মে ১৭, ২০২৪ ৪:৩৮ পিএম

ভয়ঙ্কর ড্রাগ স্কোপোলামাইন ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ এখন বগুড়ায়

ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ টাকা তুলে নেয়ার সময় বিদেশী নাগরিক পরিচয় দেয়া ব্যক্তি। ছবিঃ এনসিএন
ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ টাকা তুলে নেয়ার সময় বিদেশী নাগরিক পরিচয় দেয়া ব্যক্তি। ছবিঃ এনসিএন

অপরিচিত কোন ব্যাক্তি এসে আপনার সাথে কুশল বিনিময় করে হাত মেলালো। তারপর তার কাছে থাকা টাকা বের করে ভংতি চাইলো। আপনি তার টাকা স্পর্শ করে ভাংতি করে দিতে গেলেই ভয়ঙ্কর স্কোপোলমাইন বা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস নামের এক ভয়ঙ্কর ড্রাগসের কবলে পড়ে যাবেন। এরপর আপনি সেই অপরিচিত অপরাধীর নিয়ন্ত্রনে চলে যাবেন। আপনি তার নির্দেশ পালন করতে বাধ্য হবেন। ঐ মূহুর্তে আপনি বুঝতে পারবে না, আপনি কি করছেন। পরে ঐ প্রতারক চক্র চলে গেলে আপনার হুস ফিরলে দেখবেন আপনার কাছে রক্ষিত টাকা আপনার কাছে নেই।

স্কোপোলামাইন বা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস নামের এক ভয়ঙ্কর ড্রাগস ব্যবহার করে মানুষকে বস (নিয়ন্ত্রন) করে মুহুর্তের মধ্যে সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। প্রথমে অচেনা মানুষটি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা পথচারীদের প্রথমে কয়েকবার করমর্দন করে পরিচিত হচ্ছে। এরপর ব্যবসায়ী বা পথচারীকে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ নেয়, তারা যা বলে প্রতরিত ব্যাক্তি তার কথা শুনতে বাধ্য হয়। অপরিচিত প্রতারক চক্রের কাছে আত্মসমর্পন হওয়ার পর প্রতারিত ব্যক্তি তার ক্যাশ কাউন্টার বা পকেটে থাকা সর্বস্ব তুলে দেয় প্রতারক চক্রের কাছে। যেহেতু টাকা বা কাগজ স্পর্শের মাধ্যমে ড্রাগসটি ছড়ায় তাই কোরবানীর হাটে এই চক্রের কবলে পড়ার আশংকা করছেন সাধারণ মানুষ।

আরো পড়ুনঃ বগুড়ায় তারুণ্যের সমাবেশ ঘিরে সতর্ক পুলিশ

গত শনিবার বগুড়া শহরের একটি আলিম ম্যানসন মার্কেরটের সেতু ইলেক্ট্রিক নামের একটি দোকানে দুপুর ১ টায় এমনি দুই প্রতারক চক্রের সদস্য (একজন বিদেশি ও একজন বাংলাদেশী) এসে নিজের পরিচয় দেয়। দেশী লোকটি বিদেশীর কথার অনুবাদ করে দেয়। বিদেশী প্রতারক ইলেক্ট্রিক দোকানের ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের সাথে দুইবার হাত মেলান। পরে আব্দুর রহমানের কাছ থেকে টাকা খুচরা করতে চান। ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, মূহুর্তেই তিনি সেই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে যান এবং যা করতে বলেন তিনি তাই করেন। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে তার চোখের সামনে ক্যাশ বাক্সের ড্রয়ার থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে দোকান থেকে প্রতারক চক্র বেরিয়ে যান। পরে তার ঘোর কেটে গেলে তিনি ড্রয়ার খুলে দেখেন ড্রয়ারে টাকা নেই।

দোকনের কর্মচারী আশরাফ আলী জানান, তিনি দোকানে ভীড়ের মধ্যে থেকে ঐ দুই প্রতারককে দ্রুত বেড়িয়ে যেতে দেখেন। এই সকল কর্মকান্ড সিসি ক্যামেরা ফুটেজে তার সত্যতা পাওয়া যায়।

একই দিনে বিআরবি ক্যাবলের মার্কেটিংয়ে কাজ করা  হাসান জামান এই প্রতারনার স্বীকার হন। তিনি জানান, প্রতারক দুই জন তার কাছে লাল এক হাজার টাকার নোট দেখতে চাইলেন। তিনি টাকা বের করে দেখান। সাথে সাথে তিনি প্রতারকদের নিয়ন্ত্রনে চলে যান। সেই মুহুর্তে তার সাথে প্রতারক চক্রের কি কথা হয়েছে তিনি তা মনে করতে পারছেন না। পরে তিনি তার পকেটে রক্ষিত ৪০ হাজার টাকার মধ্যে নয় হাজার পাঁচশত টাকা খুঁজে পাননি। পূর্বের ঘটে যাওয়া সিসি টিভির ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হতে পারেন ঐ দুই ব্যাক্তি তার সাথে প্রতারনা করে টাকা নিয়ে গেছে।

আরো পড়ুনঃ বগুড়ায় ৩য় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা, শিক্ষকের বিচারের দাবী ও পদত্যাগের জন্য বিক্ষোভ

বিষয়টি সম্পর্কে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর ডা: মওদুদ হোসেন আলগমগীর জানান, এই ড্রাগটি বোরাচেরো গাছের ফুল থেকে পাউডার করা হয়। নিষিদ্ধ এই ড্রাগটি দক্ষিণ আমেরিকাতে একটি চক্র ব্যবহার করে। এর ফলে সেখানে প্রতিদিন অনেক আক্রান্ত রোগী হাসপালে ভর্তি হচ্ছে। অপরাধীরা এই ড্রাগটি করমর্দন করার সময় শরীরে প্রবেশ করাতে সক্ষম হয়। এটি টাকা ও কাগজ স্পর্শের মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করতে পারে। স্কোপোলামাইন ব্যাবহার করলে একটি মানুষ ৬ থেকে ১৮ ঘন্টা অচেতন করে রাখতে পারে। তবে অপরাধীরা নির্দ্দিষ্ট সময়ের জন্য মানুষকে বসে (নিয়ন্ত্রনে) আনতে পারে।

জেলার উপশহরে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বলে জানান, জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। তিনি জানান, এভাবে প্রতারনা করে এক মহিলার কাছ থেকে গহনা নিয়ে যায় প্রতারক চক্র। এ নিয়ে পুলিশ কাজ করছে বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া র‌্যাব-১২ ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার (পুলিশ সুপার) মীর মনির হোসেন জানান, তিনি বিষয়টি সর্ম্পকে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেবেন।  তিনি বগুড়াবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, কোন অপরিচিত লোক হঠাৎ কথা বলতে চাইলে যেন হাত না মেলান, কোরবানীর হাটে টাকা লেনদেনের মাধ্যমকে তারা ব্যবহার করতে পারে। সেক্ষেত্রে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শফিউল আজম জানান, এটা এক ধরনের ভয়ঙ্কর ড্রাগস। অপরাধীরা মূহুর্তের মধ্যে মানুষকে নিয়ন্ত্রণে এনে সর্বস্ব লুট করে নেয়। কোরবানীর হাটে এ ধরনের প্রতারনা হওয়ার আশংঙ্কা থাকতে পারে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print