অক্টোবর ১, ২০২৫ ১:৫৪ এএম

আজ ১৩ ডিসেম্বর বগুড়া হানাদার মুক্ত দিবস

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে সবুর সওদাগরের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী বগুড়া শহরে প্রবেশ করে। ছবি: এনসিএন আর্কাইভ
১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে সবুর সওদাগরের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী বগুড়া শহরে প্রবেশ করে। ছবি: এনসিএন আর্কাইভ

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর বগুড়া হানাদারমুক্ত দিবস। ওই দিন বগুড়ায় তখন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা। ১৩ ডিসেম্বরের আগে ১০ ডিসেম্বর থেকে হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মরণ কামড় দিয়েছিল। আকাশে মিত্র বাহিনীর বোমারু বিমান, মাটিতে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর অভিযানে দিশাহারা পাক হানাদার বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

২ ডিসেম্বর সারিয়াকান্দি থানা প্রথম হানাদার বাহিনী মুক্ত হওয়ার পর একে একে বগুড়ার সোনাতলা, গাবতলী, ধুনট, শেরপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। এরপর একসাথে ১৩ ডিসেম্বর বগুড়া সদর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া থানায় পাক বাহিনীর পতন ঘটে। শিবগঞ্জ, আদমদিঘী ১৪ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়। তুমুল লড়াইয়ের পর ১৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত বগুড়া শহরে বারুদের গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে ওঠেছিল ।

বেশ কজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, ১৩ ডিসেম্বর বগুড়ার কয়েকটি জায়গায় পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বগুড়ায় আব্দুস সবুর সওদাগর ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মরহুম সৈয়দ ফজলুল আহসান দিপুর নেতৃত্বে দুটি দল প্রায় একই সাথে বগুড়া শহরে দুই দিক থেকে প্রবেশ করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ ফজলুল আহসান দিপু জীবিত থাকা কালে বলেছিলেন, অফিসিয়ালি ১৩ ডিসেম্বর বগুড়া মুক্ত ঘোষণা হয়। তিনি সে সময় জানিয়েছিলেন, ২ ডিসেম্বর তারা সারিয়াকান্দি ও গাবতলী থেকে ১১ জন হানাদার বাহিনীকে আটক করে। এর মধ্যে ৫জন মারা পড়ে। ৬ জনকে মিত্র বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। দল নিয়ে ঝড়ের গতিতে তারা বগুড়ার সারিয়াকন্দি থানায় এসে পৌছান ৮ ডিসেম্বর। সারিয়াকান্দি থানার ফুলবাড়ি এসে হানাদারদের সাথে তুমুল লড়াইয়ের পর ১৩ ডিসেম্বর তারা শহরের ভেতরে প্রবেশ করে আবার ফিরে যান ফুলবাড়ি কমিউনিস্ট পার্টির প্রয়াত নেতা মোখলেসুর রহমানের বাড়িতে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ ফজলুল আহসান দিপু প্রায় ৪ বছর আগে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রুহুল আমিন বাবলু জানান, বগুড়া মুক্ত হওযার দিন তিনি বগুড়ায় ছিলেন না। তারিখও ঠিক বলতে পারেন না। তিনি সে সময় সোনাতলায় অবস্থান করছিলেন। সে সময়ের অনেক স্মৃতি তার স্মরণে নেই। জেলা সংসদের সাবেক কমান্ডার আমিনুল ইসলাম পিন্টু জানান, ১৩ ডিসেম্বরই হবে বগুড়া হানাদার মুক্ত দিবস। তবে এই দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসব করা উচিত। বীর মুক্তিযোদ্ধা সবুজ সওদাগরের দলের আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুর আলম মুন্নু জানান, তদের একটি দল বগুড়া শহরে ১৩ ডিসেম্বর সকাল থেকে হানাদার বাহিনীর ওপর মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনী তীব্র আক্রমণ শুরু করে। মাগরিবের নামাজের পর শহরের অ্দূরে ফটকি ব্রীজের কাছে মিত্র বাহিনী তাদেরকে পাক হানাদার বাহিনীর নিহতদের মৃতদেহ ও আহতদের পৃথক করতে বলে। এরপর মিত্র বাহিনী তাদের স্থান ত্যাগ করতে বলেন। পাক বাহিনী মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে নারাজ। তাদের কাছে মুক্তিবাহিনী আন্তর্জাতিক বাহিনী নয় জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী নিয়মিত বাহিনীর কাছে তারা আত্মসমর্পণ করতে চায়। এছাড়া তাদের ভয় ছিল মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে তারা তাদের মেরে ফেলতে পারে। ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর ঘোষণা দেওয়া হয় বগুড়া শহর হানাদারমুক্ত। ১৪ ডিসেম্বর সকালে সবুর সওদাগর ও বাহিনী জনশূন্য শহর দেখতে পান।

সকলের মতে ১৯৭১ সালে ১০ ডিসেম্বর ভোরে মিত্র বাহিনী (ভারতীয় সেনা) এর ৬৪ মাউন্টেন রেজিমেন্ট ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিংহ এক ব্রিগেড সৈন্য নিয়ে বগুড়া শহরের ৩ কিলোমিটার উত্তরে নওদাপাড়া-চাঁদমুয়া ও ঠেঙ্গামারা গ্রামের মধ্যবর্তী স্থান লাঠিগাড়ি মাঠ সংলগ্ন বগুড়া-রংপুর সড়কে অবস্থান নেয়। আর্টিলারি ডিভিশন সেখানে বাঙ্কার খনন করে অবস্থান নেয়। বগুড়া শহরে পাক সৈন্যদের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে শহরে অভিযান পরিচালনার জন্য ফ্রন্ট ফাইটার গোর্খা বাহিনীর সৈন্যরা ট্যাংক নিয়ে শহর অভিমুখে মার্চ করে।

১০, ১১ ও ১২ ডিসেম্বর তুমুল যুদ্ধ হয়। ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে বলে সংবাদ পাওয়া গেলে বগুড়াবাসীসহ মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর শিবিরে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ১৩ ডিসেম্বর রাতের পর থেকে বুক ভরা শ্বাস ফেলে মুক্তিযোদ্ধা ও বগুড়ার মুক্তিকামি মানুষ। হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার, আলবদর, আলসাম্স ও মুসলিম লীগের পান্ডারা বগুড়ার বিভিন্ন গ্রামে ও বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে। পরে তারা ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

 

এনসিএন/আ.জা/সি.সা

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print