মে ১৭, ২০২৪ ১:১২ পিএম

ইউটিউবে শিখে কমলা চাষে সফল বগুড়ার আজিজ

ইউটিউবে শিখে কমলা চাষে সফল বগুড়ার আজিজ।
ইউটিউবে শিখে কমলা চাষে সফল বগুড়ার আজিজ৷ ছবিঃ এনসিএন

আব্দুল আজিজ প্রামানিক একজন সফল কমলা চাষী। সফটওয়্যার প্রকৌশলী সন্তানের ইচ্ছা পূরণ করতে ও কমলা চাষ করে ভাগ্য বদলাতে চান বগুড়া পৌর এলাকার গোবরধনপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ প্রামানিক। কমলা চাষকে নিয়ে এখন অনেক বড় স্বপ্ন ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ দেখছেন আজিজ।

যে জমিতে তিনি এতোদিন আদা মসলা চাষ করতেন সেই জমিতে এখন শুরু করেছেন কমলা চাষ। প্রকৌশলী সন্তানের অনুপ্রেরনায় তিনি কমলার চাষ শুরু করেছেন। পোল্যান্ডে চাকরীরত সফটওয়্যার প্রকৌশলী সন্তানের ইচ্ছায় কমলা চাষ শুরু করেন দুই বছর আগে।

কমলার চারা লাগানোর সময় আশেপাশের অনেকে তাকে উৎসাহ দেয়ার বদলে পাগল বলেছে। তিনি তার প্রচেষ্টায় দেখিয়েছেন কিভাবে সমতল ভূমিতে সুমিষ্ট কমলা চাষ করতে হয়। যারা এখন একদিন তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেছিল তারা এখন কমলার বাগান উৎসাহিত হচ্ছেন। তিনি কমলা চাষের পাশাপাশি কমলার চারাও তৈরী করছেন। বগুড়ার আনাচে কানাচে কমলা চাষ ছড়িয়ে দিতে চান আজিজ।

প্রায় ২ বিঘা জমিতে নানা জাতের কমলা গাছ লাগিয়েছেন তিনি। গাছে গাছে নয়, যেন কমলা ধরেছে পাতায় পাতায়। কমলার ভারে নুইয়ে পড়েছে গাছগুলো। পাকা-আধা পাকা কমলায় বাগান এক অপরুপ সাজে সেজেছে। তার বাগানে প্রায় ২শত গাছে দার্জিলিং কমলা, চায়না কমলা, ম্যান্ডোলিন কমলার গাছ আছে।

চারা রোপনের দুই বছর পর এবারই গাছে ফল এসেছে। দুই বছর পর কমলা গাছে ফল এসেছে। অনেকেই এসেছেন কমলার বাগান দেখতে, অনেকেই এসেছেন কমলা কিনতে। কমলা বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। বরং বাগানেই বসে কমলা বিক্রি করেন।

যারা তাকে নিরুৎসাহিত করেছিল তারাও কমলার চাষ করে স্ববলম্বী হতে চায়। অনেক শিক্ষিত যুবকও এগিয়ে আসছে। দুই বছর ধৈর্য ধরে কমলার বাগানের পরিচর্যা করেছেন ভাল ফলাফলে আশায়। শুরুতে কম ফলন পেয়েছেন তবুও কম নয়। কিন্তু আগামী মৌসুমে ফলন বেশি হবে এমনটি জানালেন হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আব্দুর রহিম। তিনি জানান, গাছ যত বড় হবে, ফলনও ততো বাড়বে, সুমিষ্ট হবে।

এ পর্যন্ত তিনি ১৮০ টাকা কেজি দরে ইতোমধ্যে প্রায় ৫ মন কমলা বিক্রি করেছেন। ৫ মন কমলা বিক্রি করে ৩৬ হাজার টাকা আয় করেছেন। এখনও গাছে যে কমলা আছে তা বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আয় হবে বলে তিনি আশাবাদী। শুরুতে কমলা চাষের জন্য তার বিনিয়োগ করতে হয়েছে ৩ লাখ টাকা। গাছের বয়স বাড়লে কমলার ফলন বাড়বে, ফলও মিষ্টতা বাড়বে বলে জানান হর্টিকাল সেন্টারের কর্মকর্তারা।

আগামী বছর প্রতিগাছ থেকে ১৫০ থেকে ২০০ কেজি কমলার ফলন পাওয়ার আশা করছেন আব্দুল আজিজ। কমলা বাগানে তিনি সাথী ফসলও করছেন। আদা, রশুন, পোঁয়াজ, মরিচ চাষ করেছেন। এই ফসল থেকে আসবে অতিরিক্ত অর্থ।

আব্দুল আজিজ জানান, তিনি ইউটিউব থেকে চাষ পদ্ধতি শিখে প্রতি গাছে ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আগামী বছর বিনিয়োগের সব টাকা লাভসহ উঠে আসবে বলে আশাবাদী তিনি।এখন প্রথম অবস্থায় প্রতি গাছে ৩০ থেকে ৪০ কেজি ফলন এসেছে।

আগামী বছর প্রতিগাছে ১৫০ থেকে ২০০ কেজি ফলন পাবে এমন আশা করছেন। ক্রেতারা তার বাগান থেকে কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

দুই বছর আগে চুয়াডাঙ্গা ভারত- বাংলদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে চারা সংগ্রহ করে কমলা চাষ শুরু করেন।

জেলা হর্টিকালচার সেন্টারের উপ পরিচাক আব্দুর রহিম জানান, অনেকে মনে করেন, পাহাড়ী অঞ্চলে ফল কমলা।অনেকে মনে করে সমতল জমিতে কমলা হয়না। তিনি বলেন, জাতভেদে কমলা ভিন্ন ভিন্ন জমিতে চাষ হয়ে থাকে। মাটি ভাল হলে, সঠিক পরিচর্যা হলে ভাল ফলন আসবে আমাদের দেশের মাটিতে। ধীরে ধীরে বগুড়ায় কমলা চাষ বিস্তিৃত লাভ করছে। জেলা এ পর্যন্ত ২ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে চায়না কমলা বেশি।

তিনি বলেন, আব্দুল আজিজের বাগানের কমলা সম্পূর্ণ বিষ মুক্ত ও সুমিষ্ট। গাছের বয়স যতোই বাড়বে ফলের উৎপাদন বাড়বে। ফল আরো মিষ্টি হবে। এখানে সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন কিটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে না। আব্দুল আজিজ জানালেন, আগামীতে কমলা বাগান আরো সম্প্রসারিত করার ইচ্ছা আছে। দেশে কমলা চাষ বৃদ্ধি পেলে বিদেশ থেকে আমদানি কমে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এমনটি জানান তিনি।

এনসিএন/বিআর

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print