মে ১৭, ২০২৪ ১:২৮ পিএম

২০ দিনে মোট শনাক্ত ১৪৬ জন, মৃত্যু ২

বগুড়ায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী; পৌরসভার নিয়ন্ত্রণচেষ্টা অপ্রতুল

বগুড়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এরই মধ্যে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে ডেঙ্গু কর্নার বাড়িয়েও রোগীর বেড সংকুলান করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মশার উপদ্রব এবং ডেঙ্গু আতঙ্কে ক্ষুব্ধ পৌরবাসী ডেঙ্গু মোকাবিলায় পৌরসভার কার্যক্রমকে দায়সারা কর্মকাণ্ড বলে মনে করছেন।

পৌর কর্তৃপক্ষ আবার ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছে সরকারের ওপর। সীমিত বাজেটে বিশাল আয়তনের পৌরসভাকে মশামুক্ত করা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে দাবি তাদের।

বগুড়ায় লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি মাসে ৫ তারিখে রোগী শনাক্তের পরিমাণ ছিল মাত্র একজন, সেখানে ২০ দিনের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৬ জনে। এর মধ্যে মারা গেছে দুজন।

বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালে অতিরিক্ত ডেঙ্গু কর্নার সংযোজন করছে কর্তৃপক্ষ।

শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শজিমেক) এ ২০ বেডের ডেঙ্গু কর্নার ছিল। সম্প্রতি সেখানে আরো ২০ বেডের ডেঙ্গু কর্নার সংযুক্ত করা হয়েছে। মোট চারটি রুমে ডেঙ্গু চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে শজিমেকে। এরপরও কিছু রোগীকে মেঝেতে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (২৭ জুলাই) এই হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে ভর্তি আছে ৪৮ জন রোগী। গত বুধবার (২৬ জুলাই) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মাসুদ রানা নামের ২৭ বছর বয়সী এক যুবক মারা যান এই হাসপাতালে।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় রোগী শনাক্তকরণের জন্য অতিরিক্ত কিটের চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ড. আব্দুল ওয়াদুদ।

এদিকে, রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বগুড়ার অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালেও। সেখানে ভর্তি আছেন ১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী (২৬ জুলাই পর্যন্ত) । এর আগে গত ১১ জুলাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭০ বছর বয়সী হাফিজার রহমান মারা যান এই হাসপাতালে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার শজিমেক এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ও কাহালু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ২৪ ঘন্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী। এক সপ্তাহ আগে রোগী শনাক্ত হয়েছিলো ৯ জন। আর ৫ জুলাই মাত্র একজন রোগী শনাক্ত হয় বগুড়ায়।

৫ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৪৬ জন রোগী, সুস্থ হয়েছেন ৮৩ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৮ জন। বাকিরা বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতিতে তৎপর দেখা যায়নি বগুড়া পৌর কর্তৃপক্ষকে। এডিস মশা নিধনে পৌরসভার কার্যক্রমকে দায়সারা গোছের বলে মনে করছেন পৌরবাসী। লিফটেটিং, মাইকিং করলেও মশা মারার উদ্যোগ কম পৌরসভার। পৌরসভার দূরবর্তী ওয়ার্ডগুলোতে ওষুধ ছিটানো হয় না। ছিটানো হলেও তা আংশিক এবং দায়সারা গোছের। এমনটাই অভিযোগ পৌরবাসিন্দাদের অনেকের।

পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ড বাসিন্দা দুলু প্রামাণিক বলেন, বছরে এক-আধবার দেখি মেশিন দিয়ে এখানে-ওখানে ছাড়া ছাড়াভাবে ওষুধ ছিটিয়ে চলে যায়। তাতে মশা মরে কিনা জানিনা। মশার জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। সারাবছর মশার উপদ্রব এই এলাকায়। ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ে আছি।

ঐ ওয়ার্ডের গৃহিণী মাসুদা বেগম বলেন, সারাবছর মশা এখানে। কিন্তু ওষুধ ছিটাতে আসে না। রাস্তার ধারে ছিটিয়ে চলে যায়। এলাকার মধ্যে আসেই না মশা মারতে। রাস্তার মাইকিং শুনে তো মশা পালাবে না। মশা মারতে ওষুধ ছিটানো লাগবে।

তবে এর ভিন্ন চিত্রও আছে। ৫ নং ওয়ার্ড বাসিন্দা নিয়তি সরকার বলেন, এই ওয়ার্ডে আগে মশার উপদ্রব ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা দেখছি না। নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়। ড্রেনগুলোও পরিষ্কার করা হয় ঘনঘনই।

পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। গত এক মাস যাবত তারা ডেঙ্গু বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে জনসচেতনতায় পৌর এলাকায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, আবর্জনা পরিষ্কার এবং ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধন কার্যক্রম। গত এক মাসে ২৫ হাজার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন পৌরসভা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলম।

শাহজাহান আলম বলেন, গত অর্থ বছরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পৌরসভার সরকারি বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ বছরে এখনও কোন বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ আসতে হয়তো তিন মাসের মতো সময় লাগবে। গত বছরের বরাদ্দ এবং অর্জিত রাজস্ব আয় থেকে বর্তমানে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
এ বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও মশক নিধন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট প্রস্তাবনা করা হয়েছে বলেও জানান এই পৌর কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, “মশক নিধনে আমাদের প্রয়োজন ১৫ লাখ, সরকার আমাদের বরাদ্দ দেয় ২ লাখ। তবু আমরা মশার সিজনে ৩ বার ওষুধ ছিটাই। পৌরসভার নিজস্ব আয় থেকে এ খাতে ব্যয় করি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে আমরা মাইকিং, লিফলেট বিতরণ শুরু করেছি।

 

এনসিএন/এসকে

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print