অক্টোবর ১, ২০২৫ ১২:৪১ এএম

বিশ্ব পর্যটন দিবস

সর্বপ্রাচীন জনপদের পুণ্ড্রর্বধনের রাজধানী পুণ্ড্রনগর আজকের মহাস্থানগড়

বাংলার ইতিহাসে জ্বলজ্বল করা এক নাম — মহাস্থানগড়। আড়াই হাজার বছরের পুরোনো এই জনপদ এক সময়ের পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুণ্ড্রনগর, যা কালের বিবর্তনে পরিচিতি পেয়েছে মহাস্থানগড় নামে।

১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় এখনও পর্যন্ত সন্ধান মিলেছে ছোট-বড় ৩২টি স্থাপনার।

মহাস্থানের প্রত্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে অলংকৃত পাথরের স্তম্ভ, দেব-দেবীর মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, গহনা, প্রাচীন মুদ্রা আর অসংখ্য নিদর্শন। এই জাদুঘর, ইতিহাস আর কিংবদন্তির মিলনস্থল।

জাদুঘরের পাশেই গোবিন্দ ভিটা, যার নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে দেবতা বিষ্ণুর স্মৃতি। আরো রয়েছে পরশুরামের রাজপ্রাসাদ — শেষ সনাতন রাজা, যিনি শাহ সুলতান বলখীর সঙ্গে যুদ্ধে প্রাণ হারান। তার মৃত্যু দিয়েই শুরু হয় এই অঞ্চলে মুসলিম শাসনের।

পরশুরামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ‘জিয়ৎকূপ’-এর কিংবদন্তি, আর তার কন্যা শিলাদেবীর আত্মাহুতির কাহিনি আজও মিশে আছে শিলাদেবীর ঘাটের পবিত্র জলে।

সাধক শাহ সুলতান বলখীর মাজারও রয়েছে এখানে, যিনি নাকি এসেছিলেন মাছের পিঠে চড়ে —যার নামেই এসেছে “মাহিসওয়ার” উপাধি। মাজারে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে এই ভূমির সৌহার্দ্য।

এখানেই আছে বেহুলার বাসরঘর, যেখানে মনসামঙ্গলের কিংবদন্তি আজও জেগে আছে। আর চাঁদ সওদাগরের জাহাজ ডুবে যাওয়া সেই কালীদহ সাগর — এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে।

ভাসু বিহার, মানকালীর ঢিঁবি, বৈরাগীর ভিটা —এমন শত শত দর্শনীয় স্থান যেন ইতিহাসকে টেনে আনে চোখের সামনে। ইতিহাস, সংস্কৃতি আর লোককাহিনির এক অনন্য মিলনমঞ্চ —মহাস্থানগড় শুধু প্রাচীন জনপদ নয়, বাংলার হাজার বছরের গৌরবগাথার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print