উত্তরবঙ্গের রাজধানী খ্যাত বগুড়া জেলায় জনসংখ্যার পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনে মোট ২১টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষের বসবাস এই বগুড়া জেলায়। দেশের সব থেকে বেশি ওয়ার্ড নিয়ে গড়ে ওঠা এই জেলায় কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জেলার থেকে অনেক এগিয়ে।
তবে জনবল সংকট নিয়েই চলছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বগুড়া জেলার কার্যক্রম। মাত্র দুইজন কর্মচারীর মধ্যে একজন সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল রিজভী ও একজন অফিস সহায়ক আব্দুল কাদেরকে নিয়ে চলছে পুরো জেলার কার্যক্রম।
বাজার মনিটরিং এ গেলে কর্মকর্তা এবং তার সহকারী যেতে হয়। তখন অফিসে তালা ঝুলাতে দেখা যায়। সরকারী অফিসে এভাবে তালা ঝুলতে দেখা ও অফিস সময়ে দরজা বন্ধ থাকা অশোভন। অভিযোগ করতে এবং সেবা প্রত্যাশিরা অফিসে এসে কর্মকর্তাদের না পেয়ে জনমনে অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল রিজভী বলেন, “অভিযোগের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু জনবল স্বল্পতার কারণে নিষ্পত্তি হচ্ছেনা। অনেক অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির যোগ্য হলেও সম্ভব হচ্ছেনা। বগুড়া জেলার ১২ টি উপজেলায় একজন কর্মকর্তা দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে অপরাধ দমন অসম্ভব। যার কারণে বাজার প্রকৃত অর্থে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। উপজেলা পর্যায়ে কোন অফিস নেই। অপরাধের অনেক তথ্য পাওয়া গেলেও তাৎক্ষণিক ব্যাবস্থা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছেনা।“
জেলা জুড়ে ভেজাল বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা ও অভিযান পরিচালনা করতে জনবল সংকটের কারণে জেলা পুলিশের সহায়তা নিয়ে চলতে হয় জেলার ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের।
এছাড়া প্রতিনিয়ত ভোক্তাদের অভিযোগ বাড়ার কারণে তা নিষ্পত্তি করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। যার কারণে নতুন অভিযোগ গ্রহণ ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে জেলার এই বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
জেলা জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা যায়, ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়ন তথা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জনবল বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই। সেই সাথে জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে অফিস স্থাপন করা অতীব জরুরি বলে মনে করেন তারা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দুই ধরনের কাজ করে থাকে। একটি হলো প্রতিকারমূলক (কেউ কোন পণ্য বা সেবা ক্রয় করে ক্ষতিগ্রস্থ হলে অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জরিমানার ২৫ শতাংশ পাবেন ক্ষতিগ্রস্থ ভোক্তা)। অপরটি প্রতিরোধমূলক কাজ (সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ প্রতিদিন বাজার মনিটরিং)।
বগুড়ায় এ অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। জেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯–২০ অর্থবছরে অভিযান হয় ১৬১ টি। যার বিপরীতে মোট জরিমানা করা হয় ১১ লাখ ৮ হাজার পাচশত টাকা। ২০২০–২১ অর্থবছরে অভিযান হয় ১৯৮ টি। যার বিপরীতে জরিমানা হয় ১১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ২০২১–২২ অর্থবছরে মোট অভিযান ১৭৭ টি। যার বিপরীতে মোট জরিমানা হয় ২৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ২০২২–২৩ অর্থবছরে মোট অভিযান হয় ১৯৪টি যার বিপরীতে জরিমানা হয় ৩৬ লাখ দুই হাজার পাচশত টাকা।
ইফতেখারুল রিজভী বলেন, “আমি যোগদানের পর অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পূর্বের তুলনায় আরো কঠোর অবস্থান গ্রহণ করি। জরিমানার পরিমান বেড়েছে কয়েকগুণ। সেই সাথে ভোক্তাদের অভিযোগের সাথে সাথে তা আমলে নিয়ে জরুরী পদক্ষেপ নিচ্ছি।“
উপজেলা পর্যায়ে এই দপ্তরের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গ্রামের একজন ভোক্তার নিকট হতে কোন অসাধু ব্যবসায়ী কোন পণ্যের মূল্য বেশি রাখলে তাকে অভিযোগ করতে জেলা শহরে আসতে হয়। সেক্ষেত্রে তার নিকট হতে যত টাকা বেশি নিয়েছে তার চাইতে বেশি টাকা খরচ হতে পারে জেলা শহরে গাড়ি ভাড়া করে আসতে। এসব ক্ষেত্রে ভোক্তা প্রতিকার চাইতে নিরুৎসাহিত হবেন। আর উপজেলায় কোন তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক জেলা হতে অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয়না। সুতরাং জনবল বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। মাত্র দুজন কর্মচারি দিয়ে ৩৬ লাখ মানুষের অধিকার রক্ষা দেয়া প্রায় অসম্ভব।“
এনসিএন/স