ঈদের ছুটিতে এসে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারালেন আব্দুর রাজ্জাক (৬৫) নামের এক আমেরিকা প্রবাসী।
মঙ্গলবার (৩ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার বাঘোপাড়ার মহিষাবাতানে এই ঘটনাটি ঘটেছে। জানা যায়, নিহত আব্দুর রাজ্জাক ওই এলাকার মৃত আব্দুল লতিফ সরকারের ছেলে।
গোপণ সূত্রে আরো জানা যায়, নিহত রাজ্জাক এর ছোট ভাই ওমর ফারুক সরকার এর ছেলে রুপম তার সাথে কয়েকজন দুর্বৃত্তসহ এই হত্যাকান্ড ঘটায়।
জানা যায়, এক মাস আগে আব্দুর রাজ্জাক সরকারের মা মারা যান। মঙ্গলবার ঈদের দিন রাতে তিনি বগুড়া শহর থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া করে মহিষবাথান গ্রামে যান। সেখানে মায়ের কবর জিয়ারত শেষে মহিষবাথান বন্দরে দোকানে বসে চা পান করছিলেন। এমন সময় তার ভাতিজা ওমর খৈয়ম সরকার রোপনের নেতৃত্বে ১০–১২টি মোটরসাইকেল যোগে একদল সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ফেলে। পরে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়।
তিনি তার ব্যবহৃত লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালানোর চেষ্টা করেন। দৌঁড়ে গিয়ে ত্রিমোহনীতে আব্দুর রাজ্জাক সরকার রাস্তায় পড়ে যান। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাথারী কুপিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পুলিশ খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৩ ভাইয়ের সম্পত্তি বিষয়ক পারিবারিক শত্রুতার জেরে এমন ঘটনা ঘটে। শহরের সুত্রাপুর এলাকায় ২৭ শতক একটি জায়গা ৩ ভাগ হবার কথা ছিলো। কিন্ত নিহত রাজ্জাক সরকার তা দীর্ঘদিন যাবত ভোগ–দখল করে আসছিলো এবং অন্য ভাইদের জায়গা দিতে অস্বীকার জানালে এমন ঘটনার স্বীকার হন নিহত রাজ্জাক।
নিহতের ছেলে শোভন সরকার জানায়, ‘বাবা (আব্দুর রাজ্জাক) আমেরিকার পাশাপাশি দেশেও থাকতেন। মূলত ব্যবসায়ী হওয়ার কারণেই তিনি আমেরিকাতে বসবাস করতেন। ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়েছিলেন বাবা। এদিন রাতে মহিষাবাতানে আড্ডা দিচ্ছিলেন বাবা। তখন ৬টি মোটরসাইকেলে ১৮ জন দুর্বৃত্তরা এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাবাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে।’
সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল হক জানান, ”সন্ত্রাসীদের মধ্যে ভাতিজা ওমর খৈয়ম সরকার রোপন ও গুলিবিদ্ধ জনি ও আল আমিনকে আটক দেখানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও বেশ কিছু গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিহতের পরিবার মামলা করেনি। লাশ মর্গে আছে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।”
সদর থানা পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেফতার পাঁচজনই রাজ্জাক হত্যায় সরাসরি জড়িত। রাত ১টার দিকে মহিষাবাতান এলাকার নতুন হাট বাজারে রাজ্জাককে কুপিয়ে হত্যার পর একটি প্রাইভেট গাড়ি (ঢাকা মেট্রো–খ ১৫–৫৫৭২) চড়ে তারা শহরে আসেন। এসময় দত্তবাড়ী মোড়ে সদর থানা পুলিশের একটি দল গাড়িটির বেপরোয়া গতি দেখে থামিয়ে দেয়। সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জনি ও আমিনকে শজিমেক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে গাড়ি তল্লাশি করে একটি বিদেশি পিস্তলসহ রুপম ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, রুপমসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঠিক কীজন্য হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে এটি আমরা এখনও নিশ্চিত নয়। গ্রেফতার সবার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের হয়েছে।
