ডিসেম্বর ৪, ২০২৩ ১২:২১ এএম

সৌন্দর্য বাড়াতে ঠোঁট কেটে মাটির চাকতি বসান মুরসি নারীরা

পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়ায় বাসবাস করে মুরসি উপজাতিরা। দক্ষিণ ইথিওপিয়া এবং সুদানের সীমান্তে অবস্থিত ওমান উপত্যকাই হয়ে উঠেছে এদের বাসস্থান। বর্তমানে মুরসি উপজাতির মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে আফ্রিকার বিভিন্ন উপজাতিদের মতোই এই আছে আলাদা পরিচিতি।

আফ্রিকার একেক উপজাতি তাদের একেক সংস্কৃতি এবং রীতির জন্য পরিচিত বিশ্বে। মুরসি উপজাতিরা দেখতে অন্যান্য উপজাতিদের মতো হলেও তারা বিশেষ বেশ কিছু কারণে। এখনো প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সাজপোশাক এবং রীতিনীতি ধরে রেখেছে তারা। বিশেষ করে এদের নারীদের বিশেষ সৌন্দর্য বর্ধক গয়না। যা তারা পরেন ঠোঁটে। এটি অনেকটা এখনকার পিয়ার্সিং বা ট্যাটু করার মতো।

ঠোঁট কেটে বেশ বড় মাটি কিংবা কাঠের পাত বা চাকতি ঢুকিয়ে রাখেন মুরসি নারীরা। নিচের ঠোঁট কেটে সেখানে মাটির তৈরি এই চাকতি বসিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি ধীরে ধীরে কাটা অংশটি যেমন বাড়তে থাকে, তেমনই চাকতির আকারও বাড়িয়ে তোলা হয়। আর এই চাকতির আকারের উপরেই অনেক সময় নারীদের সামাজিক মর্যাদাও নির্ভর করে।

মুরসি মেয়েরা ১৫ অথবা ১৬ বছরে পা রাখার পরে তাদের নিচের ঠোঁট কেটে দেওয়া হয়। মোটামুটি ৪ সেন্টিমিটার ব্যাসের একটা গর্ত তৈরি করে সেখানে কাঠের ব্লক গুঁজে দেওয়া হয়। যতদিন ক্ষতস্থানের ঘা না শুকিয়ে যায়, ততদিন এই কাঠের টুকরোটি বের করা হয় না। ঘা শুকিয়ে গেলে সেই টুকরো বের করে নিয়ে কাঠ বা মাটির তৈরি অন্য চাকতি বসিয়ে দেওয়া হয়।

তবে ঠোঁটটা কতটা ঝোলানো হবে, সেটা নির্ভর করে মেয়েটির মতামতের উপর। এই যন্ত্রণাদায়ক প্রক্রিয়া চলতে থাকে বেশ কয়েক মাস ধরে। এইসব চাকতিও আবার নানা রকমের। কারোর চাকতি নিরেট, তার মধ্যেই নানা ধরনের নকশা আঁকা। কারোর চাকতির মধ্যে আবার রয়েছে নানা রকমের ছিদ্র। প্রত্যেকেই নিজেকে সাজিয়ে তুলতে চান নিজের মতো করে। সাধারণত ১২-১৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চাকতিই দেখা যায় পরিণত বয়সের নারীদের ঠোঁটে। তবে কেউ কেউ আবার আরও বড় চাকতি পছন্দ করেন। মোটামুটি ২৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের চাকতিও দেখা যায় অনেক সময়।

আবার শোনা যায় যে, বিবাহিত কিংবা বয়স্ক নারীদের তুলনায় অবিবাহিত এবং কমবয়সী নারীদের মধ্যে এই রীতি মেনে চলার ঝোঁক বেশি থাকে। ঠোঁটের এই পাতগুলো মূলত তারা পরেন বিয়ে, গরুর দুধ দোয়ানোর মতো শুভ অনুষ্ঠানে।

তবে এগুলো শুধুই কাঠ বা মাটির পাট নয়, ঠোঁটের এই পাতের বিভিন্ন ধরনের অর্থ ও গুরুত্ব রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রচলিত বিশ্বাস হলো, নারীদের ঠোঁটের পাত সৌন্দর্যের প্রতীক। নারীরা যখন নিজের স্বামীকে খাবার পরিবেশন করেন, তখন তারা গর্বের সঙ্গে এই অলঙ্কার ঠোঁটে সাজিয়ে নেন। এর অর্থ হচ্ছে, ওই নারী তার স্বামীর প্রতি গভীরভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে স্বামীর মৃত্যু হলে ঠোঁটের এই পাত খুলে রেখে দেন মুরসি উপজাতির নারীরা। এছাড়া ঠোঁটের চাকতি বা পাতের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ রয়েছে। এটি মুরসিদের পরিচয়ের অন্যতম বড় প্রতীক।

মুরসি উপজাতি অন্যান্য উপজাতিদের তুলনায় কিছুটা হিংস্র প্রকৃতির হয়। এমনকি বিনা অনুমতিতে কেউ তাদের এলাকায় প্রবেশ করলে তারা সেই ব্যক্তিকে হত্যা পর্যন্ত করতেন। ফলে এই উপজাতি এলাকায় পর্যটকরা প্রবেশ করার অনুমতি পেতেন না আগে। তবে কয়েক দশক আগে পর্যন্তও তাদের এমন আচরণ থাকলেও বর্তমানে সেই ধারণা খানিকটা বদলাচ্ছে। ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রভাব পড়ছে উপজাতিগুলোর মধ্যেও।

সূত্র: দ্য ডেইলি বেস্ট, সোমাক হলিডেস

এনসিএন/এসকে

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সম্পর্কিত