মে ১৫, ২০২৪ ৭:১৩ এএম

দ্বিতীয় বার ডেঙ্গুর আক্রমণ ভয়ংকর

ডেঙ্গু যেন এবার বেশি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশির ভাগ রোগীই এবার দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু কেন ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে এমন ভয়ানক আকার ধারণ করে?

ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন রয়েছে। যেকোনো একটি ধরন দ্বারা কেউ আক্রান্ত হলে আজীবনের জন্য সেই ধরনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠে। ফলে ওই ব্যক্তি সেই ধরনের ডেঙ্গু দ্বারা আর কোনো দিন আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু বাকি তিনটি ধরন দ্বারা ব্যক্তিটি যেকোনো সময় আবার আক্রান্ত হতে পারেন। আর তখনই তা হয়ে দাঁড়ায় বিপদের কারণ।

দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তীব্র ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা ১৫ গুণ বেড়ে যায়। আগে তীব্র ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতো শিশু-কিশোরেরা। বর্তমানে এ ধারা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এখন ১৫ থেকে ৪০ বছরের বয়সী ব্যক্তিরা তীব্র ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হচ্ছে তীব্র মাত্রার ডেঙ্গুতে। কেন দ্বিতীয় আক্রমণ মারাত্মক?

দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত হলে শরীরের কোষে কোষে অনেক ভাইরাস অনুপ্রবেশ করে। আমাদের দেহ এসব ভাইরাসের বিরুদ্ধে তখন প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা তথা ইমিউনতন্ত্রের যুদ্ধংদেহী আচরণের কারণে মানবশরীরে শুরু হয় বিষম বিপর্যয়। রক্তজালিকা হয়ে পড়ে ছিদ্রযুক্ত। কখনো–সখনো এসব রক্তজালিকার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। অনেক অঙ্গ হয়ে পড়ে বিকল। একে বলা হয় মাল্টি অর্গান ফেইলিউর। লিভার, কিডনি, ফুসফুস, এমনকি হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত বিকল হয়ে পড়তে পারে। কখন এই বিপদ নেমে আসে? সাধারণত জ্বরের পঞ্চম-ষষ্ঠ দিন থেকে শুরু হতে পারে বিপর্যয়। তবে কখনো কখনো তৃতীয় দিন থেকেও এমনটি হতে পারে। একে বলা হয় ক্রিটিক্যাল বা সংকটপূর্ণ সময়। এ পর্যায়ে হতে পারে ডেঙ্গুজনিত রক্তক্ষরণ এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে কিছু বিরল লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এসব লক্ষণ ভয়ানক।

তীব্র মাত্রার ডেঙ্গু হলে লিভার আক্রান্ত হতে পারে। ফলে লিভার বড় হয়ে যায় এবং এনজাইম বেড়ে যায় বহু গুণ। এই ভাইরাসে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়। ফলে রোগী অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যেতে পারেন। শুরু হতে পারে খিঁচুনি। হৃৎস্পন্দন হতে পারে এলোমেলো। হৃৎপিণ্ডের পেশি কোষ আক্রান্ত হয়ে হতে পারে কার্ডিওমায়োপ্যাথি। কিডনি, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়—সব অঙ্গ হতে পারে বিকল।

করণীয়

অনেকে হয়তো জানেনই না যে আগে ডেঙ্গু হয়েছিল কি না। কারণ, ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু সাধারণ জ্বরের মতোই হয়ে থাকে। হয়তো সেটা আগে ধরাই পড়েনি। তাই এ সময় জ্বর হলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। শুরুতেই পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। দেরি করা চলবে না। আর ডেঙ্গুর যেহেতু এখনো টিকা নেই, তাই মশার আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা ছাড়া একে প্রতিরোধের আর কোনো উপায় নেই। নিজের চারপাশে মশকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মশার কামড় থেকে মুক্ত থাকার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সচেতন থাকুন। জ্বর হলে ডেঙ্গু কি না, তা নির্ণয় করা এবং বিপদচিহ্নগুলো নজরে রাখা, বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রথম আলো

এনসিএন/এসকে

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print