ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৩:১২ অপরাহ্ণ

ডিলার ছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি; লাভের টাকা কার পকেটে?

নওগাঁর বদলগাছীতে ডিলার ছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল উপকারভোগী পরিবারের কাছে বিতরণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি রেটের চেয়ে কেজি প্রতি দুই টাকা করে বেশি নেওয়া হয়েছে। ডিলার না থাকায় উপজেলার আটটি ইউপি সচিবদের (ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা) ডিলার সাজিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ওই চালগুলো বিক্রি করা হয়েছে। ফলে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটিসহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে চাল বিক্রির লাভের টাকা যাবে কার পকেটে? তবে সচিবরা বলছেন উপকারভোগীদের কাছে চাল বিক্রি করতে বিভিন্ন খাতে টাকা খরচ হয়েছে। তাই লাভের টাকা থেকে খরচ বাদ দিয়ে বাঁকী টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে। উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশের পটভ‚মি পরিবর্তন হলে পুরাতন ডিলারদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮অক্টোবর পুরাতন ডিলার অপসারণ করে ১৬অক্টোবর নতুন ডিলার নিয়োগ আহবান করা হয়। এতে আটটি ইউনিয়নের মোট ৬৬জন ডিলার প্রার্থী আবেদন জমা দেন। দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস যাচাই-বাছাই করে গত ১২ই নভেম্বর ১৫জন নতুন ডিলারের তালিকা প্রকাশ করে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটি। এদিকে ১৪ই নভেম্বর অভিযোগ হলে আবারও ১৮ই নভেম্বর নতুন ডিলার স্থগিত করে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটি। ফলে উপজেলার ৭হাজার ৭শত ৫৫জন উপকারভোগী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় দুই মাস ধরে চাল না পেয়ে চরম বেকায়দায় পড়ে। উপকারভোগীদের কথা চিন্তা করে গত ১৯শে নভেম্বর (মঙ্গলবার) নিয়মনীতি মেনে নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার চাল বিতরণের ব্যপারে খাদ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর একটি পরিপত্র জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এমন নির্দেশনা পেয়ে জেলা খাদ্য অফিসের নির্দেশনায় উপজেলা কমিটির সহায়তায় ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং ইউনিয়ন পরিষদের সচিবগণ ১৩ টাকা কেজি হিসেবে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে চাল উত্তোলন করার পর উপকারভোগীদের কাছে কেজিপ্রতি দুই টাকা বেশি নিয়ে ১৫টাকা দরে চাল বিক্রি করেন। আর এতেই লাভের অতিরিক্ত দুই টাকা নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন “ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির কথা থাকলেও” তা না করে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কে ডিলার বানিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করছে। বিক্রির লাভের টাকা কার পকেটে যাবে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী ডিলার নিয়োগ করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির কথা। কিন্তু তা না করে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাবরিনা মোস্তারী ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের ডিলার বানিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির লাভের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। ইউনিয়ন পরিষদের যেকোন কাজ করার দাায়িত্ব তাদেরই। সুতরাং চাল বিক্রির পুরো লাভের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করার আহবান জানান তারা।

গত ২৬শে নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে ২ ডিসেম্বর সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আটটি ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে দেখা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, সচিব, এবং গ্রাম পুলিশ মিলে মোট ৭ হজার ৭শত ৫৫ জন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগী পরিবারের কাছে কেজি প্রতি ২ টাকা বেশী লাভে একসাথে অক্টোবর-নভেম্বর দুই মাসের চাল বিক্রি করেছেন। এতে লাভ হয় ৯ লক্ষ ৩০ হাজার ৬ শত ৩০ টকা। তবে চাল বিক্রির পুরো লাভের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না করে নিজেদের পকেটে রেখেছে। ফলে এই টাকা হরিলুট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে সদর ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো: আব্দুস সালাম বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার হাওলাত করে ব্যাংকে টাকা জমা করি। পরে চাল উত্তলোন করে উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করছি। চাল বিক্রি করতে অনেক শ্রমিক খরচ হয়েছে। বিক্রির সময় শ্রমিক হিসাবে কারা উপস্থিত ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রাম পুলিশ, সদস্য এবং চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে চাল বিতরণের কাজ করেছে। খরচ বাদ দিয়ে বাঁকী টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।

উপজেলার মেহরাব সাঈদ, নাহিদ আখতার, আঞ্জুমানআরাসহ একাধিক ইউপির সচিবগণ জানান, আমাদেরকে চাল পৌঁছে দিয়েছে ও চাল বিতরণ করতে বলা হয়েছে আমরা করেছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কত টাকা ট্রেজারির মাধ্যমে জমা দিয়েছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, ব্যাংকে কে টাকা জমা করেছে বলতে পারবো না। তবে ইউএনও স্যার এবং উপজেলা ফুড অফিসের নির্দেশনায় চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাল বিক্রির লাভের টাকা কোখায় যাবে তা জানি না। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় চাল বিতরণ করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোসা. সাবরিনা মোস্তারী জানান, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্যারের দিক নির্দেশনায় ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী চাল বিক্রি করছেন সচিবরা। লাভের ৭০ শতাংশ টাকা রেখে বাঁকী টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।

খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণ ও লাভের টাকার ব্যপারে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান জানান, এ বিষয়ে জেলা এবং উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। তবে আমার জানা মতে ৭০ শতাংশ টাকা খরচ হবে। ৩০ শতাংশ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. ফরহাদ খন্দকার জানান, যারা চাল বিক্রি করছেন তারাই লাভের টাকা পাবেন। অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ লাভের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। আর ৭০ শতাংশ টাকা যারা চাল বিক্রি করছেন তারা খরচ করবেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এরকম কোন আদেশ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print