এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৭:৪৩ পিএম

ফি ছাড়াই ঘুরে এলাম দেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি জাদুঘর। ছবি: আবুল বাশার মিরাজ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি জাদুঘর। ছবি: আবুল বাশার মিরাজ

জাদুঘর মানেই প্রবেশ ফি। কিন্তু না এ জাদুঘরে ঢুকতে আপনাকে গুনতে হবে না কোন টাকা- পয়সা। বলছি ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি জাদুঘরের কথা। দেশের কৃষি সভ্যতার সূচনা ও বিবর্তনের ইতিহাস-ঐতিহ্য খচিত কৃষি উপকরণ ও প্রযুক্তিসমূহ সংরক্ষণের মাধ্যমে সেগুলোর সাথে নতুন প্রজন্মের পরিচয় করিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম এবং একমাত্র এ কৃষি জাদুঘরটি। সরকারী ছুটির দিন ব্যাতীত সপ্তাহের রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে এ জাদুঘর। চমৎকার এ কৃষি জাদুঘরটি ঘুরে দেখে এসে লিখেছেন আবুল বাশার মিরাজ

ভিতরে প্রবেশ করতেই যা দেখলাম:

জাদুঘরটির প্রবেশ কক্ষেই স্বাগত জানালো অ্যাকুইরিয়ামের বেশ কয়েক প্রকার বাহারী মাছ। এখানেই চোখে পড়লো কৃষির উন্নয়নে অবদান রেখেছেন এমন চার নেতার ছবি। এরা হলেন- ১৯২২ সালে ‘লাঙল যার জমি তার’ স্লোগান তোলা ফারাক্কা মিছিলের নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ১৯৩৮ সালের ১১ ডিসেম্বর পূর্ব বাংলার কৃষিশিক্ষা উন্নয়নে ঢাকায় কৃষি ইনস্টিটিউটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকারী অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দানকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৮০০ খাল খনন করে কৃষিতে অবদান রাখা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের। এছাড়াও এই কক্ষেই দেখতে পেলাম বাকৃবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সব উপাচার্যের ছবি।

প্রদশর্নী কক্ষে সাজানো রয়েছে কৃষির উপকরন:

৬টি প্রদর্শনী কক্ষে বড় বড় কাঁচের কাঠামোতে সাজানো রয়েছে ৪৪৯টি উপকরণ। উপকারণগুলোন যাতে সহজে চেনার জন্য স্থানীয় নাম ব্যবহার করা হয়েছে। উপকরণভেদে বৈজ্ঞানিক নাম, সংগ্রহের উৎস ও তারিখ এবং কী কী কাজে ব্যবহার হয়- সেসব উল্লেখ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের ভেতর এবং বাইরের দিকে দেওয়ালে কৃষিভিত্তিক নানা ধরণের খনার বচন সাঁটানো রয়েছে।

দেখা হলো নানা শস্য বীজের সাথে:

প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রদর্শনী কক্ষে ঘুরে দেখলাম নানা জানা-অজানা উপকরণ। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ভিন্ন ভিন্ন রং ও গন্ধের মাটি, বেশ কয়েক জাতের দেশীয় মাছ, বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হওয়া নানান জাতের ধান, পাট, ডাল, ছোলা, সরিষা, টমেটো, বাদামসহ বিভিন্ন ধরণের শস্য ও বীজ, পাহাড়ি চাষাবাদের মডেল, বিভিন্ন রোগের চিত্রসহ বর্ণনা, বিভিন্ন মসলার উপকরণ, তেল বীজ, ঔষুধি ফল ও পাতা। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে বিড়াল, বানর, খরগোশ, মুরগি, কুকুর, অজাগর সাপ, ঘোড়ার মাথা ক্যাঙ্গারুসহ বিভিন্ন প্রাণীর কঙ্কাল, গরু, মহিষ ও হরিণের শিং এবং বিরাট আকারের এক শকুন।

পরিচিত হলাম কৃষির অজানা যন্ত্রের সাথে:

তৃতীয় প্রদর্শনী কক্ষটিকে দেখলাম গ্রাম-বাংলায় গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহৃত উপকরণ। এখানে রয়েছে ঢেঁকি, কুলা, মুরগির খাঁচা, দাবা, হুকা, পানের ডাবর , গরুর গাড়ির মডেল, জিপসি, হরেক রকমের হারিকেন ও কুপি, গাছা, বেহালা, তবলাসহ নানান দেশীয় বাদ্যযন্ত্র।

চতুর্থ প্রদর্শনী কক্ষে দেখলাম জমি চাষাবাদের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ও অনেক আগের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি। যেমন দা, কোদাল, শাবল, মাইক্রোকম্পিউটার, তীর, ধনুক, ইপিস্কোপ, প্রিন্টারসহ নানান রকমের জিনিস।

ফিরে গিয়েছিলাম গ্রামে:

পঞ্চম প্রদর্শনী কক্ষটিতে দেখতে পেলাম কৃষকের পূর্ণাঙ্গ বসত বাড়ির মডেল, লাঙ্গল, হাল চাষের বিভিন্ন মডেল ইত্যাদি। যা দেখে ফিরেই গিয়েছিলাম আবহমান গ্রাম। চোখ ফিরাতে পারছিলাম। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম। একটি গ্রামীন কৃষকের বাড়িতে যা যা থাকা দরকার, তা দিয়েই এ বসতবাড়িটি সাজানো হয়েছে।

ভালো লাগলো নকশীকাঁথা:

ষষ্ঠ এবং শেষ প্রদর্শনী কক্ষে দেখলাম জমি চাষাবাদের জন্য পাওয়ার টিলার, ধান মাড়াইয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও বাংলা গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি নকশীকাঁথা, গারো সম্প্রদায়ের তৈরি পোশাক অর্ণা, ঘাণি ইত্যাদি।

জাদুঘরটি তৈরির ইতিহাস ঘেটে:

২০০২ সালের ১০ মার্চ জাদুঘরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলেও ২০০৭ সালের ৩০ জুন তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসাইন মিঞার মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। মিউজিয়ামটির আয়তন ৬৩৫০ বর্গফুট এবং এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print