ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি নেতার ইশারায়

সান্তাহারে ২৫ বছর কর্মরত একজনকে আ’লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে চাকরিচ্যুত, সমালোচনার সৃষ্টি

বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে ২৫ বছর ধরে কর্মরত রাম চন্দ্র (৫২) নামের এক ব্যক্তিকে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ উঠেছে সান্তাহারের প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতা ও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।

অনেকেই বলছেন ওই বিএনপি নেতার ইশারায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে বগুড়া জেলা অটোটেম্পু ও সিএনজি মালিক সমিতির সচিব পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে রাম চন্দ্র ওই মালিক সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে বরখাস্তের কারন লিখিতভাবে দিতে বললে সেটি দিতে তারা নারাজ এবং উপর থেকে প্রচুর চাপ আছে বলে তাকে সরে থাকতে বলেন। ফলে নিরুপায় ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে কর্তস্থল ত্যাগ করেন তিনি। এমন ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দিয়েছে।

ভুক্তভোগী রাম চন্দ্র জানান, সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রামে পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি। জীবিকার তাগিদে সান্তাহার পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের বগুড়া জেলা অটোটেম্পু ও সিএনজি মালিক সমিতি কার্যালয়ে অফিস সহকারীর কাজ করতাম। এর উপর দিয়ে আমাদের পরিবার চলতো। এরপর ২০০০ সালে ওই মালিক সমিতির সচিব পদে আমাকে নিযুক্ত করা হয়। ওই সময়ের সান্তাহার পৌরসভার কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি আতাউর রহমান আত্তা এখানকার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। এভাবে ২৫ বছর ধরে সততা ও নিষ্ঠার সহিত কাজ করে আসছিলাম। কারও সাথে কোন বিষয়ে কোন রকম বিবাদ ছিলো না আমার। সম্প্রতি ২০২০ সালে আমি একই ইউপির বামনীগ্রাম এলাকার গোলাপি বানুকে ভালোবেসে দ্বিতীয় বিয়ে করি। ওই সালের ২ সেপ্টেম্বরে কোর্ট এফিডেফিট মাধ্যম শেষে সংসার জীবনে আবব্ধ হই। বিয়ের পর থেকে স্ত্রী গোলাপি বানু তার ইচ্ছেনুযায়ী চলাচল করতো। একারনে আমাদের মধ্যে হতো না বনিবনা। বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে আইনগত ভাবে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতিতে তালাক প্রদান করেছি। তালাক নোটিশ পাওয়ার পর থেকে গোলাপী বানু ক্ষিপ্ত হয়ে আমার সাথে হট্টগোল সৃষ্টি করে। এভাবে চলতে থাকে দীর্ঘদিন। চলতি বছরের ২৬মে হঠাৎ মুঠো ফোনের মাধ্যমে গোলাপী বানু অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ ও বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি দেন। এরপর ২৮ মে বিকেলে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ও পুলিশসহ গোলাপি বানুকে পুনরায় আমার বাড়িতে জোর পূর্বক প্রবেশ করানোর চেষ্টা করে। এসময় আমি বাধা দিলে মারধর ও বাড়ি ভাংচুর করে। এবং আমাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবেনা বলে হুমকি ধামকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন প্রভাবশালীরা। এরপর থেকে এই মালিক সমিতির কার্যালয়ে কিছুদিন ধরে বসবাস করছিলাম। চলতি মাসে গত মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ দরজা খুলতেই একটি ব্যাগ দেখতে পাই। ব্যাগের ভিতরে সাদা কাফনের কাপড়সহ একটি চিরকুট৷ চিরকুটে লেখা ছিলো “রাম শোন সত্য মিথ্যা বুঝিনা তুমি আগামী দুই দিনের মধ্যে বাবনী গ্রামের গোলাপী বানুর সাথে টাকার বিনিময়ে সব মিটমাট (মিমাংসা) করবে। নইলে সিএনজি অফিসের সচিব পদ আর গ্রাম পুলিশের চাকুরী হারাবে। তবুও যদি না মানো তাহলে তুমিসহ তোমার সহযোগী মৃত্যুর জন্য প্রস্তত থাকো। এই কাফনের কাপর তোমার সঠিক সিদ্ধান্তের উপহার”। এ ঘটনার ৩দিন পর গত শুক্রবার রাতে আমাকে মালিক সমিতি থেকে কোন নোটিশ বা লিখিত ছাড়াই বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে ওই কাফনের কাপড় ও হুমকির পর থেকে পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি আমরা। এ ব্যাপারে আদমদীঘি থানায় একটি জিডি করাও হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পরবর্তী কি হবে তা নিয়ে আমি ও আমার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছি। লোকমারফতে জানতে পারলাম আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালী বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাকে এখানে না রাখার জন্য মালিক সমিতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি শুনে হতবাক হলাম আমি কোনদিন কোন দলের কর্মীও ছিলাম না।

এ বিষয়ে সান্তাহার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আতাউর রহমান আত্তা জানান, আমি ২০০০ সালে ওই মালিক সমিতির সভাপতি ছিলাম। এবং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলাম। রাম ওখানে অফিস সহকারীর কাজ করতো৷ তার কাজের দক্ষতার কারনে মালিক সমিতির সচিব পদে নিযুক্ত করা হয়। দরিদ্র মানুষ কর্ম করে খেতো সে। তাকে কোন দল পার্টি করতে দেখা যায়নি। শুনলাম তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একজনের রিজিকে আঘাত বিষয়টি খুব দুঃখজনক।

বগুড়া বগুড়া জেলা অটোটেম্পু ও সিএনজি মালিক সমিতির আহবায়ক মিজানুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগের দোসর বা কোন অভিযোগের কারনে তাকে বাদ দেওয়া হয়নি। ঘটনাটি সম্পন্ন ভিত্তিহীন। মালিক সমিতি থেকে সে অনেক টাকা ঋণ করেছে। সমিতির সকলের সিদ্ধান্ত মতাবেক তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। লিখিতভাবে কোন কাগজপত্র তাকে দেওয়া হয়নি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print