জুলাই ২৭, ২০২৪ ১:৩৪ পিএম

এক সপ্তাহের ব্যবধানে হালিতে বেড়েছে ১০ টাকা

সিন্ডিকেটের কালো থাবায় ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে

ডিমের সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দনের দ্বিগুন ও বগুড়ায় ডিমের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সরবরাহ ঠিক থাকলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির কালো থাবায় ডিমের দাম নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডিমে প্রায় ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ৪০ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি হয়েছে।

ডিমের ক্ষুদ্র পাইকারি ব্যবসায়ী মিলন মিয়া জানান, গত মে ৫ রোববার থেকে ডিমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। শুধু বগুড়ায় নয় সারা দেশে উচ্চ পর্যায়ের সিন্ডিকেটের কালো থাবায় বিরাট পরিমানের ডিম কোল্ডষ্টোরে রেখে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করেছে। তারা গত ঈদুল ফিতরের মধ্যে ডিম ষ্টোর করতে শুরু করে। ইতোমধ্যে গত এক সপ্তাহে প্রায় ৮০ শতাংশ ডিম গত সোমবার (১৩ মে) ষ্টোর থেকে বের করে ফেলেছে জানান এই ডিম বিক্রিতা।

পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা মনে করেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বগুড়ায় আবার ডিমের দাম স্বাভাবিক হয়ে যাওযার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আরো জানান, দেশের অধিকাংশ আলু রাখার কোল্ডষ্টোরে বিপুল সংরক্ষন করেছিল এই অদৃশ্য শক্তি। এখন সেগুলো খালস হচ্ছে। এই কয়দিনে কোটি টাকার মুনাফা করেছে সক্রিয় সিন্ডিকেট।

বগুড়ায় প্রতিদিনের চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ ডিম উৎপাদন হলেও চলছে কৃত্তিম সংকট। জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডিমের মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কারণ ধরতে পারছেন না। তবে তারা মনে করেন, সবজি, মাছ, মাংসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাই ডিমের উপর চাপ পড়েছে। এমন যুক্তি মানতে নারাজ বগুড়ার ক্ষুদ্র ডিম ব্যবসাীয়রা।

বগুড়ার ডিমের সাধারণ পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বগুড়া চলতি মাসের ১৩ তারিখে এক কেস (৩০টা) ডিম পাইকরি বিক্রি হয়েছে ৩৭০ টাকা। আর গত ৫ ও ৬ মে এক কেস ডিম বিক্রি হয়েছিল ২৭০ টাকা।

তারা আরো জানান , বগুড়াতেও এমন একটি সিন্ডিকেট আছে। ১৩ তরিখে বগুড়ায় কাজী ফর্মের ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ৯ টাকা ৬১ পয়সা। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে ডিম ব্যবাসায়ী জানান, বগুড়ার কয়েক জনের এক সিন্ডিকেট সেই ডিম নিলামে ডেকে নিয়ে প্রতিটি ১২ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করেছে। এই সিন্ডিকেট ডিম নিলামের সময় সাধারণ ব্যবসায়ীদের আসে পাশে যেতে দেয়না । ঐ সিন্ডিকেটের কাছ থেকে অধিক মূল্যে ডিম কিনে ১৩ মে তারা ৪৮ টাকা (ছোট সাইজের) থেকে বড় সাইজের ডিম ৫০ টাকা হালি বিক্রি করেছে। প্রতি বছর এই সময়ের আগে ডিম কোল্ডষ্টোরে রেখে বড় অংকের মুনাফা তুলে নেয়।

এ দিকে বগুড়া জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক নাসরিন পারভীন জানান, জেলায় প্রতিদিনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ ৬৪ হাজার ১৯ টি । কিন্তু প্রতিদিনের জেলার চাহিদা ২২ লাখ ১৮ হাাজর ৬০০ ডিম। তিনি আরো জানান জাতীয় ভাবে ডিমের চাহিদা বছরে একজনের চাহিদ ১০৪টি। জেলায় প্রতিদিন উদ্বৃত্ত থাকে ১১ লাখ ৫৪ হাজার ডিম। এই বিশাল উদ্বৃত্ত ডিম যায় কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড.মা: আনিছুর রহমান জানান অতিরিক্ত ডিম জেলার বাইরে অন্য জেলায় চলে যায়। অতিরিক্ত ডিম জেলার বাইরে গেলেও বগুড়ায় উৎপাদিত ডিমের প্রতিদিনের চাহিদা ১০ লাখ ৬৪ হাজার ১৯ টি ডিম বগুড়ায় বিক্রি হলে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাবার কথা নয়। তিনি এর সাথে এক মত প্রকাশ করেন। তবে জেলা ও আশে পাশের জেলার কোল্ড ষ্টোরে সংরক্ষন করা করে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি বলেন এটা ঠিক বলতে পারেন না বলে জানান। ডিমের খুচরা ব্যবসায়ীদের অনেকে জেলা মুরগীর খামারে আগাম অর্থ লাগ্নি করে থাকে । ঐ সকল পাইকরি ব্যবসায়ীর কাছে ছোট খামারীর কাছে জিম্মি হয়ে গড়ে।
ডিমের দামের অস্বাভাবিক উর্ধগতি প্রসঙ্গে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, তিনি এর কিছ্ইু জানেন না। তবে তিনি মনে করেন যেহেতু বাজারে সবজি, মাছ, মাংসের দাম বেশি তাই ডিমের উপর চাপ পড়ায় দাম বৃদ্ধি পাবার সমম্ভাবনা বেশি। ক্ষুদ্র ডিমের ব্যবসাীয়ার জানান কিশোরগঞ্জের মত প্রায় সব জেলা কোল্ডষ্টোর গুলোতে অভিযান চালালে একটি বড় সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাবে। এছাড়া বগুড়া জেলার মধ্যে এক বড় সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়ার অনুরোধ জানান ব্যবসায়ীরা। এই সিন্ডিকেট প্রতিদিন সকালে ডিমের হাঁক-ডাকে অংশ নেয় । অন্যদের সেই ডাকে আসে পাশে ভীড়তে দেয়না এমন অভিযোগ করেছেন ক্ষুদ্র পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print