ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

দ্বিতীয় বিবাহ করায় চিঠি লিখে

বাবার ওপর অভিমান করে প্রাণটাই দিলো কিশোরী মেয়ে

নওগাঁর মান্দা থানা পুলিশ একটি বাসা থেকে আফরিন আক্তার রিভা (১৫) নামের এক কিশোরী মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে। মাকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করায় বাবার ওপর অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন কিশোরী ওই মেয়ে। আত্মহত্যা করার আগে সে বাবার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে যায়।

এ ঘটনার পর বাবা আকবর ও সৎমা রোজিনা বেগম পলাতক রয়েছে।

শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে উপজেলার প্রসাদপুর বাজারের হোমিও চিকিৎসক আব্দুস সালামের ভাড়া বাসায় হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আফরিন আক্তার রিভা মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী। এবং তিনি জেলার পত্নীতলা উপজেলার কাঁটাবাড়ি গ্রামের আকবর হোসেনের মেয়ে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, নিহতের বাবা আকবর হোসেন স্ব-পরিবারে উপজেলার প্রসাদপুর বাজারের পার্শে বড়পই গ্রামের হোমিও চিকিৎসক আব্দুস সালামের বাসায় ভাড়া থাকতেন। গত দুই মাস আগে তার বাবা আবারও দ্বিতীয় বিয়ে করে। এরপর গত তিনদিন আগে রিভার মাকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তার মা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ায় তার ছোট ভাই ও সে একা হয়ে পড়ে। বিষন্নতায় ভুগতে থাকে। এরইমধ্যে শুক্রবার রাতের কোন একসময় সে তার শয়নকক্ষে ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ বিষয়টি জানাজানি হলে তার লাশ ফেলে বাবা ও সৎ মা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন অন্তে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা মর্গে প্রেরণ করেন। এসময় হাতের লেখা এক চিরকুট পাওয়া যায়।

রিভার ছোট ভাই আল রিয়াদ জানায়, শুক্রবার সৎমা রোজিনা বেগম বোনকে মারধর করে। এরপর সে কিছুই খায়নি। রাতে তাকে মুরগির গ্রিল কিনে খাওয়াই। এরপর সে আলাদা ঘরে ঘুমায়। সকালে কোচিং থেকে ফিরে দেখি দরজা বন্ধ। প্রতিবেশীদের সহায়তায় দরজা ভেঙে দেখি, ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছে বোন।

রিভার জন্মদাতা মা রুমালি আক্তার বলেন, আমার স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করে দুই সপ্তাহ আগে রোজিনাকে বাসায় তোলে। এরপর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। মেয়েকে নিতে চাইলেও স্বামী বাধা দেন। আজ আমাকে মেয়ের লাশ দেখতে হলো। আমি স্বামী ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে দায়ী করছি।

মৃত্যুর আগে লেখে যাওয়া চিরকুট পাঠকদের জন্য হুবুহু ধরা হলোঃ

শ্রদ্ধেয় মো: আকবর হোসেন:

মো: আকবর হোসেন আপনি ঠিক কতটা খারাপ হয়ে গেছেন তা বলে বোঝানোর মত না। আপনি অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে এসে বলছেন যে আমার মা। আপনি যতটা সহজে কথাটা বলছেন ততটা সহজ কিন্তু না। এখন আমি যদি আপনার মায়ের জায়গায় আরেকটা মেয়েকে নিয়ে এসে বলতাম যে আপনি তাকে মা বলে ডাকবেন পারতেন আপনি মা বলে ডাকতে বলেন পারতেন। আমি দেখছি আমার মা আপনাকে কতটা ভালবেসেছে আর আপনি কতটা আঘাত দিসেন। আপনি ঔ মহিলার মোহে অন্ধ হয়ে আমাদেরকে মিথ্যাবাদী বলছেন আমি কথাটা কখনো কল্পনাও করিনি। আপনি আমার জীবনটাকে তচনচ করে দিসেন। আপনি আমার কাছ থেকে আমার মাকে কেড়ে নিছেন। মানুষ এতোটা খারাপ আপনাদের না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আর আমার বান্ধবীদেরকে বলব তোরা অনেক ভালো। তোরা আমার জন্য অনেক কিছু করছিস। যা তোদের আমি মুক্তি দিলাম। আর তোদের বিরক্ত করব না। সবাই বলবে মেয়েটা কতো খারাপ ওর জাহান্নামেও জায়গা হবে না। কিন্তু মেয়েটা যে কতো কষ্ট কতো অভিমান আর কতো দুঃখ নিয়ে এই পৃথিবী থেকে গেছে তা আপনারা কি করে বুঝবেন। আর পারভিন মেমকে কে কি বলছে আমি কিন্তু জানি কিন্তু আমি তার নাম বলব না। তো এতটুকুই আর কাওকে বিরক্ত করব না। আল্লাহ হাফেজ। সবার জন্য দোয়া করব।

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনসুর রহমান জানান, খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করেছে। এবং মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print