দীর্ঘ ২১ বছর বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হয়েছে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা। গত ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে কারখানাটি। এখন এটি চলছে ‘সুপ্রিয় রেশম কারখানা’ নামে। কারখানিটি শুরুর এক মাসেই বাণিজ্যিকভাবে লাভের আশা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
নতুন করে কারখানাটি চালুর পর এরই মধ্যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে স্থানীয়দের। সেইসাথে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা তুঁত চাষিরা আগ্রহী হয়েছেন তুঁত চাষে। ঠাকুরগাঁওবাসীর দীর্ঘদিনের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে কারখানাটির চালুর মাধ্যমে।
২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় রেশম শিল্পের মূল উপাদান তুঁত চাষ।
২১ ব্ছর আগে জেলার ১০ হাজার তুঁত চাষি ছাড়াও ৭৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী কারখানাটিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
তারা প্রত্যেকে এই কারখানায় প্রায় ১৮-২০ বছর কাজ করেছেন। কারখানাটি বন্ধ হওয়ার পর জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বেছে নিয়েছিলেন অন্য পেশা।
নতুন উদ্যোমে পুনরায় কারখানাটি চালু হওয়ায় তারা বেশ খুশি। তাই ফিরে এসেছেন আগের পেশায়।
সংস্কারের অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিবছর লোকসানে পড়ছিল কারখানাটি। একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে গেলে ১৯৯৫ সালে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সালে সংস্কার ও আধুনিকীকরণের কাজ শেষ হওয়ার পর কারখানাটি পুনরায় চালু হলে সেটি ২ বছর চলে।
এরপর লোকসানের অজুহাতে আবার কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, আবারও তাঁতি ও তাঁতের শব্দে সরব হয়ে উঠেছে কারখানাটি। সেখানে কাজ করছিলেন খোতেজা, (৫০) জরিনা (৪০) হরে কৃষ্ণ (৬০) ও রাধাকান্ত (৫৯)।
শাড়ি, পাঞ্জাবি, পর্দাসহ পনেরো ধরনের কাপড় উৎপাদনে এরই মধ্যে বর্তমানে ৩০-৩৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজে যুক্ত রয়েছেম। উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে আরও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হবে। উৎপাদন হবে নতুন নতুন শাড়ি-কাপড়।
কারখানার ব্যবস্থাপক মো. বেলায়েত হোসেন প্রধান বলেন, কারখানার চালুর অল্প দিনেই আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমাদের কারখানাটি আগামী এক মাসের মধ্যেই পুরো চালু হয়ে যাবে। কারখানার উৎপাদিত বস্ত্র স্থানীয় বাজারসহ বাংলাদেশের সব জায়গায় বিক্রি হবে বলে আমরা আশাবাদী। কারখানাটিতে ইতোমধ্যেই অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়ে গেছে।
তিনি আরোও বলেন, কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে একশ’ লোকের কর্মসংস্থান হবে। রেশম চাষিরাও উৎসাহী হয়েছেন তুঁত চাষে। তারা আবারো রেশম চাষে ফিরবেন বলে আমার ধারণা।
এ বিষয়ে সুপ্রিয় গ্রুপের চেয়ারম্যান বাবলুর রহমান বলেন, ‘কারখানাটিতে ২০টি পাওয়ার লুম (তাঁত) ও ১৬টি হ্যান্ড লুম আছে। এতে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করে প্রতি ৮ ঘণ্টায় ১০০ মিটার সিল্ক কাপড় প্রস্তুত করা যায়। বর্তমানে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কারখানা চালুর পরিকল্পনা থাকলেও বাজারে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন কার্যক্রম বাড়ানো হবে। যেহেতু ঠাকুরগাঁও সিল্কের দেশে ও বিদেশে খ্যাতি আছে, তাই এই কারখানায় পণ্য উৎপাদন করে ভালো লাভ করা সম্ভব হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করারও ইচ্ছে আছে আমাদের।’
রেশম উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে শহরের গোবিন্দনগর এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন একর জমিতে নির্মাণ করা হয় কারখানাটি। জাতীয়করণ করা হয় ১৯৮১ সালে। পরে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর তৎকালীন সরকার লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দেয় কারখানাটি।
এনসিএন/এসকে