মে ৩, ২০২৪ ৫:৩৮ এএম

বগুড়ায় অনিয়ন্ত্রিত ডিমের বাজার; সিন্ডিকেটের কাছে ভোক্তাদের অসহায় আত্মসমর্পণ

বগুড়ায় কোনমতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডিমের বাজার। চাহিদার তুলনায় ১০ লাখ পিস ডিম উদ্বৃত্ত থাকলেও ভোক্তাদের কাছে সহজলভ্য হচ্ছে না ডিম। মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে ভোক্তাসাধারণ। ভাঙা যাচ্ছে না ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিশালী সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেট তাদের ইচ্ছামত অরাজকতা করে আসলেও কর্তৃপক্ষ তা থামাতে ব্যর্থতার পরিচয় বহন করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ১০ লাখ ৮২ হাজার পিস। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত কাজী ফার্মে বিশাল পোল্ট্রি ফার্মসহ বগুড়ায় ডিম উৎপাদন হয়ে থাকে ২০ লাখ পিছ। এতে করে বগুড়ায় প্রায় ১০ লাখ ডিম উদ্বৃত্ত থাকে। সে হিসেবে নাগালের মধ্যেই থাকার কথা ডিমের দাম। পৌঁছে যাওয়ার কথা সর্বসাধারণের ঘরে ঘরে। কিন্তু অন্য জেলায় ডিম পাঠিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বগুড়ায় বাড়ানো হয় ডিমের দাম। কখনও বা সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানোর গুজব রটিয়ে পকেট ভরায় অসাধু ব্যবসায়ীরা।

কাজী ফার্মের নিলাম স্পেন্টারে নিলামকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ডিম নিলাম শুরু হয়েছে ১১ টাকা ৩৫ পয়সায় (অর্থাৎ ৪৫ টাকা ২০ পয়সা হালি)। এর পর হাকডাক শুরু হয়ে তা নিলাম ওঠে ১১ টাকা ৫০ পয়সায় (৪৬ টাকা হালি)। নিলামকারীরা সেই ডিম পাইকারী বিক্রি করে ১১ টাকা ৭০ পয়সায়। খুচরা বাজারে গত রবিবার বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা হালি। ফার্মের মালিকরা ডিমের লাভ হাতে রেখেই নিলাম শুরু করে। তারপর নিলামে ওঠা লাভও তাদের পকেটে চলে যায়।

ডিমের পাইকারী ব্যবসায়ী ও কাজী ফার্মের নিলামে অংশগ্রহণকারী মিলন রহমান জানান, সোমবার নাকি টাকা দিয়েও ডিম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রবিবার রাতে ডিম বিক্রেতারা ঘোষণা দেয়, “রবিবার ৪৮ টাকা হালি বিক্রি করছি। সোমবার ৫০ থেকে ৫২ টাকা হালি (৪টি) খেতে হবে।” এই ঘোষণার পর দেখা যায় শহরের ফতেহ আলী বাজারে ক্রেতাদের ডিম কেনার হিড়িক। তারা কিছুটা গুজব ছড়িয়ে বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের মুনাফা লুট করে নিয়েছে।
সোমবার ডিমের ঘাটতি হবে এমন তথ্য রবিবার জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ী মিলন রহমান। ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয় কিছু নেতা প্রতি ডিমে ১৫ পয়সা নিয়ে থাকে। তবে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। অনেকটা গোপনে এই লেনদেন হয়ে থাকে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ১০ লাখ ৮২ হাজার পিস। বগুড়ায় ডিম উৎপাদন হয়ে থাকে ২০ লাখ পিস। এতে করে প্রায় বগুড়ায় ১০ লাখ ডিম উদ্বৃত্ত থাকে।
তবে এত ডিম যায় কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে জেলায় বিক্রি হলে ডিমের দাম বেশি পাওয়া যাবে সেই জেলায় চলে যায়। ফলে বগুড়ায় ডিমের কৃত্রিম সংকট দেখা দেয়।
তিনি ডিমের দামের ঊর্ধ্বগতির জন্য একটি বিরাট সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। এখানে ক্রেতারা ডিম সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

এদিকে জেলায় ১১০৮ টি লেয়ার মুরগির ফার্ম ছিল। কিন্তু নানা কারণে এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৭৯টি। এমন তথ্য দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

এনসিএন/এসকে

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print