জুলাই ২৩, ২০২৫ ১০:০২ এএম

উপজেলা নেতাদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন সভাপতির চাঁদাবাজির পোস্ট; মাতাল আখ্যা দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ

নওগাঁর রাণীনগরে উপজেলা বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ইউনিয়ন বিএনপির এক সভাপতি। তার ফেসবুকে এমন পোস্ট নিয়ে চলছে আলোচনা। 

আর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও হেয় প্রতিপন্ন করার অভিযোগে বেদারুল ইসলাম নামের ইউনিয়ন বিএনপির ওই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে রাণীনগর উপজেলা বিএনপি।

১৯ জুলাই উপজেলা বিএনপির যৌথ স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে তাকে কারণ দর্শানোর এই নোটিশ দেওয়া হয়।

বেদারুল ইসলাম দুই নং কাশিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। এবং এনায়েতপুর এলাকার বাসিন্দা। আর যাদের নাম উল্লেখ করে ফেসবুকে চাঁদাবাজির পোস্ট করেন তারা হলেন, রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এছাহক আলী, সাধারণ সম্পাদক মোশারব হোসেন এবং আত্রাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু।

নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোসারব হোসেন।

এর আগে গত ১৭ ও ১৮ জুলাই Bedarul Islam নামের এক আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এছাহক আলী, সাধারণ সম্পাদক মোশারব ও রেজু শেখের নাম উল্লেখ করে চাঁদাবাজির দুটি পোস্ট করেন। একটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন আবাদপুকুর হাটের ২০ লাখ টাকা রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ মেরে খেয়েছে। আরেকটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন রাণীনগর ও আত্রাই যে সামান্য চাঁদাবাজি করছে তারা রাণীনগর বিএনপির সভাপতি এচাহক আলী, মোশারব ও রেজু শেখের ৫ পার্সেন্ট নেতাকর্মী। এছাড়া আরও অনেক কিছু উল্লেখ করা হয় Bedarul Islam নামের ওই আইডি থেকে।

এদিকে বেদারুল ইসলামকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, আপনি গত ১৭ জুলাই আপনার নিজ ফেসবুক আইডি থেকে যে পোস্ট দিয়েছেন যা দলের ভাবমূর্তি ভীষণ ভাবে ক্ষুন্ন এবং দলের নির্বাচিত রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এছাহক আলী, সাধারণ সম্পাদক মোসারব হোসেন ও ২০২০ সালের জাতীয় সংসদের উপ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ রেজাউল ইসলাম (রেজু) গণকে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে মিথ্যা অপপ্রচার করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। পাশাপাশি আপনি একটা ইউনিয়নের সভাপতি হয়ে কেন উপজেলা বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও শেখ রেজাউল ইসলাম (রেজু) গণকে চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং সোসাল মিডিয়ায় আপনার নিজ ফেসবুক আইডি থেকে গত ১৮ জুলাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোসারব হোসেন ২০ (কুড়ি) লক্ষ টাকা আবাদপুকুর হাট থেকে মেরে খেয়েছে বলে পোস্ট করেছেন। আপনি একটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হয়ে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় পড়ে আছেন, আপনি নারী কেলেংকারীতেও লিপ্ত আছেন-যা সোসাল মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। এগুলোর কারণে দলের ভাবমূর্তিও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে। এমনকি আপনার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আপনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন তার প্রমাণাদি আমাদের কাছে আছে। আপনি সোসাল মিডিয়ায় আপনার নিজস্ব আইডি থেকে যেগুলো পোস্ট করেছেন তার সুস্পষ্ট জবাব পত্র প্রাপ্তির ৭২ (বাহাত্তর) ঘন্টার মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট প্রমাণাদিসহ লিখিত জবাব প্রেরণ এবং স্ব শরীরে রাণীনগর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে সর্ব্বোচ্চ দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

জানতে চাইলে চাঁদাবাজির পোস্ট দেওয়ার কথা হোয়াটস অ্যাপ বার্তার মাধ্যমে স্বীকার করেন বেদারুল ইসলাম। তিনি ক্ষুদে বার্তায় বলেন, আমি বিএনপির কিছু কর্মীদের কার্যক্রম নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। আর আবাদপুকুর হাটের ২০লাখ টাকা নিয়ে পোস্ট করেছি তাই আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। চাঁদাবাজির কোন প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাট ওরা ডেকেছিলো যে দামে তার চেয়ে ২০ লাখ টাকা বেশী দিয়ে বিক্রি করেছে। যারা ডাকতে গিয়েছিলো তাদের সাথে নেগোসিয়েশন করে কাউকে ডাকতে দেয় নাই।

আর মাতাল ও নারী কেলেংকারীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার হার্ট এ্যাটাক এর ছবি দিয়ে আমাকে মাতাল প্রমান করতে চাইছে। আর ২০০৯/১০ সালের আমার কিছু মেয়ে বন্ধুদের সাথে ছবি দিয়ে আমার চরিত্র হরন করতে চাইছে। যে ছবি গুলো আমি আগেই ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। দু একটা ছবি বাদে। এছাড়া তখন আমি রাজনীতিতে যোগদানই করি নাই।

চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করে সাধারণ সম্পাদক মোসারব হোসেন বলেন, আমি যদি ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করতাম তাহলে আমরাই বহিষ্কার হয়ে যেতাম। কাজেই বেদারুলকে ৭২ ঘন্টা সময় দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে স্ব শরীর এসে জবাব দিতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন করে মাতাল হওয়া এবং নারী কেলেংকারীসহ আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ জানান, দলীয় ফোরাম বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এমন অভিযোগ ফেসবুকে প্রকাশ্যে আনা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তবে অন্যান্য অভিযোগগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে।”

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print