মে ১৭, ২০২৪ ৫:৩৮ পিএম

সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ যেন ডলার ও জ্বালানী তেলে গিয়ে ঠেকেছে।

নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি, স্থবিরতা এসেছে আবাসন নির্মাণে

নির্মাণ শিল্প সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে আবাসন খাতে। ছবিটি বগুড়া সাতমাথা থেকে তোলা। ছবিঃ ববিন রহমান।
নির্মাণ শিল্প সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে আবাসন খাতে। ছবিটি বগুড়া সাতমাথা থেকে তোলা। ছবিঃ ববিন রহমান।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে যাওয়ার কারণে দেশে প্রতিটি জিনিসের দাম এখন ঊর্ধ্বমূখী। সেই সাথে বাদ যায়নি নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য। দেশে নির্মাণ সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে নির্মাণ শিল্পের অন্যতম প্রধান উপকরণ রডের দাম বাড়ছে লাফিয়ে।

আরো পড়ুনঃ জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন কেন বেআইনি নয়: হাইকোর্ট

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি কেজি রডে দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছিল কোম্পানি ভেদে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। যা বর্তমান বাজারে টনপ্রতি ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ টনপ্রতি রডের দাম বর্তমান বাজারে ৯৪ হাজার থেকে ৯৫ হাজার টাকা।

শুধু রডেই নয়, দাম বেড়েছে সিমেন্টেও। বস্তা প্রতি বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এদিকে বালু আগের থেকে ১৩ টাকা সেফ্টিতে বিক্রি হলেও এখন তা ১৬ টাকা সেফ্টিতে বিক্রি হচ্ছে। ইট সাড়ে ১১’শ টাকা হাজারে বিক্রি হয়েছে এক সপ্তাহ আগে যা বর্তমান বাজার মূল্য ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় ঠেকেছে।

এছাড়া নির্মাণশিল্পে ব্যবহৃত অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার সঙ্গে বড় কারণ দেখাচ্ছেন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। যে কোন জিনিসের দাম এমন বৃদ্ধি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটাই কারণ জানা যায় তা হলো, জ্বালানি তেল ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির অযুহাত।

আরো পড়ুনঃ নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

এদিকে বগুড়ায় নির্মাণসামগ্রীর এমন দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের তুলনায় অনেক টাই কমেছে ক্রেতার সংখ্যা। সরকারি অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে কাজের গতি থমকে গেছে। ঠিকাদাররা সরকারের দিকে চেয়ে আছেন যেন দাম সমন্বয় করে আবারো কাজ শুরু করতে পারে।

তবে উন্নয়ন প্রকল্পে জড়িতরা জানান, “হুট করে এমন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে প্রকল্পে অনেক মেশিন ডিজেলে চালাতে হয়। এতে খরচ বেড়ে গেছে। মূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে প্রকল্প ব্যয়ও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। নতুবা প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিকভাবে করা যাবে না।”

বড়গোলার সিমেন্ট ব্যবসায়ী রিমন হোসেন জানান, “আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম বেড়েছে। সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কাঁচামালের দাম বাড়লেও অন্য খরচ কমিয়ে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম আরও বেশি বাড়লে সিমেন্টের দাম বাড়তে পারে। ক্লিংকার তৈরির খরচ বাড়ায় রপ্তানিকারক পর্যায়ে যেমন দাম বাড়ছে, তেমনি জাহাজভাড়া বাড়ায় তা আমদানি মূল্যের সঙ্গে যোগ হচ্ছে। সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালগুলোর সবগুলোই আমদানি করতে হয়। যার ফলে এমন দাম বৃদ্ধি হচ্ছে। এমন কি দাম বৃদ্ধির কারণে আগের তুলনাই নেই ক্রেতার চাহিদা।”

আরো পড়ুনঃ সূচকের বড় উত্থান, বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা জানান, “আবাসন খাতে বহুমুখী সংকট লেগেই থাকে। তার মধ্যে নতুন সংকট নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি। পাশাপাশি বেড়েছে জ্বালানী তেলের দাম। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের ব্যয়ও বাড়ছে। করোনার মহামারিকালে বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছিল আবাসন শিল্প। করোনার প্রভাব কমার পর নতুন করে নির্মাণশিল্প উজ্জীবিত হয়ে উঠছিল। তবে দাম বাড়ার কারণে সেটা কতটা সম্ভব হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”

শহরের একজন ঠিকাদার সোলাইমান আলী জানান, “করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। করোনার প্রকোপ যখন কিছুটা কমলে তখন আমরা নির্মাণকাজ শুরু করলাম। আর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই রড, ইট, বালু, পাথরসহ প্রায় সব উপকরণের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। আর নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে নির্মাণ খরচও বেড়ে যাচ্ছে। আগে প্রতি টন রড ৫২ হাজার টাকায় কেনা যেত। এখন তা প্রায় ৮২ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।”

নির্মাণ সামগ্রীর সকল পণ্যের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে বৈদ্যুতিক সামগ্রীর দাম। বৈদ্যুতিক সামগ্রীর প্রধান উপাদান হলো তার। আর তা তৈরিতে ডলারের বিপরীতে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় তামা। বিশ্ববাজারে তামার দামের ঊর্ধগতি, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ও জ্বলানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে এই শিল্পে।

বগুড়া ইলেট্রিক ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মতিউর রহমান জানান, “নির্মাণ কাজে বৈদ্যুতিক সামগ্রীর মধ্যে ক্রেতাদের সব থেকে বেশি খরচ করতে হয় তার কিনতে। দেশে করোনার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত তারের দাম বাড়তো বছরে একবার কিংবা দুইবার। কিন্ত করোনার পর থেকে তারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে প্রতি বছরে দুই বারের অধিক। এখন পর্যন্ত তারের দাম ঠেকানো সম্ভব হয়নি। আগামী কিছুদিনের মধ্যে তারের মূল্য বাড়বে করপক্ষে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।”

নির্মাণ খাতে সংস্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মানুষের জীবন-যাত্রার মানোন্নয়নের সাথে নির্মাণ খাত ও আবাসন অতপ্রতভাবে জড়িত। তবে দফায় দফায় সকল পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে পিছিয়ে পড়বে একশ্রেণির মানুষ, সেই সাথে মুখ থুবড়ে পড়বে নির্মাণ খাত। এতে করে যেমনটি বাড়বে লোকসান তেমনি তৈরি হবে কাজের ধীর গতির আশঙ্কা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print