ডিমের ডিলাদের উপর। তারাও প্রতি হালি ডিম কাজী ফার্মের ডিলাদের মত প্রতিহালি ৫২ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন।
বগুড়ার কাজী ফার্মের ডিপো থেকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লাখ ডিম সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে তারা প্রতিদিন একটি ডিম ৯ টাকা ৬১ পয়সা দরে তাদের ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন। সেই ডিম তারা খুচরা বাজারে ৫২ টাকা হালি (৪ টা) বিক্রি করছে।
আবার বাজারে এই ডিমের মূল্য কমে গেলে ডিলাররা বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। দাম বাড়লে সেখান থেকে বের করে আবারো খোলা বাজারে বিক্রি করেন। জেলা প্রশাসকের ভ্রাম্যমান আদালত ৪/৫ টি হিমাগারে অভিযান চালিয়ে লক্ষ লক্ষ ডিম উদ্ধার করেন।
এই ডিম সিন্ডিকেটের কারণে কাজী ফার্মের একটি ডিমের দাম পড়ে প্রায় ১৩ টাকা। কাজী ফার্মের বগুড়া ডিপো থেকে কিনে প্রতি ডিমে ৩ টাকা ৩৯ পয়সা লাভ করছে ডিলাররা। অর্থাৎ যারা প্রতিদিন ৩০ হাজার ডিম কেনেন তারা দিনে মুনাফা করেন ৪ লক্ষাধিক টাকার বেশি।
বগুড়ায় কাজী ফার্মের ডিপো থেকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লক্ষাধিক ডিম আসে। দিনে ৩ লাখ ডিম ৫ থেকে ৭ জন ডিলাররা ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা লুট করে নিচ্ছে। কাজী ফার্মের ডিপোর সেলস সেন্টারের কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন জানান, তারা প্রতি ডিম ৯ টাকা ৬১ পয়সা দরে বিক্রি করছেন। এর বাইরে কি হচ্ছে তা আমাদের জানা নেই। তারা ডিম সিন্ডিকেট ৫/৬ জন ডিলারের মধ্যে ৩ থেকে ১০ হাজার ডিম বিক্রি করে থাকেন।
ডিপো ম্যানেজার জানান, কোন ডিলার কত ডিম পাবে তা নির্ধারণ হয় ঢাকা থেকে। বগুড়ায় কোন কিছু করার নেই। যারা আগে থেকে বেশি ডিম নিচ্ছিলেন তাদেরই বেশি ডিম দেয়া হচ্ছে।
ফার্মের বগুড়া ডিপো ইনচার্জ মাহবুবর রহমান জানান, ঢাকা অফিস থেকে যেভাবে বিতরণ করে আমরা সেই ভাবে ডিম বিতরণ করে থাকি। আমাদের প্রতি ডিম ৯ টাকা ৬১ পয়সা দরে ডিলারদের কাছে বিক্রি করি। সেই ভাবে ডিলারদের রশিদ দেয়া থাকে। বগুড়া কাজী ফার্মের ডিপো ৩৮ টাকা হালি (৪ টা) বিক্রি করে। আর এখন খুচরা বাজারে ভোক্তারা ৫২ টাকা হালি কিনছে। অথচ বাজারে তাদের নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক দরে বিক্রির কারণ দেখেন না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুদ্র ডিম ব্যবসায়ীরা। বগুড়া ডিপো ইনচার্জ আরো জানান, তাদের ২০ জন ডিলার আছে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রতিদিন ডিমের সিংহ ভাগ পেয়ে থাকে ৫/৬ জন ডিলার । বগুড়ায় এই ৫/৬ জনে সিন্ডিকেট ডিলার কাজী ফার্মের ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারা গত দেড় মাসে কোটি কোটি টাকা মুনাফা লুটে নিয়েছে। ৫/৬ জনের সিন্ডিকেট যে দামে বিক্রি করতে চাইবে সেই দামে ক্ষুদ্র বিক্রোদের নিতে হবে। প্রতি হালিতে প্রায় ১৪ টাকা মুনাফা করছে। এই অস্বাভাবিক মুনাফা করায় ভোক্তারা দিশেহারা । বাজারে মাছ, মুরগী, গোস্তের দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তরা ডিমের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই সিন্ডিকেট ডিমের বাজার অস্থির করে রাখায় অনেকে ডিম কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এমনটি কেন হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইনচার্জ মাহবুবর রহমান জানান, আমরা ৩৮ টাকা হালি দরে ডিম ডিলাদের কাছে বিক্রি করে থাকি। ডিলাররা কি দামে ডিম বিক্রি করছে সেটা তাদের দেখার বিষয় না। ঢাকায় হেড অফিস থেকে যে ভাবে ডিম দিতে বলেন আমরা তাদের সেই ভাবে প্রতিটি ডিলাদের কাছে মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক ড.আনিছুর রহমান জানান, জেলায় প্রতিদিনের চাহিদা ১০ লাখ ৬৪ হাজার ১৯টি ডিমের চাহিদা । সেখানে বগুড়ায় ডিম উৎপাদিত হয়ে থাকে ২২ লাখ ১৮ হাজার ৬শ’ ডিম।
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক আরো বলেন, একটি সিন্ডিকেট ডিমের বাজারকে অস্থির করে রেখেছে। সরকারকে বিব্রত করতে তারা ডিমের বাজার অস্থির করে রেখেছে। গত ঈদ-উল ফিতরের আগে এই সিন্ডিকেট কম দামে ডিম কিনে কোল্ডষ্টোরে রেখেছিল।