ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ ১০:১৯ পিএম

বগুড়ায় রাতের ট্রেনে শহরে ঢুকে ছিনতাই, ভোরের ট্রেনে বিদায়

পুলিশি নজরদারি, সিসিটিভি ফুটেজ, নিয়মিত টহল বাদ নেই কিছুই। তারপরও বগুড়া শহরে প্রতিদিন গভীর রাতে কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনাগুলি ঘটছে রাত্রীকালীন পথযাত্রী বা রিকশা চালকের সঙ্গে। সাম্প্রতিক কয়েক দিনের তথ্য অন্তত তা-ই বলছে। তবে এসব ছিনতাই চক্রের মধ্যে রয়েছে সান্তাহার উপজেলার কিছু যুবক। যারা রাতের ট্রেনে শহরে ঢুকে গভীর রাতে ছিনতাই করেই ভোরের ট্রেনে বিদায় হয় শহর থেকে। শুধু এই তাই নয়, শহরের স্থানীয় বাসিন্দা এমনকি ভাড়াটিয়ারাও এসব কাজে লিপ্ত।

গত রোববার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন জোব্বার নামের একজন রিকশা চালক। তিনি জানান, রাত ৩ টায় শহরের সাতমাথা এলাকা থেকে চারজন যুবক তিনমাথা হয়ে কাহালু রোডের শহরতলী এলাকায় যাওয়ার জন্য তার রিকশা ভাড়া করেন। এরপর শহরতলীর ফাঁকা রাস্তায় পৌঁছাতেই যুবকরা তাকে থামিয়ে সবকিছু কেড়ে নেয় এবং  মারধর করে। এসময় হঠাৎ একটি মোটরসাইকেলের আলো দেখে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।

সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন অলিগলিতেও মাঝ রাতে দেখা মিলছে কিছু ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্র ও মুখ বেঁধে ঘোরাঘুরি করতে। তাদের টার্গেট মাঝরাতের বাড়ি ফেরা যাত্রীদের। 

এদিকে বগুড়া রেলস্টেশনে থাকা এক যুবক জানান, শহরে কয়েকদিন ধরেই জেলার সান্তাহার থেকে বেশ কিছু যুবক রাত ১১ টার ট্রেনে শহরে প্রবেশ করে। এরপর তারা সাতমাথা এলাকায় অবস্থান নেয় এবং কোন রিকশা বা ইজিবাইক চালকদের টার্গেট করে ভাড়া করে নির্জন ফাঁকা রাস্তার দিকে নিয়ে যায়। এরপর তার কাছে যা পান তাই নিয়ে ছেড়ে দেন। 

তিনি আরও জানান, ছিনতাইকারীরা কখনো তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে থাকেন। এই সদস্যের একজন সাতমাথা এলাকায় অবস্থান করে আর বাকীরা অবস্থান করে ফাঁকা কোন রাস্তায়। যখনই কোন যাত্রী সেই পথে যাওয়ার জন্য রিকশা ঠিক করে রওনা দেন, তখনই বাকী সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয় সে খবর। নির্দিষ্ট গন্তব্যে রিকশা পৌঁছালেই ওতপেতে থাকা সেই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন এসব রাত্রীকালীন যাত্রীরা। 

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এই যুবক আরও জানান, ছিনতাই করে এসেই ভোরের ট্রেনে তারা বগুড়া শহর থেকে বিদায় নেয়। তারা প্রতিদিন শহরের আসছেন ছিনতাই করছে আর ভোরের ট্রেনে বিদায় নিচ্ছে।

শহরের কাটনারপাড়া এলাকার জোবায়ের নামের এক বাসিন্দা জানান, তিনি কয়েকদিন আগেই এমন ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছিলেন। ঢাকা থেকে বগুড়া সাতমাথা বাস থেকে নেমেই রিকশা নেন বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ভোর ৪ টার দিকে কাটনারপাড়া এলাকায় ঢুকতেই ৪-৫ জন ছিনতাইকারী তাকে ঘেরাও করে যা ছিল সব কেড়ে নেয়। এঘটনায় থানায় ছিনতাইয়ের অভিযোগও নেয়নি পুলিশ বরং ছিনতাই হওয়া মালামাল হারানোর জিডি করতে বলে পুলিশ।

বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যে যাত্রীরা বগুড়া এসে বাস কিংবা ট্রেন থেকে নামেন, তারা যেন একটু সকালের দিকে বাস থেকে নামেন বা তারা যেন ভোরের আলো ফোটার জন্য অপেক্ষা করে তারপর বাড়ি দিকে রওনা দেন। গভীর রাতে রাস্তা ফাঁকা থাকায় এসব চক্র শহরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ সারারাত শহরে টহল দিচ্ছে কিন্তু যেখানে পুলিশ থাকে না সেখানেই অপরাধীরা, ছিনতাইকারীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। বিভিন্ন অরক্ষিত জায়গা চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় পুলিশের চেকপোস্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের কাজ করা হচ্ছে।

এনসিএন/বিবর

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সম্পর্কিত