মে ৪, ২০২৪ ২:৫৪ এএম

জনতা ব্যাংকের শাখা হঠাৎ স্থানান্তরের অভিযোগ; পুনরায় ফিরিয়ে আনার দাবী 

গ্রাহকদের জানানোর জন্য টাঙানো হয়নি কোনো নোটিশ, দেওয়া হয়নি পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞাপন। মানা হয়নি ভাড়াটিয়া বাসার মালিকের সাথে ডিডের চুক্তি। অথচ মাত্র দুই দিন আগে একটা নোটিশ ধরিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ব মালিকাধীন জনতা ব্যাংকের একটি শাখার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। আর বিষয়টি জানাজানি হলে ফুঁসে উঠে এলাকার সাধারণ জনগণ ও গ্রাহকরা। প্রতিকার চেয়ে শুক্রবার ১৯ এপ্রিল মানববন্ধনও করেছেন তারা। আজ শনিবার ২০ এপ্রিল সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ জনতা ব্যাংকের ওই শাখার কাছে মানববন্ধনের ব্যানার হাতে মানুষের জটলা। 

ঘটনাটি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পাঁঠাকাটা হাট নামক স্থানে। জনতা ব্যাংকের পাঁঠাকাটা হাট শাখাটি পূর্ব নোটিশ ছাড়াই স্থানান্তর করা হয়েছে। ফলে পাঁঠাকাটা হাটের রাষ্ট্রায়ত্ব মালিকাধীন জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের চক্রান্তে ব্যাংকটি স্থানান্তরের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শাখাটি পুনরায় ফিরিয়ে আনার দাবীতে শুক্রবার বিকালে মানববন্ধন করেছেন সহ-শতাধিক সাধারণ মানুষ ও গ্রাহক।

পাঁঠাকাটা বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন ও নজরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, ব্যাংকের এই শাখাটি মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের জন্য লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মো. মোখলেছুর রহমানের নোংরা চক্রান্তে পূর্ব নোটিশ ছাড়াই উক্ত শাখার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও কম্পিউটার নিয়ে পালিয়ে যায় ওই ব্যাংকে কর্মরতরা।

বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহম্মেদ ও স্থানীয় ব্যবসায়ী সামছুল হক বলেন, মহাদেবপুর উপজেলার ঐতিবাহী পাঠাকাটা বাজারে প্রায় ৪৫ বছর ধরে পাট্টাকাটা শাখায় জনতা ব্যাংকটি ছিল। কিন্তু নোটিশের মাধ্যমে না জানিয়ে হঠাৎ রাতের আঁধারে মান্দা উপজেলায় সতিহাটে চলে যায়।

বাসার মালিক মোছাঃ নুরজাহান বেগম বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছর ধরে আমার বাসার জনতা ব্যাংকটি বাড়ায় ছিল। বাসা ভাড়ায় ডিডের মেয়াদ থাকা অবস্থায় গত ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বাংকটি অন্যত্র চলে যায়। তার আগে সন্ধ্যায় ঈদ বোনাস আসছে বলে আমার কাছ থেকে সই (স্বাক্ষর) নেয়। আমি লেখাপড়া জানি না, তাই কি সই নিয়েছে তাও বলতে পারবো না। আমি একজন অসহায় মহিলা, এখান থেকে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। ব্যাংকটি ফিরে আসলে আমার অনেক উপকারে আসবে। আমি চাই ব্যাংকটি ফিরে আসুক এবং জনগণও সেটাই চায়।

মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ ময়নুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, কাউকে কিছু না বলে, এমনকি ওই বিল্ডিং এর মালিক এক বৃদ্ধা মহিলাকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঈদ বোনাসের কথা বলে তাকে চলতি মাসের গত ৯ তারিখের একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়। কাগজটি অন্য একজনকে দেখাতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর এলাকার হাজার হাজার গ্রাহক ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। এই ব্যাংকটি চলে গেলে অনেক গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়বে। হাটের ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাবে। আর এই সকল পাঁয়তারার মূলে ওই ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. মোখলেছুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান এমপি সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী এই পাঁঠাকাটা হাটকে আবার পূর্বের ঐহিত্যে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলাকাবাসীর কথা ভেবে হাট সংলগ্ন আত্রাই নদীতে একটি ব্রিজ স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়েছেন। এই ব্রিজটি পূর্ণাঙ্গ রুপ পেলে এই হাটের জৌলুস ফিরে আসবে। এবং আমি মনে করি এই ব্যাংকের কার্যক্রম পুরোদমে চলবে। সেই সাথে ব্যাংক এখান থেকে আয় করতে পারবে বলেও আমি আশা করছি। তাই জনগণের কথা চিন্তা করে ব্যাংকটি এই হাটেই রাখা হোক।

সকল অভিযোগের বিষয়ে এই প্রতিবেদক মুঠোফোনে জানতে চাইলে শাখা ব্যবস্থাপক মো. মোখলেছুর রহমান এব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন। তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে বলেন।

ঈদ শুভেচ্ছা দিয়ে বাড়ির মালিকের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জনতা ব্যাংকের ডিজিএম বশির আহম্মদ মুঠোফোনে বলেন, আমার শাখা ব্যবস্থাপককে বলা ছিল আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নোটিশটা দেওয়ার জন্য। বিষয়টি ওরকম না। আর ব্যাংকের নিরাপত্তা ও লোকসানের জন্য আমরা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি। জনগণকে জানানোর জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নোটিশ টাঙানো হয়েছিল, তারা ছিঁড়ে ফেলেছে। এছাড়া আগামী দু-একদিনের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। তবে তিনি পজিটিভ ভাবে বিষয়টি দেখতে বলেন।

সাধারণ জনগণের মানববন্ধনের বিষয়টি জানেন জানিয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কামরুল হাসান (সোহাগ) মুঠোফোনে বলেন, যেহেতু জনগণের বিষয়, তাই স্থানীয়ভাবে কোনো রিঅ্যাকশন যাতে না হয় সেই জন্য ব্যাংকের ম্যানেজার, ডিজিএমসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এবং আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি।

জানতে চাইলে নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেন বলেন, এলাকাবাসীর কাছে আমার প্রতিশ্রæতি ছিল, ঐতিহ্যবাহী পাঁঠাকাটা হাট সংলগ্ন আত্রাই নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণের। সেই প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ৩৫০ মিটারের একটি ব্রিজ বাস্তবায়নের পথে। যেটার সুবিধা অল্পদিনের মধ্যে মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার কয়েক হাজার জনগণ ভোগ করবে। তাই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের সুবিধার্থে জনতা ব্যাংকের শাখাটি ঐতিহ্যবাহী ওই হাটেই থাকুক এমনটিই আমার চাওয়া।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print