অক্টোবর ১৫, ২০২৫ ৩:৫৩ এএম

লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে বউমেলা; হয়ে গেল নদীতে শত শত নৌকার নৌবহর

চুরির দোকানে দোকানে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষের উপচে পড়া ভীড়। সঙ্গে আছে ছোট ছোট শিশুরা। একেকজন একেক রকম জিনিস পছন্দ করছেন। 

এদিকে বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে আছেন ক্লাব ও মেলা কমিটির সদস্যরা। যার কারণে অনায়াসেই বেচাকেনা করতে পারছে ক্রেতা ও বিক্রেতারা। বুধবার ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বিতীয় দিনে বউ মেলা।

এর আগে মঙ্গলবার ৭ অক্টোবর দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে ছোট যমুনা নদীতে শত শত নৌকার নৌবহর। এব জামাইদের মিষ্টি-মাছ কেনার ধুম।

এভাবেই শত শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নওগাঁর রাণীনগরে এলাকার স্থানীয়রা। লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল বাজারে দুই দিন ব্যাপী জমজমাট এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নদীতে শত শত নৌকা। একেকটি একেক রকমের সাজানো। ঢাক-ঢোল আর সাউন্ড বক্স ও মাইকের সাউন্ডে মুখরিত চারেদিক। সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন বয়সের ছেলে-মেয়েসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের নাচানাচি। আর সেই দৃশ্য উপভোগ করতে নদীর দু’পারে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। এমনই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ফুটে উঠে ছোট যমুনা নদীতে শত শত নৌকার নৌবহরে।

স্থানীয়রা তাদের শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিমা বিসর্জনের দিন থেকে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে কুজাইল বাজারে দুই দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেন। মেলায় বসে হরেক রকমের দোকানপাট। মেলার প্রথম দিন মঙ্গলবার মূল আর্কষণ নৌবহর। আর দ্বিতীয় দিন বুধবার হয়েছে বউ মেলা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর রাজবাড়ির রাজবাহাদুর শ্রী. অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ীর রাজত্ব পরিচালনার আগে থেকে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রায় দুই’শ বছর থেকে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জনের দিন থেকে এ মেলা শুরু হয়। ঐতিহ্যবাহী এ মেলার বিশেষ আর্কষণ লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর। এদিন দুপুরের পর থেকে রাণীনগর, আত্রাই, মান্দা, নওগাঁ সদরসহ কয়েকটি উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় চড়ে আসতে থাকে। পাশাপাশি মেলা ও নৌবহর উপভোগ করার জন্য নৌকায় ঘুরে বেড়ান অন্যান্য ধর্মের মানুষও। সাউন্ড বক্স, মাইক আর ঢাকের তালে তালে নৌকায় বিনোদনপ্রেমীদের নৃত্যে মুখরিত হয়ে উঠে ছোট যমুনা নদী। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিলনমেলায় পরিণত হয় নদীর দু’পার। মঙ্গলবার প্রায় ৪ শতাধিক নৌকা নদীতে নৌবহরে মেতে উঠে। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

কুজাইল হিন্দুপাড়া গ্রামের সুজন সরকার, মিঠু ও গোবিন্দসহ অনেকে বলেন, পূর্ব পুরুষেরা এ মেলা শুরু করে গিয়েছেন। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি। দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব হলেও আমাদের এখানে লক্ষ্মীপূজার আনন্দটা বেশি হয়।

গৃহবধূ মুক্তা প্রামাণিক বলেন, মেলায় এসেছি কিছু কেনার জন্য। ছোট ছোট শিশুদের জন্য কিছু কেনার পাশাপাশি আমার জন্যও কিছু কিনবো। এছাড়া মেলায় কিছু খাব। এর আগে গতকাল নৌকায় চড়েছিলেন। প্রায় ৮ বছর থেকে নৌকায় চড়ে নৌবহর উপভোগ করেছি। এবারও মেলায় গিয়ে সেটা উপভোগ করার জন্য নৌকায় চড়েছি।

মেলা কমিটির সদস্য সচিব শামসুল রহমান বলেন, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় আমরা হিন্দু মুসলিম একে অপরকে সহযোগিতা করি। এ মেলায় অনেক দুর দুরান্ত থেকে নৌকা নিয়ে এসে নৌবহরে যুক্ত হয়। যা হাজার হাজার নারী পুরুষ উপভোগ করেন। এবারের মেলায় প্রায় চারশত দোকান বসেছে।

কুজাইল বাজার জাগরণ সংসদ ক্লাবের সভাপতি শাহিদুর রহমান বলেন, শত শত বছর আগে থেকে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে এখানে মেলা হয়ে থাকে। মেলার মূল আকর্ষন নৌবহর। যা নদীর দু’পারের হাজার হাজার মানুষ উপভোগ করে। মেলায় জামাইদের বড় বড় মাছ, মিষ্টিসহ হরেক রকমের খাবার কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। মেলার দ্বিতীয় দিন বউমেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমরা হিন্দু মুসলিম উভয়ে মিলেমিশে এই আনন্দ উপভোগ করি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে। যা বলা যায় এক প্রকার সেতু বন্ধন।

তিনি আরও বলেন, এই মেলা উপলক্ষে আগে থেকে কাউকে কিছু বলতে হয়না। এমনিতেই দূর দূরান্ত থেকে হরেক রকমের দোকানের সমাগম ঘটে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print