এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৯:৪৯ পিএম

বগুড়া শহরের চিরচেনা যানজট ঈদকে সামনে রেখে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে

ব্যাটারী চালিত রিক্সা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকের শহর বগুড়া। শহরের চিরচেনা যানজট ঈদকে সামনে রেখে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এই যানজট ছড়িয়ে পড়েছে শহরের অলিগলিতে। এই ঈদে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে হাজার হাজার রিক্সা যোগ দিয়ে শহরকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। পাচ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগছে আধ ঘন্টা থেকে পৌনে এক ঘন্টা। ভয়াবহ এই যানজটে নাকাল বগুড়াবাসী।

যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। এর ভেতরে বগুড়া পৌর কর্র্তপক্ষ শহরের মধ্যে অবৈধ সিএনজি ষ্ট্যান্ডকে বৈধতা দেয়ার জন্য লিজ টেন্ডার আহ্বান করেছে।

পুলিশের অনুমান ঈদ ছাড়া বগুড়া শহরে প্রায় ৭০ হাজার রিক্সা, সিএনজি থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, লক্ষাধিক মোটর সাইকেল প্রতিদিন চলাচল করতো।  ঈদের আগে জেলা শহরের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রিক্সা যোগ দেয়ায় এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় লক্ষাধিক। 

যানজট নিরসনে জেলা আইন শৃংখলার সভায় একাধিক সিদ্ধান্ত নিলেও তার কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি। সিদ্ধান্ত নিয়েও রিক্সার সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছেন না পৌরসভা। 

পৌর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ না নেয়ায় জেলা পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না এমনও অভিযোগ আছে। পৌর এলাকার মধ্যে চলাচলের জন্য রিক্সার লাইসেন্স দেবে এমন প্রচেষ্টা নিলেও নানা কারনে তা পারেনি বলে জানান পৌর মেয়র। 

শহরের রাস্তা বিভিন্ন যানবাহনের চাপ নিতে পারছে না।  অসহায় ট্রফিক পুলিশকে যানজট নিরসনে শুধুমাত্র চেয়ে দেখা ছাড়া আর করার কিছুই নেই। জেলা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ জানান, মোটর কার ছাড়াও জেলায় লক্ষধিক মোটর সাইকেলের রেজিষ্ট্রেশন আছে। রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াও অনেক মোটর সাইকেল আছে। যার হিসাব তাদের কাছে নেই।

যানজট নিরসনে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, যানজট নিরসনের পুলিশ কঠোর অবস্থানে যাবে। ১৬ রমজান থেকে এই কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। শহরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও মার্কেট ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিন্ধকতা দূরকরনে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রাফিক কমিউনিটি পুলিশদের পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারা সহায়তাও করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।  

এছাড়া স্বেচ্ছাসেবকদল গঠন করা হবে। রিক্সা নিয়ন্ত্রণে পৌরসভাকে এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে যানজট প্রসঙ্গে বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, কত রিক্সার লাইসেন্স দেয়া যাবে এর জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই তাদের অনুমতি ছাড়া নিলে তাদের কাছে জবাবদিহি দিতে হবে। বিনা অনুমতিতে ব্যবস্থা নিলে তখন দেখা যাবে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আমাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। 

তিনি আরো বলেন, শহরের রিক্সা চলাচলের জন্য দুই হাজার তিনশত রিক্সার লাইসেন্সের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। গত মাসে মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, পৌর পরিষদের সভার রেজুলেশন পাঠানো হয়েছে। আর তাছাড়া রিক্সা লাইসেন্স নিয়ে অনেক রাজনৈতিক ঝামেলা আছে।

তিনি বলেন, যানজটের জন্য রিক্সা চালকদের ব্যাটারির খুলে নেয়া যাবে না। তাদের গাড়ি আটক করা যাবে না মর্মে সরকারিভাবে বলা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার জানান, যানজট সৃষ্টি করলে এমন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। এমন কোন নির্দেশনা তাদের কাছে আসেনি। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রণালয়।

শহরের ভেতরে চেলোপাড়া, দত্তবাড়ি, ষ্টেশন রোড, পার্ক রোড, বনানি মোড়, শাকপালার অবৈধ সিএনজি থ্রি-হুইলার স্ট্যান্ডে লিজ দেয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করে হয়েছে। এই সিএনজি  স্ট্যান্ড লিজ দেয়ায় শহরে যানজট আরো তীব্র হবে কিনা এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এতে যানজট হবে। আগে যা ছিল এখনও তা হবে না। অবৈধ এই স্ট্যান্ডগুলো থেকে অবৈধ চাঁদাবাজি চলছে। এতে পৌরসভা একটি আয় থেকে দেড় কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এই টাকা দিয়ে আমার পৌরসভার বেশ কয়েকটি রাস্তা হতো। পৌরসভা এই আয় থেকে বিরত হচ্ছে। তাই সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোকে লিজ দেয়া হচ্ছে।

অপর দিকে বগুড়া থেকে শেরপুর উপজেলা পর্যন্ত করতোয়া গেটলক নামের বাস গুলোকে শহরের সাতমাথায় অস্থায়ী করা হয়েছে। তাদের বিকল্প  রাস্তা থাকলেও তারা সাতমাথাকে ব্যবহার করায় যানজট চলছে দীর্ঘ দিন থেকে। পুলিশ বলছে তারা ঈদের মধ্যে সাতমাথা দিয়ে চলেব না। এমন কথা দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি।

এদিকে শহরের বাহির দিয়ে দুটি বাইপাস থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে বগুড়ার ভেতর দিয়ে (মাটিডালী থেকে সাতমাথা হয়ে বনানী) বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর ও ঢাকা গামী বাস চলাচল করায় সন্ধ্যার পর  যানজট আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু বেসরকারি  বাসই নয়। দিনের বেলায় বিআরটিসি‘র বাস চলছে অবাধে। নেয়া হচ্ছে না কোন ব্যবস্থা। তার সাথে শহরের কয়েকটি স্কুল-কলেজের বাস চলাচল তো আছেই।

এনসিএন/বিআর

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print