এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ২:৪০ পিএম

বগুড়ায় যমুনার পানি বৃদ্ধিতে নদী ভাঙনে আতঙ্কিত এলাকাবাসী

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ১০ দিনে ১৫ টি পরিবারের বাড়ীঘর যমুনায় বিলীন। ভেঙে গেছে ৩০০ একর ফসলি জমি। ভাঙনের কারণে আতঙ্কিত রয়েছে ৪ গ্রামের ৩২ হাজার এলাকাবাসী। হুমকিতে রয়েছে ১৭ টি শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের চর ঘাগুয়া নৌঘাট সংলগ্ন এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ গ্রামের প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিনে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ১৫ টি পরিবারের লোকজন এলাকাছাড়া হয়েছেন। প্রায় ৩০০ একর কৃষি জমি যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। সেখানে কৃষকদের পরিপক্ক ভুট্টার আবাদ ছিল। এ আবাদগুলো কেড়ে নিয়েছে যমুনা নদীর পানি। এদিকে ভাঙন এলাকার নদীতীরবর্তী ৫০ গজের মধ্যে বসবাস করছেন বেশ কয়েকটি পরিবার। ভাঙন আতঙ্কে তাদের সারারাত জেগে থাকতে হয়।

নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এ ইউনিয়নের চর ঘাগুয়া, টেংরাকুড়া, উত্তর টেংরাকুড়া, পাকেরদহ, মোল্লা পাড়া এবং গজার পাড়ার ৩২ হাজার এলাকাবাসী।

এসব গ্রামে ১০ টি মসজিদ, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এসব শিক্ষা এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ভাঙন হুমকিতে রয়েছে।

কথা হয় যমুনা নদীর ৫০ গজ এলাকায় বসবাসরত আমজাদ প্রাং এর ছেলে ইব্রাহিম প্রাং (৪০) এর সাথে।

তিনি জানান, যেকোন মুহুর্তে তার বাড়ি যমুনায় বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চারদিকে নদী ভাঙনের ধুমধাম শব্দ। বাড়িঘর ভাঙার আশঙ্কায় তার স্ত্রী আর তিনি পালা করে রাত জাগেন। ৩ বছরের ছোট মেয়েকে সবসময় বুকে আগলে রাখেন। নদীতে মাছ ধরে সেই মাছ বাজারে বিক্রি করেই তার সংসার খরচ চলে। অর্থের অভাবে বাড়ি করার মতো কোন জমিজিরাত তিনি কিনতে পারেননি। এ জীবনে তিনি ৭ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন।

তিনি আরও জানান, একই ইউনিয়নের বেনিপুর চরে তিনি ৪ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এরপর গত ২০ বছর আগে বাড়ি করেছিলেন এই চর ঘাগুয়াতে। এ গ্রামেও তিনি ৩ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। সবশেষ বাড়ি করেছিলেন একই গ্রামের চর ঘাগুয়া নৌঘাটের নিকটে। দু একদিনের মধ্যেই তিনি বাড়ীটি ভেঙে অন্যত্র যাওয়ার চিন্তা করছেন। কিন্তু অন্যত্র যাওয়ার মতো কোন জায়গাজমি তিনি এখনো ঠিক করতে পারেননি।

নদী ভাঙনের শিকার মৃত হযরত আলী শেখের ছেলে মাহা আলম (৫০) এর সাথে। গত ১০ দিন আগে যমুনা নদী তার বসতবাড়িটুকু ভেঙে নিয়েছে। ভেঙে নিয়েছে তার বেশ কয়েক বিঘা কৃষিজমি। তার ৪ ছেলে এবং ৩ মেয়েকে নিয়ে এখন তিনি বাড়ি করেছেন একই গ্রামের যমুনা নদীতীর থেকে হাফ কিলোমিটার লোকালয়ের ভেতরে।

তিনি জানান, তার মতো একই গ্রামের নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন লালু শেখ, বানু শেখ, জলিল মিয়া, তাহের হোসেন, শাহীন আলম, শাহার শেখ, উজ্জল মিয়াসহ ১৫ টির বেশি পরিবার। মাহা আলমের আগে বাড়ী ছিল চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নে। সেখানে ৪ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে গত ১০ বছর আগে তিনি বাড়ী করেছিলেন এই চর ঘাগুয়াতে ।

চরঘাগুয়া গ্রামের শাহজাহান আলী মোল্লা বলেন, ‘নদী ভাঙন এই মুহূর্তেই যদি ঠেকানো না যায়, তাহলে কয়েকদিনেই কাজলা ইউনিয়নের এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামটি যমুনায় বিলীন হবে। এলাকাবাসীর পক্ষে অতি দ্রুত এখানে ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বগুড়া জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, কাজলার চরঘাগুয়াতে নদী ভাঙন সম্পর্কে ইতিমধ্যেই তিনি অবগত হয়েছেন। খুব দ্রুত তিনি ভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ শুরু করার আশ্বাস দেন।

এনসিএন/বিআর

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print