ফুটবল ব্রাজিলিয়ানদের কাছে এতটাই ভালোবাসার যে ‘মারাকানোজ্জো’ বা ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে হারকে তাঁরা হিরোশিমা-নাগাসাকির মতো বিপর্যয় মনে করেন।
কিন্তু সেই ব্রাজিল বিশ্বকাপ শিরোপা ২০ বছর যাবৎ তাদের দখলে নিতে পারছে না। ২০০২ সালের ফাইনালে রোনালদো-রিভালদোদের উপহার দেওয়া জাদুকরী মুহূর্তের পর আর কখনো ফাইনালেই ওঠা হয়নি লাতিন দেশটির।
কিন্তু এবার কি হবে ফাইনালের মঞ্চে ওঠা? উত্তর টা সময় ভালো বলে দেবে। জানা যায়, শক্তিশালী এক দল নিয়েই এবার বিশ্বকাপ অভিযানে যাবে ব্রাজিল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কাতারে ‘হেক্সা’ বা ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে কেমন হবে ব্রাজিল কোচ তিতের কৌশল?
রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর কৌশলে বেশ পরিবর্তন আনেন অভিজ্ঞ এই কোচ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দলের অনেক কিছুই তিনি বদলে ফেলেন। দলকে প্রস্তুত করেন কাতারের জন্য। কাতারে কেমন হতে পারে তিতের সম্ভাব্য কৌশল, তা নিয়েই এই বিশ্লেষণ।
সাম্প্রতিক অতীতে নিজের কৌশলে স্থির থেকে তিতে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। ব্রাজিল দলে গত কয়েক বছরে ইউরোপিয়ান ফুটবলে আলো ছড়ানো বেশ কিছু নাম উঠে এসেছে।
তিতে চেষ্টা করেছেন প্রত্যেকের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা পরখ করে দেখতে। যেখানে তাঁর লক্ষ্য ছিল দলের একটি সমন্বিত ও ঐক্যবদ্ধ রূপ দাঁড় করানো।
তিতের দলকে খেলানোর ধরন মূলত নির্দিষ্ট একটি কাঠামোর ভেতরে নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় বিষয়ের সমাবেশ ঘটানো। ধরা যাক, কোনো একটা ম্যাচে ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলা শুরু করল দল। তবে খেলা চলাকালেই এটি ক্রমাগত বদলাতে থাকে।
কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলাপে যাওয়ার আগে দেখে নেওয়া যাক, কেমন হলো ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দল। গোলরক্ষক হিসেবে তিতের ১ নম্বর পছন্দ লিভারপুল তারকা আলিসন বেকার।
ব্যাকলাইনে দানিলো, থিয়াগো সিলভা, মার্কিনিওস ও অ্যালেক্স সান্দ্রো হবেন তিতের প্রথম পছন্দ। বিবেচনায় থাকতে পারেন অ্যালেক্স তেলেসও। মিডফিল্ডে দুই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা কাসেমিরো ও ফ্রেদের ওপর আস্থা রাখবেন তিতে। একটু সামনে থাকতে পারেন লুকাস পাকেতা।
দুই উইং ধরে ক্রমাগত চাপ তৈরি করে ব্রাজিলকে গোলের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও রাফিনিয়া। আর নেইমারের ভূমিকা থাকবে অনেকটা ফলস নাইনের। যিনি মূলত গোটা আক্রমণভাগের প্রাণ হিসেবে মাঠে থাকবেন।
দুই উইং থেকে আক্রমণের ঝড় তুলে ভিনি ও রাফিনিয়া তাঁর কাছে বল পাঠানোর কাজ করে যাবেন। গোল করার ক্ষেত্রে তিতে আরেকজন বড় অস্ত্র হতে পারেন রিচার্লিসনও।
এবারের ব্রাজিল দলটি তারকায় ঠাসা। তাই দলের প্রয়োজনে নিশ্চিতভাবে কিছু পরিবর্তন তিতে নিয়ে আসতে পারেন এবং শুরুর দিকে দেখা মিলতে পারে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও। তবে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে তুলনা করলে ব্রাজিলের এই দল যথেষ্ট সামর্থ্যবান এবং পরিপক্বও বটে।
সেলেসাওদের এবারের দল এতটাই পরিপূর্ণ যে রবার্তো ফিরমিনোর মতো ছন্দে থাকা খেলোয়াড়কে রেখে আসার বিলাসিতাও তিতে দেখাতে পেরেছেন।
যদি পরিসংখ্যান বিবেচনায় নেওয়া হয়, তবে দেখা যাবে, তারা বিশ্বকাপে খেলতে আসা অন্য দলগুলোর তুলনায় ম্যাচপ্রতি ৯৬.৯ শতাংশ বেশি গোল করে থাকে। ডি–বক্সে বল স্পর্শ করাকে হিসেব করলে সেটি দাঁড়ায় ৮৭.৮ শতাংশ। বল দখলের ক্ষেত্রে যেটি ৭২.৭ শতাংশের বেশি।
তবে আর্জেন্টিনার মতো ব্রাজিলেরও লং বলে খেলার প্রবণতা কম। কাতারে অবশ্য এই কৌশলকে লুকোনো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে দলটি। তবে সাধারণত মাঠে বেশির ভাগ সময় বলের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে জোন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে সামনে এগোনোর চেষ্টা করে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
২০২২ সালের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে ব্রাজিল প্রতি ৯০ মিনিটে গড়ে ৫২৪.১৩টি পাস খেলেছে, যার মাত্র ৫.৬১ শতাংশ হচ্ছে লং পাস। তবে প্রতি ৯০ মিনিটে সাইড পাসের হার যেখানে ২১৫টি, সেখানে ফরোয়ার্ড বা সামনের দিকের পাসের ক্ষেত্রে সেটি ১৪২.৬৩।
সূত্রঃ প্রথম আলো
এনসিএন/বিআর