বগুড়ায় জোড়া খুনের ঘটনায় জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও শ্রমিক নেতাসহ ২৮জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগতরাতে বগুড়া সদর থানায় এ মামলা রেকর্ড করা হয়। এ ঘটনায় মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নিশিন্দারা খাঁপাড়া এলাকার শেখ সৌরভ (২৬), নিশিন্দারা পূর্বপাড়া এলাকার নাঈম হোসেন (২৮) এবং সুলতানগঞ্জপাড়ার আজবিন রিফাত (১৯)।
রাত দুইটার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ।
ঈদের দিন রাতে শহরের নিশিন্দারা চকরপাড়া এলাকার দুই যুবক মোহাম্মদ শরীফ এবং শরীফের মামাতো ভাই মোহাম্মদ রোমানকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। শরীফ পেশায় এলপি গ্যাসের ব্যবসায়ী এবং রোমান শহরের সাতমাথায় ফুটপাতে ভ্যানে করে কাপড়ের ব্যবসা করত।
বগুড়া সদর থানায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু। এরপরেই রয়েছেন মিঠুর ছোট ভাই বগুড়া শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ সার্জিল আহম্মেদ টিপু, টিপুর ভায়রা ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শাহ মেহেদী হাসান, শেখ সৌরভ, নাঈম হোসেন এবং আজমিন রিফাতসহ ১৩জন নামীয় এবং ১৫জনকে অজ্ঞাত করে মোট ২৮জনের বিরুদ্ধে মামলা করে নিহত শরীফের মা হেনা বেগম।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত শরীফের মামাতো ভাই আবদুর রহিমের বলেন, ঈদের দিন বিকালে গোয়ালগাড়ি এলাকায় সরু সড়কের পাশে সৈয়দ সার্জল আহম্মেদ টিপুর গাড়ী দাঁড় করানো ছিল।
এমন সময় রোমান মোটরসাইকেল নিয়ে চকরপাড়া ফিরছিলেন। রাস্তা পার হতে অসুবিধে হওয়ায় টিপুর গাড়ীচালকের সাথে রোমানের বাকবিতণ্ডা হয়।
বিতণ্ডার জেরে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোটরশ্রমিক নেতা সৈয়দ কবির আহম্মেদ, তাঁর ভাই সৈয়দ সার্জিল আহম্মেদ, সার্জিলের ভায়রা ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শাহ মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন চকরপাড়া এলাকায় আসে। এসে রোমানকে তারা খুজতে থাকে। পরে রোমান শরীফকে ডেকে নেয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে রোমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রতিবাদ করলে শরীফকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তারা গুলি ছুড়ে ঘটনাস্থল ছাড়েন তাঁরা। গুলিতে হোসেন নামের শরীফের এক বন্ধু আহত হন।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, ঈদের বিকালে গোয়ালগাড়ি এলাকায় সড়কের পাশে একটি গাড়িতে বসে ছিলেন সৈয়দ সার্জিল আহমেদ টিপুর মেয়ে পুনম (২২) এবং গাড়ি চালাচ্ছিলেন টিপুর বড় ভাই পিটুর ছেলে তৌহিদ (১৭)। এমন সময় রোমান মোটরসাইকেল নিয়ে চকরপাড়া ফিরছিলেন। রাস্তা পার হতে অসুবিধা হওয়ায় গাড়ীচালক তৌহিদের সাথে রোমানের বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল চালক রোমান ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ির গ্লাসে সজোরে আঘাত করতে থাকে। এসময় গোয়ালগাড়িতে অবস্থিত বড় চাচা পিটুর বাড়িতে গাড়িসহ তৌহিদ ও পুনম আশ্রয় নেয়। এরপর পুনম তার বাবা টিপুকে ফোন দিলে ঘটনাস্থলে টিপু এসে তার মেয়ে এবং তৌহিদকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
বগুড়া সদর থানার ওসি সাইয়ান ওলিউল্লাহ বলেন, বগুড়ার নিশিন্দারা এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনায় ১৩জন নামীয় এবং অজ্ঞাত ১৪/১৫জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার বাদী নিহত শরীফের মা হেনা বেগম। এ ঘটনায় মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।