আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তা ভোগ দখলের অভিযোগে দুর্নীতির মামলার আসামী হলেন সাবেক সংসদ সদস্য মো: রেজাউল করিম বাবলু (৬১) ও তার স্ত্রী মো: বিউটি খাতুন (৫৩)। সোমবার (২৫ মার্চ) দুর্নীতি দমন কমিশন বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো: জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলা করেন।
আসামী মো: রেজাউল করিম বাবলু বগুড়া গাবতলী- শাজাহানপুর ৭ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা পাচ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান কোন ভোটেই লড়াইয়ে জয়ী হননি বাবলু। অবশেষে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদে খালেদা জিয়া ও অন্য এক প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতি হলে এক লাফে পেলেন সতন্ত্র এমপি পদ।পরে বিএনপির সমর্থনেই বসলেন সংসদের চেয়ারে। আর তারপরেই ঘুরতে শুরু করলো ভাগ্যের চাকা। এমপি বাবলুর আরেক নাম শওকত আলী গুলবাগী।
অভিযোগ ওঠে ২০২২ সালে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদে পিস্তল উচিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নুকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। অবশ্য প্রকাশ্যে পিস্তল উচিয়ে দেখানোর এমন কান্ড প্রায়ই করেন বাবলু।
২০২৩ সালে দুদক বগুড়া কার্যালয় তার সম্পদ বিবরনীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে। অতপর এ বছরে তার তদন্ত শেষ করে মামলা দায়ের করে দুদক বগুড়া কার্যালয়। মামলার বিবরনীতে উল্লেখ করা হয়, আসামী মো: রেজাউল করিম বাবলু (৬১) ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ৪৭৮ টাকা আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তা ভোগ দখল করেন এবং তার স্ত্রী ১ কোটি পাচ লাখ ১০ হাজার ২৯৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুদকের করা মামলার বিবরনীতে আরো দেখা যায়, আসামী বাবলু তার স্থাবর অস্থাবর সম্পদ বিবরনীতে উল্লেখ করেন তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৩১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকা। কিন্ত দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায় আসামী বাবলুর মোট সম্পদ ও আয় দ্বাড়ায় ৭২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৯ টাকা এবং তার ব্যায় দ্বাড়ায় ৩৫ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮০ টাকা। আয় থেকে মোট ব্যায় বাদ দিয়ে নীট আয় দ্বাড়ায় ৩৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯৯ টাকা। অন্যদিকে তার মোট সম্পদ থেকে দেনা বাদ দিলে তার পরিমাণ দ্বাড়ায় ১ কোটি ১২ লাখ ২৯ হাজার ১৭৭ টাকা। এক্ষেত্রে আসামী বাবলুর নিজ নামে আয় বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ দ্বাড়ায় ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ৪৭৮ টাকা। যা তিনি তার নিজ দখলে রেখে ভোগ করেন।
অন্যদিকে তার স্ত্রী মো: বিউটি খাতুন (৫৩) তার সম্পদ বিবরনীতে উল্লেখ করেন তার স্থাবর অস্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ১ কোটি ৪২ লাখ ৬ হাজার ২৯৩ টাকা। কিন্ত দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায় তার মোট সম্পদ ও আয়ের পরিমাণ দ্বাড়ায় ২৫ লাখ টাকা। যার বিপরীতে পারিবারিক খরচ ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা বাদ দিলে নীট আয় হয় ২১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে মোছা: বিউটি বেগমের আয় বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ দ্বাড়ায় ১ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ২৯৩ টাকা।
আসামী মো: রেজাউল করিম বাবলু ও তার স্ত্রী মোছা: বিউটি খাতুন উভয়েই আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করায় দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
অভিযোগ আছে প্রকল্পের ফাইলে টাকা ছাড়া ছাড় করেন না এমপি বাবলু। মসজিদ মন্দির ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কোনটিই ছাড় দেননি বাবলু। এমনকি এমপি হওয়ার পর নিজের বাড়ির সামনের সড়কের নামকরণ করেন ‘এমপি রোড’।
একসময়ের ভাঙা মোটরসাইকেল চালাতেন বাবলু আর এখন চলেন বিলাসবহুল নিজস্ব এসইউভি গাড়িতে। এমপি হওয়ার পরপরই একটি ‘নোহা হাইব্রিড’ মডেলের গাড়ি কেনেন বাবলু। এরপর নিশান ব্রান্ডের ফোর হুইলার এসইউভি কেনেন তিনি। এছাড়া এমপি হিসেবে বিশেষ সুবিধায় শুল্ক মুক্ত ল্যান্ড ক্রুজার কেনেন।
শাজাহানপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছোট বেলা থেকেই প্রতারণায় হাতে খরি বাবলুর। ছাত্র জীবনে গোহাইল এলাকায় এক বাড়িতে গৃহশিক্ষক থাকা কালে জাল টাকার কারবার করতেন বাবলু। সেসময় যন্ত্রপাতিসহ হাতে নাতে ধরা পরে পুলিশের কাছে। নির্বাচনী হলফনামায় প্রতারণার মামলা গোপণ করেন। ২০০৭ সালে করা এই মামলার বাদী শাজাহানপুরের গোয়াল গাছা গ্রামের আবু হায়াৎ। শিক্ষকতার চাকরি দেয়ার নামে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা গায়েব করে দেন বাবলু। আদালতে ৪০২/৪২০ ধারায় অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগে বাবলু ওরফে গুলবাগীকে পলাতক দেখানো হয়। মামলাটি আদালতে এখনো চলমান।
এসকল অভিযোগ ও মামলার বিষয় জানতে চেয়ে মো: রেজাউল করিম বাবলুর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে একাধিকবার ফোনকল করেও তার উত্তর মেলেনি।