বর্তমানের ব্যস্ত জীবনধারায় মাথা যন্ত্রণার সমস্যাটা খুবই সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিসে কাজের চাপ, রাস্তার ট্রাফিক, দূষণ, ধুলাবালি, পারিবারিক অশান্তি, সারা দিনের ব্যস্ততা–এই সবকিছুই কোথাও গিয়ে দিনের শেষে ক্লান্তি তৈরি করে। আর ফলস্বরূপদেখা দেয় মাথার যন্ত্রণা, মাইগ্রেন। তা ছাড়া সাইনাস, ঠান্ডা লাগা কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও অনেক সময় তীব্রমাথা যন্ত্রণা হয়।
একবার মাথাব্যথা শুরু হলে সহজে থামতে চায় না; বরং ধীরে ধীরে তা চোখ, ঘাড়, কাঁধে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই সহ্য করতে নাপেরে পেইন কিলার খেয়ে নেন। কিন্তু এসব ওষুধের ঘনঘন ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। তাই মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতেআপনি এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। নির্দিষ্ট কয়েকটি এসেনশিয়াল অয়েল আছে, যেগুলো মাথাব্যথা থেকে স্বস্তিদিতে দারুণ কার্যকর। জেনে নিন, মাথাব্যথায় কোন কোন এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করবেন–
১) পিপারমিন্ট এসেনশিয়াল অয়েল
পিপারমিন্ট অয়েল মাথার যন্ত্রণা নিবারণ এবং মাইগ্রেনের চিকিৎসার জন্য দুর্দান্ত কার্যকর। এতে উপস্থিত মেন্থল পেশি শিথিলকরতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। নারকেল তেলের সঙ্গে পিপারমিন্ট অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
২) রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল
রোজমেরি অয়েলে শক্তিশালী অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি এবং ব্যথানাশক বৈশিষ্ট্য বর্তমান। স্ট্রেস কমানো, ব্যথা উপশম করারপাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতেও অত্যন্ত সহায়ক এই তেল। গবেষণায় দেখা গেছে, এই তেলের ব্যবহার অনিদ্রা কমাতেএবং পেশি রিল্যাক্স করতেও সহায়তা করে, যার ফলে মাথাব্যথা থেকে মুক্তি মেলে।
নারকেল তেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ম্যাসাজ করতে পারেন।
৩) ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল
ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল সাধারণত স্ট্রেস উপশম এবং রিল্যাক্সের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও এই তেল মাথার যন্ত্রণাএবং মাইগ্রেনের চিকিৎসায়ও দুর্দান্ত কার্যকর। ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েলের ঘ্রাণ নিলেও মাইগ্রেনের যন্ত্রণা কমতে পারে।
কোনো ক্যারিয়ার অয়েলের সঙ্গে ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করতে পারেন।
৪) ক্যামোমাইল এসেনশিয়াল অয়েল
ক্যামোমাইল এসেনশিয়াল অয়েল শরীরকে শিথিল করে এবং পেশিগুলো প্রশমিত করতে সহায়তা করে। স্ট্রেস বা টেনশনেরকারণে হওয়া মাথাব্যথা কমাতেও দুর্দান্ত সহায়ক এই তেল। তা ছাড়া এটি উদ্বেগ এবং অনিদ্রার চিকিৎসায়ও সহায়তা করে।
গোসলের পানি বা গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল এবং ক্যামোমাইল এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতেপারেন। তবে গর্ভবতী নারীদের ক্যামোমাইল অয়েল ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ, গর্ভাবস্থায় এই তেলের ব্যবহারগর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
৫) ইউক্যালিপটাস এসেনশিয়াল অয়েল
সাইনাসের কারণে হওয়া মাথা যন্ত্রণা দূর করতে ইউক্যালিপটাস এসেনশিয়াল অয়েল দুর্দান্ত কার্যকর। এই অয়েল ন্যাসালপ্যাসেজ খুলে দেয় এবং সাইনাস পরিষ্কার করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পিপারমিন্ট অয়েল, ইউক্যালিপটাস অয়েল এবং ইথানলের সংমিশ্রণ পেশি এবং মন উভয়কেই রিল্যাক্সকরতে সহায়তা করে। যার ফলে মাথার যন্ত্রণা দূর হয়।
ইউক্যালিপটাস অয়েলকে ক্যারিয়ার অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে বুকে লাগান। তা ছাড়া গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাসঅয়েল দিয়ে সেই বাষ্প বা স্টিম নিন।
এসেনশিয়াল অয়েলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারের ফলে অনেকেরই অ্যালার্জি, ত্বকে জ্বালা, লালচেভাব, ব়্যাশ হতে পারে। তাই যেকোনোএসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারের আগে অবশ্যই টেস্ট করে নিন। গর্ভবতী নারী এবং স্তন্যদানকারী নারীরা অবশ্যই চিকিৎসকেরপরামর্শ নিয়ে তবেই এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করুন। এ ছাড়া যাদের অ্যাজমা বা হার্টের সমস্যা আছে তাদের এসব তেলব্যবহারে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। তাই কোনো এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সূত্র: বোল্ডস্কাই।