ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

নওগাঁয় বিএনপির কাউন্সিল; ভোটার তালিকা প্রকাশের জেরে দ্বন্দ চরমে

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল ঘিরে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই ভোটার তালিকা প্রকাশের পর দ্বন্দে জড়িয়েছে বিএনপির দুই গ্রুপ। এক পক্ষ ভুয়া ভোটার তালিকা উল্লেখ করে সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আরেক পক্ষ প্রতিবাদ জানিয়েছে। 

তারই প্রেক্ষিতে প্রকাশিত তালিকা ভুয়া দাবি করে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছে দলটির একাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক ও আসন্ন কাউন্সিলে সভাপতি প্রদপ্রার্থী মো. রুহুল আমিন বলেন, আগামী ১৯ জুলাই ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হবার কথা রয়েছে। এর আগে কাউন্সিলে অংশ নেয়া ভোটারদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়, সেটি করা হয়নি। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৭২টি ওয়ার্ডের সভপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্য থেকে অধিকাংশ নেতা কর্মীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র বিরোধী ভোটার তালিকা প্রণয়ন, বিশেষ এক মহলকে বিজয়ী করার হীনষড়যন্ত্র ও ত্যাগী কারা নির্যাতিত নেতাদের বাদ দিয়ে গঠনতন্ত্রের নিয়মাবলী উপেক্ষা করে জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এমদাদুল হক মুকুলের স্বাক্ষরে একটি অদ্ভূত মনগড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছেন। যা গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী।

তিনি আরো বলেন, এই কাউন্সিলে মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন হানজালা নামক হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী এবং চাঁদাবাজ একজন আওয়ামী দোসর। একসময় জামায়াতের অন্যতম কর্মীও ছিলেন। বর্তমান ও পূর্বে বিএনপিতে তার কোন পদপদবি আছে কিনা জানা নেই। যিনি বিএনপির বর্জন করা নির্বাচন, আওয়ামী লীগকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ১৮ মার্চে উপজেলা নির্বাচন করেছেন।

রুহুল আমিন বলেন, কাউন্সিলে সভাপতি পদপ্রার্থী এম এ ওয়াদুদ বিএনপির দু:সময়ে অনেক তালবাহানা করেছেন, কোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেননি অসুস্থতার দোহাই দিয়ে। অথচ ভোটার তালিকায় তিনিসহ তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও রক্তের সম্পর্কের আরো ৭জনসহ মোট ১১ জনের নাম রয়েছে। এ যেন এক আত্মীয়করণ তালিকা। সদস্য বা ভোটার হিসেবে এমন ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে যাতে করে একটা বিশেষ পক্ষের বিজয় সুনিশ্চিত হয়।

নির্যাতিত এবং ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি দাবি করে ভুয়া এই ভোটার তালিকা বাতিল করে সত্যিকারের ত্যাগী নেতাদের পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও নির্ভেজাল কমিটি গঠন করে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে আসন্ন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের দাবীও জানান লিখিত বক্তব্যে তিনি।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে জানতে চাইলে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হানজালা মুঠোফোনে বলেন, আমি একজন ক্রীড়া সংগঠক। আমার সংগঠনে পুরুষ খেলোয়াড়ের পাশাপাশি অনেক নারী খেলোয়াড়ও আছে। এবং আমি একজন ভালো ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। আমার টিম চ্যাম্পিয়ন হলে অনেক সময় আমাকে পুরস্কার গ্রহণ করতে হয়। তখন অনেকে ছবি তুলে রাখে। বিষয়টি জেলা বিএনপির অনেক নেতা অবগত আছে। এছাড়া আমার পরিবারে কোন জাময়াত বা আওয়ামী লীগ নেই।

এদিকে প্রকাশিত তালিকা প্রত্যাখ্যান করায় তার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপির আরেক পক্ষ। তারই প্রতিবাদে গত সোমবার ১৪ জুলাই দুপুরে ধামইরহাট প্রেস ক্লাবে ৬টি ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দের যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসন্ন উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে জেলা কমিটির অনুমোদিত ভোটার তালিকা প্রত্যাখ্যান করে সভাপতি পদপ্রার্থী রুহুল আমিন কর্তৃক তা প্রকাশ্যে ছিড়ে ফেলার প্রতিবাদে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদপ্রার্থী রুহুল আমিনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন ধামইরহাট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেওয়ান ওয়াজেদ আলী কবির, আলমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ, উমার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হেলাল হোসেন, আড়ানগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শামীম কবির মিল্টন, জাহানপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. রোকন উদ্দিন, ইসবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ বলেন, সংগঠনের নীতিমালা অনুযায়ী ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে তফসিল দিয়ে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ভোটার তালিকার প্রস্তাবনা দেয়। সে অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একটি পক্ষ দলীয় কোন্দল সৃষ্টির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকে জানানো হয়েছে। আমাদের নামে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print