২৫ বছর পর আবারও বগুড়া বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে বিমান চলাচলের সম্ভাবনা থাকলেও রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব না থাকায় থমকে গেছে কার্যক্রম।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকা। এখানে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। পরে ১৯৯৫ সালে সদরের এরুলিয়া ও কাহালু উপজেলার বড়মোহর মৌজায় ছোট রানওয়ে (শর্ট ফিল্ড টেক অব ল্যান্ডিং পোর্ট) নির্মাণে ১০৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রানওয়ে, কার্যালয়, কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে। তবে প্রকল্পের কাজ আর তেমন এগোয়নি। এক পর্যায়ে ২০০৫ সালে বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হলে সেখানে তারা ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর্স স্কুল গড়ে তোলে।
সম্প্রতি সরকার বগুড়া বিমানবন্দরে রানওয়ে নির্মাণে প্রায় ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন দেয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিমানবন্দরের রানওয়ে নির্মাণ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে জরুরি দরপত্র আহ্বান করেছেন তারা। রোববারের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছে বেবিচক।
বগুড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাজধানী থেকে সড়ক ও রেলপথে বগুড়া যাতায়াতে ৮-১০ ঘণ্টা লাগে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে যাত্রার সময় তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ভোগান্তি এড়াতে প্রতিদিন বগুড়ার সামর্থ্যবান বিপুলসংখ্যক মানুষ আকাশপথে রাজশাহী ও নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসছেন, পরে সেখান থেকে আবারো গাড়ী যোগে বগুড়া আসছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত কমিটি সরেজমিনে বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন শেষে চালুর সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চার সদস্যের কমিটি গঠন করে।
চলতি বছরে এক সংবাদ সম্মেলনে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, সব ঠিক থাকলে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে। দেশের নবম বিমান বন্দর হিসেবে চালু করা হবে এটি।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে পরিকল্পিত বগুড়া বিমানবন্দর ২০০০ সালে নির্মাণ শেষ হলেও বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়নি। প্রথমে এটি বেসামরিক খাতে নির্মাণ হলেও দীর্ঘদিন অচলাবস্থায় থাকার পরে হস্তান্তর করা হয় বিমানবাহিনীর কাছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও বিমানবন্দরটি এখনো বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের জন্য প্রস্তুত নয়। রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন না হলে দুই যুগ পর বগুড়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তা আবারও বিলম্বিত হতে পারে।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নেতারা বলেন, ‘বগুড়ায় পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর চালুর পাশাপাশি বাণিজ্যিক বিমান চলাচল শুরু হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে।’
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, ‘বগুড়া শিল্প, শিক্ষা, ও ব্যবসাবাণিজ্যে অন্যান্য জেলার চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাই বিমানবন্দর চালু হলে শুধু বগুড়া নয়, পুরো উত্তরাঞ্চলে উন্নয়নের পরিবর্তন ঘটবে।’