মে ১৮, ২০২৪ ৭:৪৪ পিএম

ঠাকুরগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জমে উঠেছে ভোটের মাঠ, ইউএনওকে বদলীর দাবি

ভোটের আর মাত্র ক’দিন বাকি। পোস্টার ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকাগুলো। শেষ মুহূর্তে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁও দুই উপজেলা (বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর) পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করছেন তাঁরা। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তাঁরা শহরের উন্নয়নসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ অন্য দলের নেতারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণায় নেই।

প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি আক্রমণাত্মক বক্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। আর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র বদলী চেয়ে জেলা রিটার্নিক অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩জন চেয়ারম্যান পদে, ২জন ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এর মধ্যে চার জনেই ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলামের নিকটতম আত্নীয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য সফিকুল ইসলাম বর্তমান সংসদ সদস্যের চাচা। আর মোহাম্মদ আলীর ছোট ছেলে উপজেলা যুবলীগের সদস্য আলী আফসার চাচাতো ভাই এবং উপজেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক সিমা আক্তার সুমনা ফুফাতো বোন। একই পরিবারের ৩ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন ভোটাররা।

গত ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় এক নির্বাচনী জনসভায় চেয়ারম্যান প্রার্থী সফিকুল ইসলাম ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানকে ভোট দিলে এমপি ফ্রি। ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে যেভাবে সবাই একত্রিত হয়ে মাজহারুল ইসলামকে ভোট দিয়েছেন তেমনিভাবে আনারস মার্কায় আনাকে ভোট দিবেন। সাবেক এমপি দবিরুল ইসলাম, তার ছেলে মাজহারুল ইসলাম সুজন ও সফিকুল ইসলাম আমরা এক।

অপরদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলামের কথা মতো বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ইউএনও আফসানা কাউসার নির্বাচনী কাজে বাঁধা সৃষ্টি করছে। সমর্থক ও কর্মীদের নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি প্রয়োগ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শফিকুল ইসলামের পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী মোহাম্মদ আলী। এই ইউএনও’র অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে তাঁর বদলি চেয়ে জেলা রিটানিং ও নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে, ভোট গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসায় হরিপুর উপজেলাতেও জমে উঠেছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিততে বাড়াতে প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, প্রচারপত্র বিতরণ, গণসংযোগসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। এছাড়া বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে নির্বাচনী গান পরিবেশন ও মাইকিং করছেন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা।

৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ও ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হরিপুর উপজেলা। আগামী বুধবার (৮ মে) ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে এই দুটি উপজেলায় ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

ভোটাররা মনে করছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মূল লড়াই হবে “মোটরসাইকেল প্রতীকের মোহাম্মদ আলীর সাথে আনারস প্রতীকের সফিকুল ইসলামের”। অপরদিকে হরিপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মূল লড়াই হবে মোটরসাইকেল প্রতীকের আব্দুল কাইয়ুম পুষ্পের সাথে কাপ-পিরিচ প্রতীকের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান মুকুলের।

জেলা নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্য মতে- দুটি উপজেলায় মোট ৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ৬ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়বেন। এছাড়া বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোন প্রতিদ্বন্দীতা না থাকায় তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। দুটি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৮১ হাজার ৩৬০জন। এর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৮৬৩ জন ও হরিপুর উপজেলায় ১ লক্ষ ২০ হাজার ৪৯৭জন। দুটি উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯০টি এবং ভোট কক্ষের সংখ্যা ৮০৮টি।

এদিকে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠ রাখতে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার মঞ্জুরুল হাসান।

তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিস্থিতি যেভাবে ভাল থাকে সে অনুযায়ী আইনশৃংখলা বাহিনী কাজ করবে। প্রশাসন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print