জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপণ্যের বাজার এখন টালমাটাল অবস্থা। সপ্তাহের ব্যবধানে সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমূখী। বিশেষ করে আমিষের অন্যতম উৎস ডিমের ডজন ১১৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪৪ টাকা।
শনিবার (১৩ আগস্ট) সরেজমিন বগুড়ার ফতেহ আলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, দু’দিনের ব্যবধানে ডিমের হালিতে বেড়েছে ৪ টাকা। বৃহস্পতিবারে ডিমের ডজন ১৩২ টাকা ছিল, তা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৪ টাকা। তবে খুচরা পর্যায়ে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
বগুড়ার বাজারে ডিমের দাম বাড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, “গেল কয়েকমাসে কোন পণ্যের দাম কমেছে বলতে পারবেন? বাজারে তো শুধু ডিমই না, সব পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে কি হবে জানা নেই।”
তিনি বলেন, “মানবদেহের নানা অভাব পূরণ করতে প্রতিদিন ডিম খাওয়া জরুরি। আর সেকারণে দাম বাড়ার আগে চাহিদামত ডিম কিনতাম। এখন পুষ্টি চাহিদার কথা ভেবে নয়, আর্থিক দিক বিবেচনা করে ডিম কিনতে হচ্ছে।”
পাইকারির দরদাম
শাহ ফতেহ আলী বাজারে ডিম ঘরে ফার্মের লাল ডিম একশ ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯৫০ টাকায়। এক ডজনের দাম ছিল ১১৪ টাকা। আজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
এই বাজারের পাইকার মোঃ আল-আমিন বলেন, “আগামী কয়েকদিন ডিমের দাম কমার কোনো সম্ভাবনাই নেই। সব ধরনের খাবারের দাম বেড়ে গেছে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচও বেড়েছে।”
খুচরা বাজারের হালচাল
পাইকারিতে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। শহরের কলোনি বাজার, নামাজগড়, সুলতানগঞ্জ পাড়ার ১০ থেকে ১২ টি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে একশ পঞ্চাশ টাকা থেকে একশ পঞ্চান্ন টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।
এসব এলাকার খুচরা দোকানিরা বলছেন, শহরের পাইকারি বাজারগুলোতে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যটি তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন।
যেভাবে বাড়ছে ডিমের দাম
গেল কয়েকদিনে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে ডিমের দাম। আর এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। তবে হঠাতই ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ কি?
খামারি পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিমের দাম আরও আগেই বাড়ার কথা ছিল। তবে নানান কারণে সেটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু গত কয়েকদিনে ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তারা।
গেল ২ থেকে ৩ মাসের ব্যবধানে কয়েক ধাপে বিভিন্ন কোম্পানির মুরগির খাদ্যদ্রব্যের দাম (ফিড) বৃদ্ধি পেয়েছে বস্তায় সর্বোচ্চ ১ হাজার একশত টাকা। যা আগে ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়।
শুধু ফিডের দাম বেড়েছে তা নয়, ডিমের উৎপাদন পর্যায়ে অন্যান্য খরচ বেড়েও দ্বিগুন হয়েছে।
বগুড়ার এরুলিয়া গ্রামের খামারি সামসুল আলম জানান, ‘ডিমের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো ফিড। এছাড়াও বর্তমানে বড় একটি প্রতিবন্ধকতা হলো ‘লোডশেডিং’। এই সমস্যার কারণে ডিমের উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। পাশাপাশি সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে না পারায় মুরগির ওজন হ্রাস পাচ্ছে। এতে মুরগিগুলো ডিম দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। মূলত তখনই উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে বাজারে সংকট তৈরী হচ্ছে।’
‘সিন্ডিকেটের’ বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিমের বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে এ কথাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। কেননা ডিম কিন্তু সারা বছর সংরক্ষণ করা হয় না। শুধুমাত্র রমজান মাসেই ডিম হিমাগারে রাখা হয়। এরপর সারা বছর খামার থেকে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে ডিম সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বাজারে ডিমের সংকট তৈরী হচ্ছে এই পণ্যটির উৎপাদন কমে যাওয়াতে। অনেক ছোট ছোট খামারি আছেন যাদের অনেকেই এ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ার এটিও বড় একটি কারণ।’
শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোক্তা পর্যায়ে খাওয়ার জন্য যে ডিমগুলো উৎপাদন করা হয়, তার অধিকাংশই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করছে। মূলত তারাই ডিমের দাম ওঠা-নামা করে থাকে। যার প্রভাব পড়ে পাইকারি ও খুচরা দোকানে।
এসব প্রতিষ্ঠান শুধু ডিমই নয়, এই পণ্যটি উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রই নিজেদের দখলে রেখেছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। তাদের সাথে পাল্লা দিতে না পেরে একে একে হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের খামারিরা। ফলে বাজারে সৃষ্টি হচ্ছে ডিমের কৃত্রিম সংকট। সেই সুযোগে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।