সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫ ২:৪৩ এএম

বগুড়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে হামলার শিকার ভুমি কর্মকর্তা; ৩ ঘন্টা পর উদ্ধার

ধুনট থানা, ছবিঃ সংগৃহীত
ধুনট থানা, ছবিঃ সংগৃহীত

বগুড়ার ধুনটে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নিমগাছি ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন মারধরে শিকার হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা ওই কর্মকর্তাকে শুধু মারধর করে ক্ষ্যান্ত হয়নি মব সৃষ্টি করে তার নিকট থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ তিন ঘন্টা পর সন্ত্রাসীদের জিম্মিদশা থেকে ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেছে। গত ২ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের পিরাপাট বিএনপি বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, জয়শিং টু বগুড়া সড়কের পিরাপাট বিএনপি বাজার এলাকায় সুকলু মিয়া ও তার ভাইদের সাড়ে ছয় শতক জমি ২০০৪ সালে বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তা নির্মানের জন্য অধিগ্রহণ করে। সুকলু মিয়া অধিগ্রহণ করা ওই জমির মূল্য বাবদ ২০,৬১৬/৭৫ টাকাও উত্তোলন করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, সড়ক নির্মানের অধিগ্রহণ করা অবশিষ্ট জমিতে সুকলু মিয়া ও তার সহযোগী শাহাদুল হোসেন মন্ডল, গোদামন্ডল, আব্দুল কাফী, সফিকুল ইসলাম , ইংরেজ উদ্দিন ও কালু মিয়া অবৈধভাবে দখল করে ঘর নির্মান করে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর পক্ষে ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম প্রতিকার চেয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনার সত্যতা পেয়ে সড়কের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সুকলু মিয়া ও তার সহযোগীদের নির্দেশ দেন। সুকলু মিয়া ও তার সহযোগীরা ইউএনও নির্দেশ অমান্য করে সড়কের জায়গায় আরো স্থাপনা নির্মান করে। গত বুধবার ইউএনও খৃষ্টফার হিমেল রিছিল অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য নিমগাছি ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আনোযার হোসেনকে নির্দেশ দেন।

ভূমি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, বুধবার বিকাল ৪টার দিকে পিরাপাট বাজার এলাকায় গিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করায় সুকলু মিয়া ও তার সহযোগীসহ অন্তত ৪০/৫০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে ঘিরে ধরে মারধর করে এবং অবরুদ্ধ করে রাখে। তারপর তিনশত টাকা মূল্য মানের সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়। খবর পেয়ে ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম একদল ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভূমি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে তিন ঘন্টা পর সন্ত্রাসীদের জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে। আনোয়ার হোসেন আরও বলেন ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।

এরআগে গত জুলাইয়ে তারা একই এলাকার শহিদুল ইসলামের কাছে চাঁদা দাবি করে। শহিদুল ইসলাম চাঁদা না দেওয়ায় তার বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বগুড়া কর্তৃক অধিগ্রহনকৃত সরকারী রাস্তার জায়গা অবৈধভাবে দখল করে এবং তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঘর ভাংচুর করে ভিতরে রক্ষিত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের রড, সিমেন্টসহ অন্যান্য সামগ্রী লুটতারাজ করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তারা শহিদুলের পরিবারকে ঘরের ভিতর জিম্মি করে রাখে। পরে জিম্মিদশা থেকে রক্ষা পেতে সরকারি জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে শহিদুল। পরবর্তিতে ধুনট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের উদ্ধার করে। একপর্যায়ে ওই সন্ত্রাসীরা মব সৃষ্টি করে সরকারী রাস্তার জায়গায় বেড়া নির্মাণ করে শহিদুল ইসলামের পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখে। মব সৃষ্টি ভাঙচুর করেও থামেনি সন্ত্রাসীরা এবার স্বয়ং ভূমি কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে তারা

ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থালে গিয়ে ভূমি কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেওয়া সাদা ষ্ট্যাম্প সহ তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।এবিষয়ে ভূমি কর্মকর্তা মামলা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, একজন সরকারী কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত ও জিম্মি করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া দুঃখজনক ঘটনা। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print