অক্টোবর ১, ২০২৫ ২:০৯ এএম

মমতাজের বিরুদ্ধে ভারতের গ্রেফতারি পরোয়ানা

টাকা নিয়েও অনুষ্ঠান করতে না যাওয়ায় বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণাসহ একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলো বাংলাদেশি পপ সম্রাজ্ঞী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর আদালত এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ১৫ বছর আগের এই মামলায় এই নিয়ে চতুর্থবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হল মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, প্রায় চৌদ্দ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতেন মমতাজ। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য সেখানকার শক্তিশঙ্কর বাগচী নামে এক ইভেন্ট অর্গানাইজার এর সাথে গায়িকার লিখিত চুক্তি হয়। সেইমতো ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বহরমপুরের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান শিল্পী হিসেবে মমতাজকে প্রায় ১৪ লাখ রুপির বিনিময়ে বায়না করেছিলেন উদ্যোক্তারা।

তবে অভিযোগ, টাকা নেওয়ার পরও অনুষ্ঠানে হাজির হননি গায়িকা। যথারীতি অনুষ্ঠানস্থলে ভাঙচুর হয়। চরম হেনস্তার মুখে পড়তে হয় অনুষ্ঠানের আয়োজক শক্তিশঙ্কর বাগচীকে। পরে টাকা ফেরত দিতেও অস্বীকার করেন মমতাজ। এরপর চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হন শক্তি। কিন্তু থানা অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।

এরপর বাধ্য হয়ে বহরমপুর আদালতের দ্বারস্থ হন শক্তি। মমতাজের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণাসহ একাধিক ধারায় মামলা করেন। সেই সূত্রে ২০০৯ সালে মমতাজের বিরুদ্ধে সমন জারি করে আদালত। পরে সমন কার্যকর না করায় তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এরই মধ্যে নিম্ন আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে আসেন গায়িকা।

পরে নিম্ন আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শক্তিশঙ্কর বাগচী। ২০১০ সালে নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করে মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রাখে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে মামলায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একে একে তিনবার আগাম জামিন পেয়ে যান গায়িকা ।

এরপর গত ৯ই আগস্ট ফের আদালতে হাজিরা এড়িয়ে যান গায়িকা। বাংলাদেশ হাই কমিশন মারফত জানানো হয় এই মুহূর্তে একটি কনসার্টের কারণে কানাডায় অবস্থান করছেন গায়িকা। তাই আদালতে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এমন অবস্থায় আগাম নোটিশ থাকা সত্ত্বেও আদালতে গায়িকা হাজির না হওয়ায় ফের তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী শক্তি শঙ্কর বাগচীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন “অভিযুক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার সাথে আমার চুক্তি হয়েছিল। বিনিময়ে তিনি ১৪ লাখ রুপি নিয়েছিলেন আমার থেকে। এরপর তিনি শো করেন নি। যার জন্য আমাকে বড়সড় আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল। আমি এই ঘটনার পর বারবার ঢাকায় যাই। তাকে অনুরোধ করি আমার অনুষ্ঠান করে দেওয়ার জন্য। সব মিলিয়ে তাকে ৭৫ হাজার বার আমি ফোন করেছি। সমস্ত ফোন কলের ডিটেলস আমি আদালতে পেশ করেছি। এরপর আদালত তার বিরুদ্ধে সমন করেছিল। কিন্তু তিনি আমাকে চেনেন না বলে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হলে তিনি মামলায় সহযোগিতা করবেন বলে আগাম জামিনও নেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রকার সহযোগিতা করছেন না। তিনি কলকাতায় আসেন তবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীদের অনুষ্ঠান করে বেড়ান। আমার অনুষ্ঠান করার তার সময় হয় না। যেহেতু তিনি প্রভাবশালী তাই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে না। এমনও হয়েছে পুলিশ আদালতে গিয়ে এর জন্য ক্ষমা চেয়েছে।”

তার আরোও অভিযোগ আদালত আইনকে ফাঁকি দিতে “টেরোরিস্ট কায়দায় ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট এর আড়ালে নিজের পরিচয় বদলে ফেলেছেন অভিযুক্ত। মমতাজ (mamtaj) বেগমের পরিবর্তন করে হয়েছেন মোমোতাজ (momotaj) বেগম।” শক্তি বাবু আরো বলেন তিনি নিশ্চিত অভিযুক্ত এখন কানাডায় যাননি। তিনি আদালতকে এড়িয়ে যেতে সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

এনসিএন/এসকে

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print