মে ১৭, ২০২৪ ৩:৩৮ পিএম

সম্ভাবনাময়ী এই ফসল হুমকির মুখে

বগুড়ায় কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ আখ চাষীরা

বগুড়ায় কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ আখ চাষীরা
বগুড়ায় কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ আখ চাষীরা। ছবি: এনসিএন

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার হাতিবান্ধা এলাকায় আখ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় চাষীরা। আখের পাশাপাশি সাথী ফসল উৎপাদন, ঝুঁকি কম থাকা এবং অল্প খরচে অধিক আয়ের কারণে এ ফসল চাষে ঝুঁকছেন ওই এলাকার কৃষকেরা। তবে কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতার অভাবে এক সময়ের অর্থকরী ফসলের মুখ থুবরে পড়ারও আশঙ্কা করছেন তারা।

মঙ্গলবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার হাতিবান্ধা ও নাগোরকান্দি এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আঞ্চলিক চাহিদা মেটাতে বেশ কয়েকজন কৃষক বিভিন্ন জাতের আখ চাষ করেছেন। বাজারে আখের চাহিদা থাকায় নিজেদের প্রচেষ্টায় এই ফসল চাষে অধিকাংশ কৃষকেরা সফলও হয়েছেন।

তবে তারা বলছেন, ‘এখন যতটুকু ফসল উৎপাদন করতে পেরেছি সেটি সম্পূর্ণই নিজেদের প্রচেষ্টায়। যে পরিমাণ ফসল উৎপাদন হয়েছে তাতে বেশ লাভও হবে। তবে এই সময় যদি কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পাওয়া যেত তাহলে আর্থিকভাবে আরও লাভবান হওয়া যেত।’

নাগোরকান্দি এলাকার ৭ শতক জমিতে ‘গ্যান্ডারিয়া’ জাতের আখ চাষ করেছেন নুুরুল আমিন। তিনি বলেন, আমি ধানের পরিবর্তে আখ চাষ করেছি। এতে আমার এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকার মতো। আখ পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত আরও ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। তবে যে পরিমাণ আখ হয়েছে তাতে করে বিক্রির সময় বেশ লাভবান হওয়া যাবে। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ পেলে বাণিজ্যিকভাবে এই ফসল চাষে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস। অবসর সময়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে নিজের পতিত ২ বিঘা জমিতে আখের চাষ করেছেন। তবে আখের আকার কিছুটা বক্র (বাঁকা) আকার ধারণ করেছে। এতে কিছুটা হতাশ তিনি। তার কথায়, ‘চাকরী জীবন শেষ করে অবসর সময়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে নিজের জমিতে আখের চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ঝুঁকি কম ও বাজারে এর চাহিদা থাকায় এই ফসল চাষ করতে শুরু করেন। তবে কৃষি অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তার পরামর্শ না পেয়ে হতাশ তিনিও।’

বগুড়ায় কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ আখ চাষীরা

আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমাদের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই আখের চাষ হচ্ছে। তবে গত কয়েকবছর যাবৎ এ এলাকায় কোনো কৃষি কর্মকর্তার দেখা মেলেনি। তারা যদি আমাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতেন তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতাম। কিন্তু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে একাধিকবার গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ এলাকার উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আল মুজাহিদ সরকার বলেন, ‘শিবগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। যার মধ্যে আখও রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিতে সহকারী কর্মকর্তারা রয়েছেন। মূলত বিষয়টি তারাই দেখেন।’

চলতি মৌসুমে কি পরিমান আখ উৎপাদন হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা জানালেন, কয়েক দশক আগেও আখ অর্থকরী ফসল ছিল। তবে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুগার মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই ফসল থেকে ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকেরা। আর এ কারণেই আখ উৎপাদনের সঠিক কোনো তথ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।

তবে কোনো কৃষক যদি এই ফসল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চান তাহলে কৃষি অধিদপ্তর তাদের পাশে থাকবে বলেও জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শিবগঞ্জ উপজেলায় কয়েকজন আখ চাষ করছেন। তারা শুধু নিজেদের জন্যই চাষ করছেন। তবে তারা বাণিজ্যিকভাবে আখ চাষ করলে তাদের পরামর্শ কিংবা ঋণের বিষয়েও সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, জেলায় ৭৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। সূত্রটি আরও জানায়, বগুড়ায় উৎপাদনকৃত এসকল আখ (গ্যান্ডারিয়া) শুধুমাত্র চিবিয়ে খাওয়ার জন্যই কৃষকরা চাষ করছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (ইক্ষু উন্নয়ন ও গবেষণা) পরিচালক মোঃ আশরাফ আলী বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় দেশে আখের উৎপাদন কমেছে। এর প্রধান কারণ হলো দেশে চিনি কলের সংখ‌্যা কমে যাওয়া। তবে উৎপাদন কমে গেলেও বেড়েছে আখের মূল্য। আগে যে আখটি টনপ্রতি সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হতো সেটি বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকাতে।’

তিনি বলেন, কৃষকরা যদি বাণিজ্যিকভাবে এই ফসল চাষ শুরু করেন এবং সেটা যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করা যায় তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন তারা। প্রান্তিক অঞ্চলে আখ চাষে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানে উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বানও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

 

এনসিএন/এআইএ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print