ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ১:৩০ অপরাহ্ণ

বদলগাছী মহিলা ডিগ্রী কলেজের

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগকে বিধি পরিপন্থী ঘোষণা

নওগাঁর বদলগাছী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগে মানা হয়নি নিয়ম। অভিযোগ উঠেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মেনে বিধি পরিপন্থীভাবে সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কলেজের জৈষ্ঠ্যতার তালিকা অনুযায়ী পাঁচ শিক্ষককে ডিঙিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান তাকে এ দায়িত্ব দেন। 

এদিকে সদ্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়া মমতাজ জাহান সমাজকর্ম বিভাগের হওয়ায় বিধি পরিপন্থী বলে মন্তব্য করা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বিধি পরিপন্থী উল্লেখ করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। বিষয়টি গত রবিবার ৫ জানুয়ারি জানাজানি হলে শুরু হয় জল্পনা কল্পনা।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য মঙ্গলবার ৭ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত মুঠোফোনে জানার চেষ্টা করা হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার কল রিসিভ করেননি।

জানা যায়, গত বছর ২৭ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধ ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একই কলেজের ছাত্রী নুসরাত জাহান রিয়াসহ কিছু শিক্ষার্থী তৎকালীন অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং দূর্নীতির অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসানের কাছে স্মারক লিপি জমা দেন। এর প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ মাহবুব আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দাখিল করতে বলা হয়। এরপর মাহবুব আলম ৯ সেপ্টেম্বর লিখিত জবাব দাখিল করেন।

পরবর্তীতে ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি সংশোধিত বিধি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক প্রেরণ করে। এবং ২৭ অক্টোবর ইউএনও’র যোগসাজশে এডহক কমিটি গঠন করে অধ্যক্ষ মাহবুব আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করার কারণে অধ্যক্ষ পদ শূন্য হয়। পরে ইউএনও এবং এডহক কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান ওই কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ দেন। বিষয়টি নিয়ে কলেজের শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এরপর সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ মাহবুব আলম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে গত ২২ ডিসেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডহক কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, অত্র কলেজে স্নাতক পর্যায়ে সমাজকর্ম বিষয়ের অধিভুক্তি না থাকায় সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মমতাজ জাহান এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ধারা ও উপধারায় বিধি পরিপন্থী। বিধায় বিধি মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃক স্নাতক পর্যায়ে স্বীকৃত কোন বিষয়ের জ্যেষ্ঠতম এক জন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়। কিন্তু এই চিঠি প্রাপ্তির ১৫ দিন পার হলেও কলেজের এডহক কমিটি কোন ব্যবস্থা নেননি।

জানা যায়, কলেজের জ্যেষ্ঠতম পাঁচ শিক্ষককের তালিকায় রয়েছেন যথাক্রমে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, সমাজবিজ্ঞানের সারমিনা, বাংলা বিভাগের উম্মে হাবিবা, দর্শন বিভাগের উজ্জল কুমার প্রামানিক ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের আব্দুল হাসিব চৌধুরী।

সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, মাহবুব আলমকে বহিষ্কার করা হলে ইউএনও অফিসে আমাকে ডাকা হয়েছিলো। এডহক কমিটির সভাপতি এবং তার গ্রুপ আমাকে বাদ দিয়ে মমতাজ জাহান কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। যার কারণে বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছে।

সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক সারমিনা বলেন, অর্থনীতি বিভাগের আনোয়ার হোসেন কে ইউএনও অফিসে ডাকা হয়েছিলো। মমতাজ জাহানের বাহিনী আনোয়ার হোসেন কে সরাসরি এবং ফোনে ভয়ভীতি দেখালে সে দায়িত্ব নিতে রাজি হয় নি। সেখানে অন্যদের কাউকেই জানানো হয় নি। মমতাজ জাহান জোড় করে চেয়ার দখল করে আছে।

বর্তমান বদলগাছী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতাজ জাহান জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি সম্পর্কে আমি জানি। সত্য কিনা জানি না। আমাকে সভাপতি এবং ইউএনও নিয়োগ দিয়েছে। আমি জোড় করে এই চেয়ারে বসিনি।

কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি পেয়েছি। আমরা কয়েকজন কলেজ পরিদর্শকের কাছে যাবো। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দুপুর আড়াই টার দিকে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান মুঠোফোনে বলেন, পট পরিবর্তনের সময় সিচুয়েশন নিয়ন্ত্রণের জন্য ছাত্র-ছাত্রীর চাওয়াতে মমতাজ জাহান কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়েছিল। এখন নতুন কমিটি হয়েছে। কমিটির দায়িত্বে আমি নেই। তাই নতুন কমিটির সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিবে এখন কাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print