বগুড়া সারিয়াকান্দিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩ দিন ব্যাপী আমতলী সুখদহ মেলা। উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের সুখদহ নদীর উপর মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার হতে মেলাটি চলছে। শেষ হবে শনিবার রাতে।
মেলার প্রধান আকর্ষণ ঘোড়ার দৌড়। ঘোরার দৌড় দেখতে শুক্রবার বিকালে জমায়েত হয়েছিল লাখো মানুষ। সন্ধ্যার কিছু আগে শেষ হয় এই ঘড় দৌড় প্রতিযোগিতা। বগুড়া শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে জুম্মার নামাজের পর পরই মেলায় আগমন ঘটে আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে লাখো দর্শনার্থীর। বিকাল চারটা থেকে শুরু হয় ঘোরদৌড় প্রতিযোগিতা।
মেলায় ঘোরদৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে বগুড়া, নওগাঁ, খুলনা, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১০ টি ঘোড়ার এসেছিল। পাওয়ার হর্স, দূরন্ত, বিজলী, পারলে ঠেকাও, দুলকিসহ তাদের ঘোরার নামকরণ করা হয়েছে নানা ধরনের বাহারি নামে। মেলায় তাসলিমা আক্তারসহ দুই নারী ঘোর সওয়ারেরও আগমন ঘটেছে। প্রায় দুই যুগ ধরে উপজেলার সুখদহ নদীর নাম অনুসারে এই মেলার নামও রাখা হয় ঐতিহ্যবাহী আমতলী সুখদহ মেলা।
আরো পড়ুনঃ মেট্রোরেল স্টেশনে জন্ম নিল ফুটফুটে শিশু
ঘোড়ার দৌড় উপভোগ করতে এসেছেন বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। গ্রামীণ জনপদে এই ঘোড়ার দৌড়কে ঘীরেই সাধারণ মানুষ মেতে ওঠে অপার আনন্দে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা ঘোড়দৌড়। বিপুল সংখ্যক দর্শক ভিড় করে এই প্রতিযোগিতায়। তাই আয়োজকরাও দ্বিগুণ উৎসাহে প্রতিবছর ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকেন। বগুড়ায় গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্যবাহী খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে সব বয়সের লাখো মানুষ ছুটে আসেন। এ খেলাকে কেন্দ্র করে গোটা সারিয়াকান্দির এলাকা জুড়ে আনন্দ ও উৎসবে মেতে উঠে উৎসুক জনতা। প্রায় শতাধিক গ্রামে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা।
ঐ এলাকার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে মেয়ে জামাই ও অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় নানা রকমের পিঠা-পায়েশ ও যমুনা-বাঙালি নদীর দেশীয় মাছ দিয়ে। নানা সাঁজে সজ্জিত হয়ে টকবগিয়ে খুরের আওয়াজ তুলে ছুটে যায় রঙ -বেরঙ্গের ঘোড়া। উৎসবমুখর পরিবেশে ঘোড়ার দৌড় ও সাওয়ারীদের রণকৌশল উপভোগ করতে হাজির হয় লাখো মানুষ। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে ঘোড়া আর সেই ঘোড় দৌড় দেখে উৎসাহিত নানা বয়সের দর্শনার্থীরা। প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মেলায় বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ খেলনা এবং বাহারি খাবারের পসরা বসানো হয়। এছাড়াও নাগর দোলা, চরকি, নৌকা খেলা, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহি লাঠি খেলা। মেলায় বসেছে দেশীয় বিভিন্ন জাতের মাছ, কাঠের আসবাবপত্র, মাটির তৈজসপত্র ও গ্রামবাসীদের গৃহস্থলির কাজে ব্যবহৃত লোহার আসবাবপত্র। নারী ঘোরসওয়ার তাসলিমা আক্তার জানান, তিনি নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার চকসুবল গ্রাম থেকে এসেছেন। ৭ বছর বয়স থেকেই তিনি ঘোড়া চালনা করেন। খেলেছেন পুরো বাংলাদেশে। তাসলিমার ঘরে রয়েছে হাজার রকমের প্রথম পুরস্কার। ঘোড়া চালানোর পাশাপাশি তিনি লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছেন। তাসলিমা এ বছর এসএসসি পাশ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য কলেজ চয়েজ দিয়েছেন। একজন নারী ঘোরসওয়ার হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে দেশজুড়ে। ঘোড়া চালিয়ে বা ঘোড়ার খেলা দেখিয়ে তিনি তার সংসারের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। পঞ্চগড় থেকে আসা পাওয়ার হর্স নামক ঘোড়ার মালিক রেজাউল করিম রেজা জানান গত কয়েকবছর আগে আমি এক তেজস্বী ঘোড়া সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। একজন ঘোরসওয়ার ভাড়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আসছি বিগত একযুগ ধরে। এ পর্যন্ত তিনি অনেক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা আমতলী গ্রামবাসীর আয়োজনে ৩ দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত মেলায় উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ী গমির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও সুখদহ মেলা কমিটির সভাপতি মোঃ মোখছেদুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, রাজশাহী সারদার অতিরিক্ত ডিআইজি হামিদুল আলম মিলন। মেলার উদ্বোধন করেন হাটফুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুত তারিক মোহাম্মদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের উপসচিব মোখতার আমম্মদ, সারিয়াকান্দি পৌর মেয়র মতিউর রহমান মতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক দুলু, জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুর রশিদ ফারাজিসহ প্রমুখ।