অক্টোবর ১৫, ২০২৫ ৯:২২ পিএম

বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের ৫০ মিলিয়ন ডলারের সবজি রপ্তানি

প্রতি বছর সবজিতে মূল্য না পেয়ে হতাশ হতেন দেশের কৃষকেরা। বাঁধাকপি, ফুল কপি, আলু, মিষ্টি কুমড়া, গাজর উৎপাদন খরচও তুলতে পারতেন না তারা। আগে দেশে বিপুল পরিমান বাঁধাকপি উৎপাদন হতো। ক্রেতার অভাবে বাঁধা কপি গরু- ছাগলের খাদ্য হিসাবে বিক্রি হতো। অনেক কৃষক হাটে বিক্রি করতে না পেরে হাটেই কপি ফেলে চলে আসত। কিন্তু এখন দিন বদলেছে।

দেশে উৎপাদিত বাঁধাকপি, আলু মিষ্টি, কমড়া ,গাজর বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে বিদেশে আলু ও বাঁধা কপির চাহিদা বেশি।

রফতানিকারক বাররন এগ্রো লি: এর সত্বাধিকারী আরিফ আজাদ প্রিন্স জানান, বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৭শ‘ জন রফতানী কারক প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সবজি রফতানী করে থাকেন। তিনি শুধু বাঁধাকপি রফতানী করে থাকেন তিন মিলিয়ন ডলার। শীত কালিন সবজি ছাড়া প্রায় সারা বছর আলু ও মিষ্টি কুমড়া রফতানী করে থাকেন। বাংলাদেশের সবজির মান ভালো হওয়ায় বিদেশে সবজির বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে।

বগুড়া মহাস্থান হাটের সবজির হাটের কৃষক শ্যাম সুন্দর জানান, আগে আমরা দেশে বাঁধা কপির দাম পেতাম না। এখন এই পন্য বিদেশে রফতানী হওয়ায় এখন বাঁধাকপির বাজার দর ভাল। আগে বিক্রি না করতে পেরে বাঁধা কপি হাটেই ফেলে আসতে হতো।

সবজি রফতানী করকের মধ্যস্থতাকারি মেসার্স সাগর ট্রেডার্স এর স্বত্তাধিকারি সাগর ইসলাম জানান, তিনি সবজি সংগ্রহ করে চট্রগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দেন। এর পর রফতানী কারক বিদেশে বায়ারদের কাছে পাঠিয়ে দেন।

তিনি বলেন, কপি রফতানীতে সতর্ক থাকতে হয়। এর গায়ে যেন কোন দাগ না পড়ে। সে জন্য পরিষ্কার সাদা কাগজে মুড়িয়ে প্লাসিটকের ব্যাগে করে কনটেনারে করে জাহাজে তুলে দিতে হয়। সব কৃষি পন্য বিষ মুক্ত।

তিনি আরও বলেন, এবার রফতানি কারক জাপান থেকে বাঁধা কপির বীজ আনেন। সেই বীজ নির্দিষ্ট কৃষকদের দিয়ে আবাদ করে তাদের বাজার মুল্যে থেকে ২ থেকে ৩ টাকা বেশী দিয়ে তাদের নিকট থেকে কপি কিনে নেয়া হয়। এবার এই জাতের কপি ভালো হয়েছে।

রফতানী কারক বাররন এগ্রো লি: এর সত্বাধিকারী আরিফ আজাদ প্রিন্স জানান, বাংলাদেশের সবজির গুনগত মান উন্নত হওযায় মালোয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, তাইওয়ান ও ইউরোপীয় ইউনিয়েনের বেশ কয়েকটি দেশে রফতানী হয়ে থাকে। সবজি রফতানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া গেলে বিদেশের বাজার সম্প্রসারিত হবে।
সবজি রফতানীর বেশির ভাগ বিদেশের বাজারে যায় বগুড়ার শিবগঞ্জ ও শাজাহানপুর উপজেলা থেকে। সিংহ ভাগ শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে বেশি বাঁধাকপি, আলু ও মিষ্টি কুমাড়া রফতানী হয়ে থাকে। স্থানীয় শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ জানান রফতানী কারকরা সবজির ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে রফতানি করে থাকে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চরের রফতানী কারক আরিফ আজাদ প্রিন্স গত শনিবার মুঠোফেনে জানান, গত বছর ৩ হাজার টন কপি রফতানী করেছেন। দেশের প্রায় সাড়ে ৭শ‘ জন রফতানীকারক প্রতিবছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলারের সবজি রফতানী করে থাকেন।

এবার অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। জাহাজের পেমেন্ট করতে ডলারে দিতে হয়। এতে রফতানী খরচ বেশি হয়। তিনি বলেন দেশে রফতানীর পঞ্চাশ শতাংশ সবজি তিনি একাই রফতানী করে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে গত বছর দেশের ৭৫০ রফতানী কারক আছে। তিনি প্রতিবছর শুধু বাঁধা কপি ৬ হাজার টন রফতানি করে থাকেন। এ ছাড়া আলু , মিষ্টি কুমড়াতো আছেই ।এরই মধ্যে আলু রফতানী শুরু করবেন।

গত বছর ২০ থেকে ২২ হাজার মেট্রিকটন আলু রফতানি করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে গ্যানেলা, ডায়মন্ড ও এ্যষ্টারিক জাতের আলু রফতানী করে থাকেন তারা। বিদেশে এই আলু চাহিদা বেশী। গোল আলু বিদেশে চলেনা। বিদেশে বাংলাদেশের সবজির খুব সুনাম অর্জন করেছে। বায়াররাও বাংলাদেশের সবজির গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print