মে ৫, ২০২৪ ১২:৪০ পিএম

নওগাঁয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.২ডিগ্রি; বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ আদায়

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশে বইছে তীব্র তাপদাহ ও খরা। সারা দেশের সঙ্গে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নওগাঁ ও তার আশেপাশের অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারী দাবদাহ। নওগাঁয় গত কয়েকদিন থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

আজ বৃহস্পতিবার চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.২ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে তীব্র তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়েছে পড়েছে। তাপদাহের প্রভাব পড়েছে জনজীবনসহ ফসলে। ফসলি জমির মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির। ফসলি জমিতে শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা। মাটি থেকে গরম হাওয়া উঠছে। প্রচন্ড গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণীকুল। রাস্তা ঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। স্বস্থি পেতে কেউ কেউ গাছের নিচে আশ্রয় নিচ্ছে।

বৈশাখের শুরু থেকেই নওগাঁর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। কখনও তাপমাত্রা এক ডিগ্রি কমলে পরের দিনে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনই তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমন তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় নওগাঁর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে ৩৯.২ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ। এছাড়া বাতাসের আদ্রতা পরিমাপ করা হয়েছে ২৭ পার্সেন্ট। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক।

চলমান আবহাওয়ার এ তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে ও রহমতের বৃষ্টি কামনায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এক যোগে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে বিশেষ নামাজ (সালাতুল ইসতিসকা) আদায় করা হয়েছে। এ দিন সকাল ৯টার দিকে নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর দাখিল মাদরাসা মাঠে নামাজের ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা নজিবর রহমান এবং দুবলহাটি ইউনিয়নের মাতাসাগর ঈদগাহ মাঠে নামাজের ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা হুসাইন আহমেদ।

জেলার রাণীনগর উপজেলা সদরের পূর্ব বালুভরা পাবলিক ঈদগাহ মাঠের আয়োজনে রাণীনগর শের-এ বাংলা সরকারি কলেজ মাঠে ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে। এ সময় প্রাকৃতিক দুর্ভোগ থেকে মুক্তিসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ প্রার্থনা করা হয়। নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি ও অসহ্য গরম থেকে মুক্তি পেতে এবং মহান আল্লাহর রহমত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এতে স্থানীয় শতাধিক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন। নামাজ ও দোয়ায় ইমামতি করেন- ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদের খতিব মাওলানা মোস্তফা আল আমিন।

রহমতের বৃষ্টির জন্য সাপাহার উপজেলার সরফতুল্লাহ মাদরাসা মাঠে নামাজের ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন সাপাহার মডেল মসজিদের সাবেক ইমাম ও ওই মাদরাসার আরবি প্রভাষক মাওলানা মো. ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, এই গরম থেকে রক্ষা পেতে এবং আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি যাতে আমাদের উপর বর্ষণ হয় এর জন্য আমরা ইস্তিসকার নামাজ আদায় করেছি। এছাড়াও এ উপজেলা আমের জন্য বিখ্যাত। আর সেখানে বৃষ্টি না হওয়ায় তীব্র তাপদাহে গাছের আম ঝরে পড়ছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন এ উপজেলার মানুষ। আল্লাহর দরবারে সকল পাপ কাজের জন্য ক্ষমা এবং আমাদের বালা মুসিবত থেকে হেফাজত করেন এজন্য দোয়া ইউনূস পড়েছি। এসময় প্রায় তিন শতাধিক মুসল্লিসহ এ সময় অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক হোসেন সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিগণ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবগ বিশেষ জামায়াতে অংশ নিয়ে দু’রাকাত ইস্তিসকার নামাজ আদায় করেন।

পোরশা উপজেলার নিতপুর শ্রীকৃষ্ণপুর ঈদগাহ মাঠে নামাজের ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন হাপানিয়া ফাজিল মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা হযরত আলী। ধামইরহাট উপজেলার ডিগ্রী কলেজ মাঠে ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন- মাওলানা আস-আদুল্লাহ।

পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পাবলিক মাঠে প্রায় শতাধিক মুসল্লি নিয়ে নামাজ আদায় করা হয়। মোনাজাতের আগে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শীতল আবহাওয়া ও বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ। নামাজের ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা মো. আব্দুল মুকিম। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় হাহাকার চলছে। আল্লাহ যেন রহমত নাযিল করেন, এটিই আমাদের উদ্দেশ্য।

এছাড়া অন্যান্য উপজেলার শীতল আবহাওয়া ও বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ।

ইসতিসকা শব্দের অর্থ পানি বা বৃষ্টি প্রার্থনা করা। সালাতুল ইসতিসকা অর্থ বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ। শারিয়তের পরিভাষায় অনাবৃষ্টির সময় আল্লাহর রাসুলের সুন্নত অনুসরন করে খোলা প্রান্তরে নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করাকে সালাতুল ইসতিসকা বা ইসতিসকার নামাজ বলা হয়।

নামাজে অংশ নেয়া শহীদুল ইসলাম ও শাহারিয়ার শান্ত বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাবদাহ বইয়ে চলছে। অসহ্য গরমে জনজীবন হাসফাস অবস্থা। কোথায় গিয়ে স্বস্থি মিলছে না। শীতল আবহাওয়া ও বৃষ্টির জন্য প্রার্থনার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ইসতিসকা নামাজে অংশ নিয়েছে। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ কামনা করা হয়। আল্লাহ চাইলে এ নামাজ কবুল করে রহমতের বৃষ্টি দিয়ে মানুষ, প্রাণিসহ সকলকে শান্তিতে থাকার পরিবেশ করে দেবেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print