আগস্ট ১, ২০২৫ ৯:০০ পিএম

বগুড়ার শেরপুরে বাঙালি নদীর ভাঙনের কবলে ঘরবাড়ি ও ফসলী জমি

Oplus_16777216
Oplus_16777216

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে বগুড়ার শেরপুরে খানপুর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে বাঙালি নদীর ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই বরিতলী, বিলনোথার, নবীনগর, শইলমারি ও শান্তিনগর গ্রামের ১২০ বিঘারও বেশি ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় আট হাজার মানুষের বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বরিতলী গ্রামের প্রায় ৩০০ মিটার এবং বিলনোথার গ্রামের প্রায় ৪০০ মিটারজুড়ে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ ভাঙনে বিলীন হয়েছে বহু জমি ও সম্পদ। আতঙ্কে অনেক পরিবার ইতোমধ্যেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছরই নদীভাঙন রোধে অস্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।

বরিতলী গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, আমার বাবাসহ আমি ৭ বার ভাঙনের শিকার হয়েছি। এখন আশঙ্কা করছি, আমার শেষ আশ্রয়স্থল বাড়িটিও হয়তো এবার নদীতে হারিয়ে যাবে।

বিলনোথার গ্রামের হোসেন আলী বলেন, আমার বাপ-দাদার বহু জমি ছিল। এই নদী আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আমার ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। ভিটেমাটি হারিয়ে তিনি আর এলাকায় আসতেই চান না।

শইলমারি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আবুল ফজল বলেন, ১৯৮৮ সালের পর থেকে আমি এই নদীর ভয়াবহতা দেখছি। আমার নানার বাড়ি নাকি ১২ বার নদীতে ভেঙেছে। আমি নিজেও সাতবার ভিটেবাড়ি সরিয়েছি। এখন আর কিচ্ছু নেই।

ভাঙনের কবলে পড়েছে বরিতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোয়াবাড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরিতলী জামে মসজিদ, একটি নুরানি মাদ্রাসা, কবরস্থান ও মক্তব। এসব প্রতিষ্ঠান এখন নদীভাঙনের আশঙ্কায় টিকে থাকার লড়াই করছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত বছর বরিতলী পয়েন্টে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করলেও তা তেমন কাজে আসেনি। স্থানীয়দের দাবি, বাঙালি নদীর ভাঙন ঠেকাতে এখনই জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে আগামীতে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে এই অঞ্চলে।

এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, বরিতলী এলাকায় বাঙালি নদীর ডান তীরে দেড়শ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এটি রক্ষায় প্রায় ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print