বগুড়ায় এক আসামীকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে ঘুষ নেয়ার পর আবার সেই টাকা ফেরত দেয়ার এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে উপশহর ফাঁড়িতে। ঘটনায় অভিযুক্ত সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) সোহাগ ফকিরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। প্রশাসনের অভ্যন্তরে এখন বিষয়টি আলোচনায়।
গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) শুক্রবার রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে বগুড়া সদর থানার উপশহর এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে এক মারামারির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় গাবতলী উপজেলার হোসেনপুর এলাকার ফিরোজ হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান (২২) কে পুলিশ গ্রেফতার করে।
পরদিন ১১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০ সময় থানার ভেতরে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। গ্রেফতার হওয়া যুবকের পরিবার দাবি করেছে— উপশহর ফাঁড়ির এসআই সোহাগ ফকির মেহেদীকে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের কাছ থেকে ঘুষ নেন।
গ্রেফতারকৃত মেহেদীর বাবা ফিরোজ হোসেন বলেন, “আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে ধরেছে পুলিশ। পরে সাব-ইন্সপেক্টর সোহাগ ফকির বলেন, ৫০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেবো। অনেক অনুরোধের পর তিনি ৩০ হাজারে রাজি হন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে থানার ভেতরে মোটরসাইকেল রাখার গ্যারেজে আমি তাকে ১৫ হাজার টাকা দিই। তিনি বলেন, ‘১৫১ ধারায় তাকে আদালতে পাঠানো হবে, আজই আদালত থেকে জামিন নিয়ে নেন।’ কিন্তু দুপুরে তিনি সেই টাকা আবার ফেরত দেন এবং আমার ছেলেকে ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় চালান দেন।”
ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার এই ঘটনাই এখন প্রশ্ন তুলেছে— কেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথমে অর্থ দাবি করলেন, পরে ফেরত দিলেন?
আসামী মেহেদী হাসান বলেন, “আমি মারামারিতে অংশ নিইনি। বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিলাম। স্থানীয়রা ভুল বুঝে আমাকে আটকায়। পরে পুলিশ অন্যায়ভাবে আমাকে মামলায় জড়ায়।”
অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই সোহাগ ফকির বলেন, “ঘুষ নেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। প্রথমে ১৫১ ধারায় চালান করার কথা ছিল। পরে ভুক্তভোগীরা মামলা করলে আদালতের মাধ্যমে আসামীকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।”
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান বাশির বলেন, “ঘুষ নেয়া একটি গুরুতর অপরাধ। ঘুষ নেয়া বা ফেরত দেয়ার কোনো তথ্য আমার জানা নেই। বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে, সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
থানার ভেতরে এমন আর্থিক লেনদেনের বিষয় সাধারণত “অফ রেকর্ড” থেকে যায়। স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রায়ই মামলা-মোকদ্দমায় পুলিশি ‘সহায়তা’ পেতে অভিযুক্তদের পরিবার এমন অনানুষ্ঠানিক অর্থ লেনদেন করে থাকে। তবে টাকা ফেরত দেয়ার ঘটনা খুবই বিরল।
স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, “সম্ভবত ঘটনাটি কারও নজরে পড়ে গেছে। তাই চাপের মুখে এসআই টাকা ফেরত দিয়েছেন।”
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বিষয়টি শুধু ঘুষ নয়— এটি পুলিশের নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের প্রশ্ন। তাদের দাবি, দ্রুত বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পূর্ণ সত্য উদঘাটন করা প্রয়োজন।
ঘুষ নেয়া যেমন অপরাধ, তেমনি ঘুষ ফেরত দেয়াও দায়মুক্তি নয়। কারণ, এই লেনদেন প্রমাণ করে— সিস্টেমের কোথাও এখনও দুর্নীতির শিকড় রয়ে গেছে। বগুড়া সদর থানার এই ঘটনাটি তাই শুধু একটি ঘুষের গল্প নয়, বরং পুলিশের জবাবদিহিতা ও সুশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাও বটে।