নওগাঁয় মাদরাসা ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে এক জামায়াত নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সাথে তাকে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদের দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া বাতিল করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াই টার দিকে জানার জন্য এই প্রতিবেদক জেলা জামায়াতের আমিরের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আ.স.ম সায়েম এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
তবে এদিন দুপুরে এই তথ্যটি এক গণমাধ্যমকর্মীকে নিশ্চিত করেছেন জেলা জামায়াতের আমির খ. মো. আ. রাকিব।
বহিস্কৃত ওই নেতার নাম মাওলানা মোনায়েম হোসাইন। তিনি সদর উপজেলা জামায়াতের আমির এবং উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত ছিলেন।
গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে আয়োজিত এক জরুরী বৈঠকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে নৈতিক স্ফলনজনিত কারণে তাকে বহিষ্কার করে জেলা জামায়াতে ইসলামী।
নওগাঁ জেলা জামায়াতের আমির খ. মো. আ. রাকিব গণমাধ্যমকর্মীকে বলেন, মোনায়েন হোসাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ওঠার পরপরই ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এ কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যেখানে মোনায়েম হোসাইনের নৈতিকস্ফলন হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তদন্তে এনায়েতপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টিও উঠে এসেছে। এখন ওইসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। এখন থেকে মোনায়েম হোসাইনের সঙ্গে জামায়াতের কোন সম্পর্ক নেই।
এর আগে রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) “জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে মাদরাসাছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ” শিরোনামে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হয় একাধিক গণমাধ্যমে।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে নওগাঁয় মাদরাসা ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরা হয় এনায়েতপুর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ও সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোনায়েম হোসাইনের বিরুদ্ধে।
উল্লেখ, অভিযোগ উঠে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই মাদরাসায় দশম শ্রেণিতে ক্লাস নিতে গিয়ে এক ছাত্রীকে একা পেয়ে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় স্পর্শ করেন মাওলানা মোনায়েম হোসাইন। পরবর্তী সময়ে ওই ছাত্রীকে আবারও একা পেয়ে জোরপূর্বক চুম্বন করেন তিনি।
এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা তার পোস্টার সম্বলিত ছবিতে জুতার মালা পরিয়ে প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ে এ ঘটনার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রকাশিত ওই নিউজে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর বৃষ্টির দিন দুপুরে শ্রেণিকক্ষে একা ছিলেন তিনি। ওইসময়ে সেখানে ক্লাস নিতে এসে মাওলানা মোনায়েম হোসাইন তাকে বোরকার হিজাব খুলতে বলেন। এক পর্যায়ে বাধা দিলেও তিনি শোনেননি। পরে তিনি শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় স্পর্শ করেন। আরেকদিন একা পেয়ে জোরপূর্বক চুম্বন করেন তিনি।
পরে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী এ ঘটনা সহপাঠীদের জানালে একইভাবে আরও বেশ কয়েকজন যৌন হয়রানির শিকার বলে জানান। পরে ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। ২২ সেপ্টেম্বর এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত মোনায়েম হোসাইনকে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি করেন ওই মাদরাসার আরেক শিক্ষক সালেক রহমান। সেখানে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের কোনো সদুত্তর দিতে দেখা যায়নি অভিযুক্ত মোনায়েম হোসাইনকে।