মে ১৯, ২০২৪ ৮:০১ পিএম

কোটি টাকার আধুনিক রাস্তায়

ইউনি ব্লকের কাজের নানা অনিয়মের অভিযোগ

নওগাঁর রাণীনগরে জনগণের সুবিধার্থে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ইউনি ব্লক দিয়ে আধুনিক মানের রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু সেই আধুনিক মানের রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ও যত্রতত্রভাবে অনিয়ম করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এতে উপজেলা এলজিইডি অফিসের যোগসাজস রয়েছে বলে মন্তব্য অনেকের। উপজেলার সদরের রেল স্টেশন এলাকা থেকে রাজাপুর গ্রাম হয়ে রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়ক পর্যন্ত এবং দক্ষিণ রাজাপুর মোড় থেকে মিনাপাড়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার কাজে এ অনিয়ম চলছে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, উপজেলা সদরের রেল স্টেশন এলাকা থেকে রাজাপুর গ্রাম হয়ে রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়ক পর্যন্ত ও দক্ষিণ রাজাপুর মোড় থেকে মিনাপাড়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পাকা রাস্তা বেহাল দশায় পরিণত হয়েছিল। এতে জনসাধারণ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন। এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে ওই দুই কিলোমিটার রাস্তা আধুনিক মানের করতে ইউনি ব্লকের রাস্তা নির্মাণের জন্য গত ২০২৩ সালের জুন মাসে টেন্ডার দেওয়া হয়। যার চুক্তি মূল্য ধরা হয় ১ কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ১৮৬ টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায় মেসার্স জেএস এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজের মেয়াদকাল ছিল একই বছরের শেষের দিকে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু এবং শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এরপর চলতি বছরের প্রথম দিকে রাস্তাটির পাকার কারপেটিং তুলে নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ইউনি ব্লক দিয়ে রাস্তার কাজ করছেন। তবে নির্মাণ কাজ চলা অবস্থায় দেখাশোনার জন্য উপজেলা এলজিইডি অফিসের কাউকে দেখা যায়নি। এতে নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখানে কথা হয় স্থানীয় রফিকুল ইসলাম, মোহন, হামিদুল, নাজমা, ডেইজিসহ অনেকের সাথে। তারা জানান, কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করছে। রাস্তার মাঝে মাঝে ভাঙা ইউনি ব্লক দিচ্ছেন। এরপর রাস্তায় ইউনি ব্লক দেওয়ার পর রাস্তার দুই সাইডে ফাঁকা রাখা হচ্ছে। সেখানে সামান্য পরিমান সিমেন্ট ও বালির পরিমান বেশি দিয়ে কোনো মতে দায়সারা কাজ করা হচ্ছে। ফলে হাতের আঙ্গুল দিয়ে আঁচর দিলেই উঠে যাচ্ছে। এছাড়া রেজিংয়ের দুইপাশে অনেক স্থানে মাটিও দেওয়া হয়নি। আমরা স্থানীয় লোকজন কাজের এসব অনিয়মের বিষয়ে বার বার ঠিকাদারের লোকজনকে বললেও তারা কোনো কর্নপাত না করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে উল্টো কাজ বন্ধ রেখে চলে যাওয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। আবার রাস্তার দুইপাশে কিছু কিছু রেজিং ব্লক, রাস্তার ইউনি ব্লকগুলো নিন্মমানের।

তাদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, সিমেন্ট দিচ্ছেনা, একদম বালু দিয়ে কাজ করছে। তাই আঙুল দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে আছে স্থানীয়দের বসবাসের বাড়ি। সেখানে কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায় রাস্তার রেজিং ব্লকগুলো অনেক উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রেজিং ব্লকগুলো দেখিয়ে দিয়ে তারা বলেন, মাটি দেওয়ার কথা থাকলেও, দেওয়া হচ্ছেনা মাটি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আবর্জনা দিয়ে সমান করে দিচ্ছে। কারণ আমাদের কারো কারো চলাচলের গাড়ি আছে। সেগুলো তুলতে বা নামাতে কষ্ট হবে। তাই নিজ থেকে বাড়ির ময়লা বা আবর্জনা দিয়ে সমান করে দিচ্ছি।

স্থানীয়ারা বলছেন, যেভাবে অনিয়ম করে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে ভারি যানবাহন চলাচল শুরু হলে রাস্তা বেশিদিন টিকসই হবে না। দ্রুত সঠিকভাবে নির্মাণ কাজ করতে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

রাস্তা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজের ঠিকাদার আব্দুস সালাম মুঠোফোনে বলেন, নির্মাণ কাজে কোনো অনিয়ম করা হচ্ছে না। সঠিকভাবে কাজ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. ইসমাইল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, সিডিউল মোতাবেক কাজ করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া আছে। তারপরও যদি কাজে কোনো অনিয়ম করে, তাহলে কাজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print