ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

নওফেল হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন, গ্রেফতার ১

নওফেল হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন, গ্রেফতার ১
নওফেল হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। ছবি: এনসিএন

বগুড়ার শাজাহানপুরে চাঞ্চল্যকর শিশু নওফেল শেখ (১৪) হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

এ ঘটনায় জড়িত শাজাহানপুর উপজেলার দাড়িগাছা হাটপাড়া গ্রামের মকুল হোসেনের ছেলে কিশোর নবির হোসেনকে (১৬) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার (২৭ জুন) দুপুর দেড়টায় ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত নবির হোসেন শাজাহানপুরের বাসিন্দা হলেও ঢাকায় তার বড় ভাইয়ের সাথে লন্ড্রীর দোকানে কাজ করতো বলে জানা গেছে।

একই সাথে শিশু নওফেল হত্যাকান্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই কিশোরের কথিত বান্ধবী জাকিয়া সুলতানাকে (২০) আটক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজ কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।

ঘটনার মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই মাস আগে নওফেলের বাবা শখের বশে জমি বিক্রির টাকা দিয়ে নওফেলকে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল কিনে দেয়। আর সেই মোবাইল ফোনই নওফেলের জীবন অবসানের কারণ হলো।

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, চলতি মাসের ১৮ তারিখে নিহত নওফেলের জন্মদিন ছিল। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঘটনার দিন নওফেলকে দাড়িগাছা গ্রামের একটি জঙ্গলে ধূমপানের জন্য নিয়ে যায় সে। মূলত তার স্মার্টফোনটির দিকে চোখ দেয় বন্ধু নবির হোসেন। আর সে কারণেই পরিকল্পিত এই হত্যা কান্ড ঘটানো হয়।

তিনি বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িত ওই কিশোর নওফেলকে হত্যা করে সেই স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয়ার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার গলায় একটি মাপলার রাখে। পরে ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে ধুমপান করার জন্য তারা দু’জন ধূমপানের জন্য জঙ্গলে প্রবেশ করে।’

পরে নওফেল জঙ্গলের একটি গাছের সাথে হেলান দিয়ে ধূমপান করার এক পর্যায়ে নবির তার গলায় থাকা মাপলার হাতে নিয়ে বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘মামা তোমাকে যদি এই মাপলার দিয়ে সিনেমার স্টাইলে খুন করা হয় তাহলে কেমন হবে। তখন নওফেল হেসে বলে যে, মামা তুমিতো আমকে খুন করবে না।’

এ কথা বলের কিছু সময় পরেই অভিনয়ের ছলে নবির হোসেন তার হাতের মাপলার দিয়ে নওফেলের গলায় দুটি প্যাচ দিয়ে গাছের সাথে শক্ত করে পিছন দিক থেকে টেনে ধরে। এতে নওফেল ছটফট করতে করতে নওফেল মারা যায়। পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাশের জমি থেকে একটি বাঁশের টুকরো নিয়ে নওফেলের মাথায় আঘাত করে। স্কুলছাত্র নওফেল মারা যাওয়ার পর তার মরদেহটি একটি ঝোপের মধ্যে রেখে সে আত্মগোপনে চলে যায়।

সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার দিনে দুপুরে হত্যাকান্ডে জড়িত নবির হোসেন তার কথিত বান্ধবী জাকিয়া সুলতানাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে বগুড়া শহরের সাতমাথায় একটি পুরাতন মোবাইল ফোন ক্রয়-বিক্রয়ের দোকানে গিয়ে তারা ভাই-বোনের পরিচয় নিয়ে নিজেদের অভাব অনটনের কথা বলে নওফেলের ওই ফোন ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।

মোবাইল বিক্রির টাকা দিয়ে পরে তারা দু’জন শহরের গালা পট্টির একটি হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটায়। এরপর তার আরেক বন্ধু হেলালকে ডেকে ওই মেয়ের সাথে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দেয়।

হত্যাকান্ডে জড়িত নবির হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার আরো বলেন, এ ঘটনায় জড়িত কিশোর নবির হোসেন আজ আদালতে পাঠানো হবে। সেখানে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হবে। সেখানে আদালতের মাধ্যমে তার শাস্তি প্রদান করা হবে। তবে আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে রিমান্ড মঞ্জুর সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মোতাহার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) হেলেনা খাতুন এবং শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এর আগে, গেল সোমবার (২০ জুন) বিকেলে শাজাহানপুরের নিখোঁজের ২ দিন পর স্কুলছাত্র নওফেল (১৪) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।

ঘটনার দু’দিন পর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা গ্রামের জঙ্গল থেকে নওফেলের(১৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে উপজেলার খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা হাটপাড়া গ্রামের ইসরাফিলের ছেলে এবং দাড়িগাছা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

এনসিএন/এআইএ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print