ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ফেলে যাওয়া শিশু কন্যা ফাতিমা জান্নাতের ঠাঁই হলো বাপ্পী ইসলাম ও মোরশেদা ইয়াসমিন সাথী দম্পতির সংসারে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) শিশুটির বিকল্প পরিচর্যাকারী হিসেবে অভিভাবকত্ব অর্জনে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাপ্পী ইসলাম দম্পতির হাতে তুলে দেয়া হয়।
বাপ্পী ইসলাম ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের সরকার পাড়া এলাকার মৃত মহিরউদ্দীনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন প্রাইভেট কোম্পানির কর্মচারী।
গেল সোমবার (০১ জুলাই) ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্টার্ড খাতায় অজ্ঞাতপরিচয়ে নবজাতক শিশুটিকে ভর্তির পর ফেলে রেখে পালিয়ে যায় এক দম্পতি।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বতরা জানান, গত সোমবার সকালে চিকিৎসার জন্য এক থেকে দুদিন বয়সী নবজাতকে নিয়ে এক দম্পতি আসেন শিশু ওয়ার্ডে। ভর্তি করার পর শিশুটিকে শ্বাসকষ্ট রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ শিশুটির শয্যার আশপাশে অবস্থান করতেও দেখা গেছে ওই দম্পতির। তবে কয়েক ঘণ্টা পর শিশুটি চিৎকার চেঁচামেচি করলে পাশের শয্যার অভিভাবকরা স্বাস্থ্যকর্মীদের খবর দেয়। পরে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে গিয়ে হাজির হলে অভিভাবক হিসেবে কাউকেই না পেয়ে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তির নিবন্ধন বই দেখেন শিশুটির ভর্তি করা হয় ১ জুলাই সকাল ৭টায়। খাতায় নবজাতকের নাম দেয়া হয় বেবি। আর ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পঞ্চগড় জেলার বোদা ময়দানদিঘি।
দত্তক নেয়া বাপ্পী বলেন, ‘আমি ৮ বছর আগে বিয়ে করেছি। কিন্তু আমাদের কোনো সন্তান নেই। খবর পেলাম যে এক শিশুকে কে বা কারা হাসপাতালে ফেলে গেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে বাচ্চাটিকে আমরা দত্তক নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে আমি এ শিশুটির বাবা। আমার সহধর্মিনী তার মা। আদর, স্নেহ, মমতা আর অধিকার নিয়ে আমাদের পরিবারে বেড়ে উঠবে ফাতিমা।’
ঠাকুরগাঁও সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব জানান, ‘অভিভাবকহীন শিশুটিকে শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী শিশু বঞ্চিত বিবেচনায় পরিচর্যার জন্য মো. বাপ্পী ইসলাম ও তার স্ত্রী মোরশেদা ইয়াসমিন সাথীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সঠিকভাবে পরিচর্যা হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা হবে।’
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, শিশুটিকে হাসপাতালে ফেলে রাখে চলে গেছে কে বা কারা এটি জানার পর উদ্যোগ নেয়া হয়ে দত্তক দেয়ার। এরই মধ্যে ১০ জন আবেদন করেছিল। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে জেলা শহরের সরকারপাড়ার বাসিন্দা মো. বাপ্পী ও সাথী দম্পতির কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে।’